আর্জেন্টিনার ৩৬ বছরের অপেক্ষার অবসান, নাকি ফ্রান্সের টানা দ্বিতীয় শিরোপা অর্জন? মাত্র এক দিন পরই এ প্রশ্নের উত্তর মিলবে। কাল রোববার রাত নয়টায় কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছে আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্স। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিশ্বকাপের উন্মাদনা ছড়িয়েছে। বিশ্বকাপের ফাইনাল ঘিরে রাজশাহীতেও নানা প্রস্তুতি হাতে নিয়েছেন সমর্থকেরা। এ উপলক্ষে সমর্থকেরা রান্নাবান্নারও আয়োজন করবেন বলে জানিয়েছেন।
বিশ্বকাপ উপলক্ষে ২০ নভেম্বর থেকেই মোড়ে মোড়ে বড় পর্দায় খেলা দেখানো শুরু হয়। ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, জার্মানি, ফ্রান্সের খেলায় দর্শক উপস্থিতি ছিল বেশি। খেলায় রাতভর বেজেছে ভুভুজেলা বাঁশি। একজন আরেকজনকে নানা কথায় ঘায়েল করার চেষ্টা করেছেন। কালকের ম্যাচ নিয়ে এখন চলছে চূড়ান্ত আলোচনা।
আজ শনিবার বিকেলে রাজশাহী নগরের বুধপাড়া এলাকায় বেশ কয়েকজন তরুণ মাঠে খেলা করছিলেন। আর্জেন্টিনা-ফ্রান্সের খেলাকে সামনে রেখে ফুটবল খেলছিলেন তাঁরা। রায়হান আলী নামের আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের এক সমর্থক বলেন, তাঁরা শীতকালে কোনো দিন ফুটবল খেলেন না। আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছে, তাই তাঁরা খেলতে নেমেছেন। আগামীকাল সন্ধ্যা থেকে খেলা দেখার আগে তাঁরা রান্নার আয়োজন করবেন। এতে ব্রাজিলের সমর্থকদেরও দাওয়াত দিয়েছেন তাঁরা।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ বিকেল পাঁচটায় ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা ফ্যান ক্লাবের মধ্যে প্রীতি ফুটবল ম্যাচের আয়োজন করা হয়। বিকেলে শহীদ হবিবুর রহমান মাঠে জড়ো হন ছাত্রলীগসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। টান টান উত্তেজনার ম্যাচটি নির্ধারিত সময়ে ড্র হলে অতিরিক্ত সময়ে। এতেও গোলশূন্য ড্র হলে টাইব্রেকারে ৪-২ গোলে ব্রাজিলকে হারায় আর্জেন্টিনা। খেলা শেষে বিজয়ী দলকে ট্রফি তুলে দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য মো. সুলতান-উল-ইসলাম ও অধ্যাপক হুমায়ুন কবীর।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্বকাপের প্রায় সব খেলাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাডেমিক ভবনের পাশে বড় পর্দায় দেখানো হতো। তবে ফাইনাল খেলায় দর্শকসমাগম বেশি হওয়ার সম্ভাবনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ কামাল স্টেডিয়ামে বড় পর্দায় খেলা দেখার আয়োজন করা হয়েছে।
ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ বলেন, তিনি নিজে আর্জেন্টিনার সমর্থক। তিনি চান মেসির হাতে কাপ যাক। এ খেলায় দর্শকসমাগম হবে বিপুল। এ জন্য স্টেডিয়ামে খেলা দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
নগরের তালাইমারী এলাকায় তিন বন্ধু মিলে মাসব্যাপী খেলা দেখিয়ে আসছেন। তাঁদের একজন অনিক হাসান। আগামীকালের ফাইনাল খেলা উপলক্ষে সব প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছেন তাঁরা। অনিক হাসান বলেন, তালাইমারী এলাকায় কাল আর্জেন্টিনার সব দর্শক থাকবেন। সন্ধ্যা থেকেই এলাকায় লাইটিং করা হবে। বড় পর্দায় বিশ্বকাপের নানা রকম গান তাঁরা বাজাবেন। রাতে তাঁরা বিরিয়ানির আয়োজন করবেন। তিনি আরও বলেন, তিনি আর্জেন্টিনার বড় ভক্ত। তাঁর অন্য দুই বন্ধু ব্রাজিলের সমর্থক। তাঁদের বিশেষভাবে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। আশ্বস্ত করা হয়েছে, শুধু আনন্দ হবে। তাঁরা নাচবেন, গাইবেন, হইহুল্লোড় করবেন।
নগরের সাধুর মোড়ে গরম কাপড় কিনছিলেন পিয়ারুল ইসলাম (৫০)। তিনি বলেন, ‘সেই ম্যারাডোনার কাল থেকে খেলা দেখি। আমি চাই, মেসির হাতে কাপ উঠুক।’ এই মোড়ে বড় পর্দায় খেলা দেখান মো. সুমনসহ আরও অনেকে। সুমন বলেন, কাল তো এখানে মানুষ ধরবে না। তাঁরা প্রায় প্রতিদিনই রান্নাবান্নার আয়োজন করেন। আর্জেন্টিনার খেলা উপলক্ষে কাল বিরিয়ানি রান্না করা হবে। এবার আর্জেন্টিনায় কাপ যাবে।
টিকাপাড়া এলাকায় বড় পর্দায় খেলা দেখানো হলেও কাল খেলার আগে এলইডি লাগানো হবে বলে জানালেন ওই এলাকার তরুণ সংঘ ক্লাবের প্রচার সম্পাদক মো. নাইম।
নগরের সাগরপাড়া মোড়ে চায়ের স্টলে খেলা নিয়ে কথা বলছিলেন দুই রিকশাচালক কামাল হোসেন ও সাব্বির। ব্রাজিল সমর্থক সাব্বিরের উদ্দেশে কামাল বলছিলেন, ‘নেইমার না লিতে পারুক, কালকে এমবাপে কাপ লিবে।’ আর্জেন্টিনার কড়া সমর্থক কামাল জবাবে বললেন, ‘এইবার আর কাজ হবে না। কাপ লিবে মেসিই। মেসি না নিলে পরদিন তুই যা খেতে চাস, খাওয়াবোনি।’