পুলিশ কনস্টেবল মোহাম্মদ হোসাইনের (৩৫) সীতাকুণ্ড থানায় শেষ কর্মদিবস ছিল গতকাল রোববার। ১ সেপ্টেম্বর আনোয়ারা থানায় তাঁর যোগ দেওয়ার কথা ছিল। মাঝের কয়েকটা দিনের ছুটিতে তিনি গ্রামে যেতে চেয়েছিলেন। সেখানে তাঁর বিয়ের জন্য পাত্রী দেখার কাজ চলছিল। তবে সব আয়োজন থেমে গেল নিমেষেই। গতকাল রোববার দুপুরে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলায় রেললাইনের ওপর আটকে যাওয়া পুলিশের গাড়িতে ট্রেনের ধাক্কায় যে তিন পুলিশ সদস্যের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের একজন মোহাম্মদ হোসাইন।
মোহাম্মদ হোসাইনের বাড়ি কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের মৌলভীবাজার গ্রামে। মোহাম্মদ ফরিদ আহমদ ও রাজিয়া বেগমের ছেলে হোসাইন ছয় ভাইবোনের মধ্যে তৃতীয়। ২০১২ সালে তিনি পুলিশে কনস্টেবলের চাকরি পান।
গতকাল দুপুর সোয়া ১২টার দিকে সীতাকুণ্ড থানার পুলিশের একটি টহল দল স্থানীয় এক ইউপি সদস্যসহ আসামি ধরতে যাচ্ছিল। তাঁদের গাড়িটি রেললাইনের পশ্চিম থেকে পূর্ব পাশে পার হওয়ার সময় আটকে যায়। এ সময় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেন পুলিশের গাড়িকে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই এক কনস্টেবল নিহত হন। আর হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান মোহাম্মদ হোসাইন এবং আরেক পুলিশ সদস্য।
আজ সোমবার সকালে টেকনাফের মৌলভীবাজার গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, হোসাইনের লাশ দেখতে এসেছেন তাঁর আত্মীয়স্বজনসহ গ্রামের মানুষেরা। হোসাইনের এমন মৃত্যুতে গ্রামের পরিবেশ শোকাবহ। স্বজনেরা জানান, হোসাইনের বাবা মো. ফরিদ আহমদ ২২ বছর সৌদি আরবে চাকরি করেছেন। হোসাইন পুলিশের চাকরি পাওয়ার পর বাবাকে আর বিদেশে যেতে দেননি। নিজেই সংসারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন। সপ্তাহ দুয়েক আগে চাচার মৃত্যুসংবাদ পেয়ে তিনি বাড়ি এসেছিলেন। তখন নিজের বিয়ের জন্য পাত্রী দেখতে বলেন পরিবারকে।
আজ সকাল ১০টার দিকে হ্নীলার মৌলভীবাজার জামিরিয়া মাদ্রাসার মাঠে মোহাম্মদ হোসাইনের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় পুলিশ বাহিনীর পক্ষ থেকে মরদেহের প্রতি সম্মান জানানো হয়। জানাজা শেষে তাঁকে মৌলভীবাজারের নাইক্ষ্যংখালী কবরস্থানে দাফন করা হয়।
দাফন শেষে হোসাইনের বাবা ফরিদ আহমদ কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘ছেলেকে কবরে দিয়ে এলাম। এখন আমি কার মুখের দিকে তাকিয়ে বেঁচে থাকব?’