সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের নতুন কমিটির প্রথম সভা, এনামুল ও তাঁর অনুসারীরা অনুপস্থিত

সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের নতুন কমিটির প্রথম সভায় বক্তব্য দেন সভাপতি নূরুল হুদা। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শহরের শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে
ছবি: প্রথম আলো

সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের নতুন কমিটির প্রথম সভা গতকাল বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। শহরের শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাবলিক লাইব্রেরিতে বিকেলে শুরু হয়ে সভা চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। সভায় কমিটির ৭৫ জন সদস্যের মধ্যে ৫৯ জন উপস্থিত ছিলেন। তবে জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও সংসদ সদস্য মহিবুর রহমান (মানিক), জেলা আওয়ামী লীগের গত কমিটির সাধারণ সম্পাদক বর্তমান কমিটির সহসভাপতি এনামুল কবির (ইমন) ও তাঁর ধারার কেউ সভায় উপস্থিত ছিলেন না।

সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সবশেষ সম্মেলন হয় গত ১১ ফেব্রুয়ারি। এদিন শুধু সভাপতি হিসেবে সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নূরুল হুদা (মুকুট) ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নোমান বখতের (পলিন) নাম ঘোষণা করা হয়। এরপর ৯ সেপ্টেম্বর ৭৫ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। এই কমিটি গতকাল প্রথম সভা করে।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নোমান বখতের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতি নূরুল হুদা দলের গত জেলা কমিটির নেতৃত্বকে ব্যর্থ উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন জগন্নাথপুরে গত কমিটি মিটিং করেছে, সম্মেলন করেছে। তার মধ্যে অনেক কিছু ঘটে গেছে। সেক্রেটারি (সাবেক সাধারণ সম্পাদক) সাহেব দু–একজনের নাম দিয়ে একক দস্তখত দিয়েছেন। পরে যখন বিতর্ক শুরু হয়, তখন প্রেসিডেন্ট (সভাপতি) সাহেবের দস্তখতও নেওয়া হয়। এ ধরনের কোনো কাজ এ কমিটি করবে না। এই কমিটি পয়সা দিয়ে বিক্রি হবে না। যারা যোগ্য, তাদের মূল্যায়ন করা হবে। এই কমিটি অনেক শক্তিশালী।’

সভায় অনুপস্থিত থাকা নেতাদের, বিশেষ করে এনামুল কবিরকে ইঙ্গিত করে নূরুল হুদা বলেছেন, আগামী নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনকে ছোট করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। নির্বাচনে প্রার্থী হতে চাইবেন, দলের মিটিংয়ে উপস্থিত থাকবেন না, এটা কীভাবে হয়। তিনি বলেন, প্রার্থী হতে চাইলে মিটিংয়ে উপস্থিত থেকে সবার সহযোগিতা চাওয়া উচিত ছিল।

নূরুল হুদা আরও বলেন, ‘জেলা কমিটিকে বাইপাস করে নৌকা নিয়ে আসবেন, সেটা কোনো অবস্থাতেই সম্ভব নয়। জেলা কমিটির সাহায্য ছাড়া, জেলা কমিটির প্রস্তাব ছাড়া কেউ দলীয় মনোনয়ন পাবেন না। জেলা কমিটিকে বাইপাস করে চললে, নিজের পায়েই কুড়াল মারবেন এবং আগামীতে রাজপথে দাঁড়াতে পারবেন না।’ তিনি মিলেমিশে সুন্দর একটা পরিবেশে সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী সংগঠনে পরিণত করার আহ্বান জানান।

সভায় উপস্থিত না থাকা প্রসঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের এনামুল কবির বলেন, ‘দলের দুঃসময়ে যাঁরা নির্যাতিত হয়েছেন, কারাবরণ করেছেন, তাঁরা এতে স্থান পাননি। তাঁদের এভাবে রেখে সভায় যেতে পারি না। দলীয় সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরলে আমরা তাঁর সঙ্গে দেখা করব, তিনি যে নির্দেশনা দেবেন, সেটি মেনেই এগুবো।’ তিনি বলেন, ‘আমরা বংশপরস্পরায় আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত। কোনোদিন পরিবারের কেউ দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করিনি। সুনামগঞ্জ সদর আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েও সভানেত্রীর নির্দেশে আবার প্রত্যাহার করেছি।’

সভায় সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের নতুন কমিটির সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন (রতন), কমিটির সহসভাপতি ও সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখত, কমিটির সদস্য সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খায়রুল হুদা, সহসভাপতি মতিউর রহমান পীর ও রেজাউল করিম, সহসভাপতি তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী, সহসভাপতি ছাতক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম চৌধুরী, সহসভাপতি দিলীপ কুমার দাস, আজহারুল ইসলাম ও চাঁন মিয়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ চৌধুরী ও মো. নজরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক শংকর চন্দ্র দাস, জিতেন্দ্র তালুকদার ও আসাদুজ্জামান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।