গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনে নৌকার প্রার্থী ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আফরোজা বারী। আওয়ামী লীগ আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছাড় দেয়। তখন আফরোজা বারীর বড় মেয়ে আবদুল্লাহ নাহিদ নিগার স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হন। ছাড় পেয়েও হেরে যাওয়া জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও একাদশ জাতীয় সংসদের সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারীর সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো।
এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেমন হয়েছে বলে মনে করেন? কোনো কারচুপি হয়েছে?
শামীম পাটোয়ারী: ভোট কারচুপি হয়েছে। আমার বাড়ির কেন্দ্র ও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর বাড়ির কেন্দ্র বাদ দিলে শতকরা ৯০ ভাগ কেন্দ্রে আমি দুই-তিনজনের বেশি ভোটার দেখিনি। আমাদের সমর্থক ভোটাররা প্রথমে সকাল ১০টার মধ্যে ভোট দিয়ে দিয়েছেন। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত নগণ্য ভোটার উপস্থিতি ছিল। কিন্তু দিন শেষে কাস্টিং যা দেখলাম, আমার মনে হয়েছে, এখানে ভোট কারচুপি হয়েছে। ভোট শেষ হওয়ার আধা ঘণ্টা আগে তিনটার দিকে বামনডাঙ্গা ইউনিয়ন জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদককে তুচ্ছ কারণে দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আমি যদি তদন্ত করে দেখি, তাঁকে শাস্তি দেওয়ার মতো কোনো অভিযোগই ছিল না। সম্পূর্ণ প্রভাবিত হয়ে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার জন্য তাঁকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এটি নির্বাচনকে সরাসরি প্রভাবিত করেছে। এভাবে প্রশাসনের মাধ্যমে আমাদের হারিয়ে দেওয়া হয়েছে।
একসময় আসনটি জাতীয় পার্টির দখলে ছিল। আপনি দীর্ঘ সময় সংসদ সদস্য ছিলেন। তারপরও পরাজয়ের কারণ কী?
শামীম পাটোয়ারী: আমাদের কৌশলগত কোনো ভুল ছিল না। আমরা ভোট করেছি, ভোট চেয়েছি। আমরা কাঙ্ক্ষিত ভোট পাইনি। তবে পরাজয়ের কারণ হচ্ছে, সরকার আমাদের পরাজিত করতে চেয়েছিল। সরকারি দলের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছি। প্রশাসন ও সরকার আমাদের পরিকল্পিতভাবে হারিয়ে দিয়েছে।
শোনা যায়, জাতীয় পার্টির অনেক নেতা-কর্মী স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন। আপনি কী মনে করেন?
শামীম পাটোয়ারী: স্বতন্ত্রের পক্ষে কাজ করেছেন কি না, জানি না। দলের নেতা-কর্মীরা আমার পক্ষে কাজ করেছেন। কিন্তু ভোটার উপস্থিতি খুব কম হয়েছে। এ জন্য ভোটার কাস্টিং বাড়ানো হয়েছে। এই বাড়ানো ভোটটা আমার প্রতিপক্ষের বাক্সে দেওয়া হয়েছে। এ কারণেই প্রতিপক্ষ জয়লাভ করেছেন।
আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছাড় দেয় আওয়ামী লীগ। সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী আপনাকে সহায়তা বা লাঙ্গলের পক্ষে কাজ করেছেন কি না?
শামীম পাটোয়ারী: আওয়ামী লীগের কোনো নেতা-কর্মী আমাকে সহায়তা করেননি। ভোটের আগে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা কিছুটা সহায়তা করলেও ভোটের দিন আর করেননি। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগও সহায়তা করেনি। শেষ মুহূর্তে আমরা কারও সহযোগিতা পাইনি। একাই ভোট করতে হয়েছে। আমরা জোটের কোনো সুবিধা পাইনি। এমনকি জোটের কারণে আমরা জোটবিরোধী ভোটের আশাও করতে পারিনি।
অভিযোগ আছে, আপনি বেশির ভাগ সময় ঢাকায় থাকেন। এ কারণে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আপনার দূরত্ব তৈরি হয়েছে। তাঁরাই আপনার বিপক্ষে কাজ করেছেন। আপনি কী বলেন?
শামীম পাটোয়ারী: অভিযোগটি ঠিক নয়। প্রতি মাসে অন্তত দুবার এলাকায় এসেছি। তিন থেকে চার দিন থাকতাম। সবার সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ করেছি। আমি তো মনে করি, অন্যান্য এমপির (সংসদ সদস্য) চেয়ে এলাকায় বেশি থাকতাম।
জাতীয় সংসদ অধিবেশনে ও বিভিন্ন টক শোতে আপনি ভালো ভালো কথা বলেন। কিন্তু আপনার দায়িত্ব পালনকালে এলাকার দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন হয়নি বলে স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ...
শামীম পাটোয়ারী: কোনো দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়নি, কথাটি সঠিক নয়। কারণ, গত পাঁচ বছরে দুই হাজার কোটি টাকার বড় বড় প্রজেক্ট করেছিলাম। ৩০০ কোটি টাকার রাস্তার কাজ হয়েছে। প্রায় ৪০০টি মসজিদ ও ১০০টি মন্দিরে বরাদ্দ দিয়েছি। ১০০টির বেশি রাস্তা সিসি ঢালাইয়ের কাজ করেছি টিআর ও কাবিখা প্রকল্পের আওতায়। পাঠাগার, স্টেশন করেছি। যতটুকু পেরেছি, করেছি।
এবারের নির্বাচনে সারা দেশে জাতীয় পার্টির ফলাফল নিয়ে আপনার মূল্যায়ন?
শামীম পাটোয়ারী: রেজাল্ট খুব খারাপ। তবে আমার মনে হচ্ছে, এখন বিএনপিকে পঞ্চভূত করতে চাচ্ছে সরকার। জাতীয় পার্টিকেও নিঃশেষ করে ফেলল। আমি মনে করি, এটা দেশের জন্য অশনিসংকেত। জাতীয় পার্টির মতো উদারপন্থী মধ্যম পন্থার দল, কারও সঙ্গে খারাপ আচরণ করে না, কাউকে খারাপ কথা বলে না, সাদাসিধে ভোট করে; তাদের নির্বাচনে এনে এভাবে পর্যুদস্ত করা খারাপ লক্ষণ।
জাতীয় পার্টি-অধ্যুষিত রংপুর, গাইবান্ধা ও নীলফামারী মিলে লাঙ্গল একটি আসন পেয়েছে...
শামীম পাটোয়ারী: জাতীয় পার্টির ঘাঁটিগুলোতেই জাতীয় পার্টিকে ধ্বংস করা হচ্ছে। তবে জাতীয় পার্টি সহজে ধ্বংস হবে না।