কুমিল্লায় হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কর্মসূচিতে হামলার ঘটনায় বিএনপির তদন্ত কমিটি

হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের মিছিলে যুবলীগ-ছাত্রলীগের ধাওয়া। গত শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কুমিল্লা নগরের নজরুল অ্যাভিনিউ এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

কুমিল্লায় হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের বিক্ষোভ মিছিলে ধাওয়া ও মারধরের ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিএনপি। কাল শনিবার সকাল ১০টায় বিএনপির তদন্ত দল কুমিল্লায় যাবে। তাঁরা সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করবে এবং সাধারণ নাগরিক ও হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতাদের সঙ্গে কথা বলবে। বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা ওরফে বুলুকে প্রধান করে করা কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য বিজন কান্তি সরকার, বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৬ অক্টোবর রাত সাড়ে আটটায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির একটি ভার্চ্যুয়াল সভা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সভায় স্থায়ী কমিটির ১১ সদস্য উপস্থিত ছিলেন। এতে তিনটি বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয়। এর মধ্যে একটি হলো কুমিল্লায় হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের বিক্ষোভে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের হামলা। সভায় সম্প্রতি হিন্দু সম্প্রদায়ের দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে কুমিল্লায় হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের মিছিলে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। সভার নেতারা মনে করেন, সরকার হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থের জন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন করে তা বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর ওপর চাপিয়ে দিতে এ হামলা চালাচ্ছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানানো হয়। বিষয়টি তদন্ত করে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, তদন্ত দলের সদস্যরা কাল ১০টার মধ্যে কুমিল্লায় উপস্থিত থাকবেন। এরপর তাঁরা হামলার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করবেন এবং হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতাদের বক্তব্য শুনবেন।

৪ অক্টোবর শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে এক সভা হয়। ওই সভায় কুমিল্লা-৬ আসনের সংসদ সদস্য ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম বাহাউদ্দিন মদমুক্ত পূজা করার আহ্বান জানান। কোনো পূজামণ্ডপে মদ খাওয়া চলবে না বলে বক্তব্য দেন। পরে এ নিয়ে ৮ অক্টোবর বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ এক বিবৃতি দেয়। এতে আ ক ম বাহাউদ্দিনকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন দিলে খেসারত দিতে হবে উল্লেখ করা হয়। সেই সঙ্গে সংগঠনটি ১৩ অক্টোবর কর্মসূচি ঘোষণা করা হয় সারা দেশে।

ওই ঘোষণার পর সংসদ সদস্য বাহাউদ্দিন তাঁর অনুসারী হিন্দু নেতাদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করেন। একই সঙ্গে কান্দিরপাড়ে অবস্থান নেওয়ার জন্য যুবলীগ ও ছাত্রলীগকে দায়িত্ব দেন। ১৩ অক্টোবর বেলা সাড়ে ১১টায় নগরের নজরুল অ্যাভিনিউয়ের কর ভবন এলাকায় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা পরিষদের বিক্ষোভ মিছিলে প্রথমে ধাওয়া ও পরে হামলা করেন বলে অভিযোগ ওঠে। এতে চারজন হিন্দু নেতা আহত হন। এ ঘটনায় হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের অজ্ঞাতনামা ৫০০ জনের নামে মামলা করা হয়। পুলিশ ভিডিও ফুটেজ দেখে দুই যুবলীগ কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে।