জাতীয় সংসদ ও দল থেকে পদত্যাগের পর ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উপনির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য মনোনয়নপত্র কেনায় বিএনপির চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়াকে সরাইলে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। আজ সোমবার বেলা তিনটায় সরাইল প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘোষণা দেন তাঁরা।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সরাইল উপজেলা বিএনপির সভাপতি আনিছুল ইসলাম ঠাকুর, সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান লস্কর, সাংগঠনিক সম্পাদক দুলাল মাহমুদ আলী, উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান সিদ্দিকী, সদস্যসচিব নূর আলম, উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জামাল হোসেন লস্কর, সদস্যসচিব মীর ওয়ালিদ, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান, যুগ্ম আহ্বায়ক রবিউল হোসেন, উপজেলা কৃষক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক সাইমন ইসলাম প্রমুখ।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির দলীয় প্রার্থী আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। দলীয় সিদ্ধান্তে তিনি গত ১১ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি এ শূন্য আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
দলীয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার রাতে দলীয় চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে লিখিত এক চিঠির মাধ্যমে উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া দলীয় চেয়ারপারসনের উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করেন। গতকাল রোববার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনে উপনির্বাচন করার জন্য মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। তাঁর ছেলে মাঈনুল হাসান ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে উপনির্বাচনে অংশ নেবেন বলে এলাকায় গুঞ্জন চলছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল রাতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য এবং শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকার অভিযোগে আবদুস সাত্তার ভূঁইয়াকে বিএনপির প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে বহিষ্কার করা হয়।
আজ বিকেলে সরাইল প্রেসক্লাবে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান লস্কর। এ সময় প্রেসক্লাবের বাইরে উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের শতাধিক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে নুরুজ্জামান লস্কর বলেন, ‘উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় তাঁকে দলের সব পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি এখন নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য শেষ বয়সে স্বেচ্ছাচারিতা ও অনৈতিক সুযোগ-সুবিধা লাভের আশায় দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়েছেন। এ জন্য আমরা উপজেলা বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা তাঁকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করলাম। পাশাপাশি তাঁকে সরাইলে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করছি।’
উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান লস্কর আরও বলেন, ‘নির্বাচন করতে এলে স্বার্থপর, লোভী, নির্লজ্জ আত্মকেন্দ্রিক আবদুস সাত্তারকে প্রতিহত করা হবে। তিনি তাঁর ছেলের দ্বারা ভুল পথে পরিচালিত হয়ে দল থেকে পদত্যাগ করে উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি ১৯৭৯ সালে দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে হিরো হয়েছিলেন, এখন স্বতন্ত্র নির্বাচন করে জিরো হবেন।’
উপজেলা বিএনপির সভাপতি আনিছুল ইসলাম ঠাকুর বলেন, ‘আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া অসুস্থ হয়েও তাঁর পরিবার ও সন্তান দ্বারা লোভের বশবর্তী হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করতে চাচ্ছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনটি বিএনপির ঘাঁটি। এটি তাঁর ব্যক্তিগত ঘাঁটি নয়। আমরা তাঁকে প্রতিহত করব। যদি দলীয় কোনো নেতা-কর্মী তাঁকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সহায়তা করেন, তবে তাঁদের বিরুদ্ধেও সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’