নিজ বাড়িতে দেলোয়ারা বেগমের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার নরসিংদীর পলাশ উপজেলার চরনগরদী গ্রামে
নিজ বাড়িতে দেলোয়ারা বেগমের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার নরসিংদীর পলাশ উপজেলার চরনগরদী গ্রামে

জমি নিয়ে দ্বন্দ্বে গলা কেটে হত্যা করা হয় দেলোয়ারা বেগমকে, অভিযোগ সন্তানদের

নরসিংদীর পলাশ উপজেলায় চরনগরদীতে ঘরে ঢুকে দেলোয়ারা বেগম (৬০) নামের এক নারীকে গলা কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। নিহত নারীর সন্তানদের অভিযোগ, চাচার সঙ্গে তাঁদের জমির ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে। এর জেরেই মাকে হত্যা করা হয়েছে।

ওই হত্যাকাণ্ডের পর তাঁদের চাচা আবদুল সাত্তার ও তাঁর পরিবারের পরিবারের সদস্যরা বাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন। ওই ঘটনায় নিহত নারীর পরিবারের পক্ষ থেকে আজ বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত মামলা বা থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়নি। জমিজমাসংক্রান্ত বিরোধ, পারিবারিক সমস্যা ও চুরি-ডাকাতির মতো বিষয়গুলো সামনে রেখে তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

নিহত দেলোয়ারা বেগম উপজেলার জিনারদী ইউনিয়নের চরনগরদী গ্রামের মৃত মালেক দেওয়ানের স্ত্রী। গত মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে দেলোয়ারা বেগমকে (৬০) গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ঘটনাটি জানাজানি হয়। রাত সাড়ে ৯টায় ওই বাড়িতে গিয়ে তাঁর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

নিহত দেলোয়ারা বেগমের চার সন্তান। বড় ছেলে হিরণ মিয়া ২০ বছর ধরে ইতালি ও মেজ ছেলে কিরণ মিয়া ১৮ বছর ধরে দুবাইয়ে আছেন। মেয়ে নার্গিস আক্তারের বিয়ে হয়েছে। ছোট ছেলে নাদিম মিয়া স্ত্রীর করা নারী নির্যাতনের মামলায় সম্প্রতি কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান। গত এক সপ্তাহ তিনি বোনের বাড়িতে থাকছিলেন।
আজ বৃহস্পতিবার চরনগরদী গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, দেলোয়ারা বেগমের চার কক্ষের একতলা বাড়ি। একটি কক্ষে থাকতেন দেলোয়ারা বেগম। বাড়িটিতে প্রবেশের তিনটি পথ। দুটি ইট বিছানো কাঁচা সড়ক ও অন্যটি এক প্রতিবেশীর বাড়ির আঙিনার ভেতর দিয়ে।

প্রতিবেশীরা বলছেন, ঘটনার দিন (মঙ্গলবার) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বারান্দায় বসে তরকারি কাটতে দেখা গিয়েছিল দেলোয়ারা বেগমকে। ওই দিন বাড়িটিতে আর কেউ ছিলেন না। দুপুরের দিকে কে বা কারা তাঁর কাছে যান। তাঁকে হত্যা করার পর পালিয়ে যাওয়ার আগে দুর্বৃত্তরা কলাপসিবল গেটে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছিল। দুপুর থেকে তাঁর মুঠোফোন বন্ধ ছিল। তাঁর ছেলেরা মুঠোফোনে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না।

প্রতিবেশী আশিক মিয়া বলেন, ‘সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে দুবাই থেকে কিরণ মিয়া আমাকে ভিডিও কল দিয়ে চাচির (দেলোয়ারা বেগম) খবর জানতে চান। ভিডিও কলে থেকেই আমি ওই বাড়িতে যাই। দেখি সামনের কলাপসিবল গেটে ভেতর থেকে খোলা তালা ঝুলছে। কিছুক্ষণ ডাকাডাকি করি, কিন্তু তাঁর কোনো সাড়াশব্দ পাইনি। এ সময় কয়েকজন প্রতিবেশীও এগিয়ে আসেন। ভেতরে গিয়ে দেখি, ঘরের খাটে পড়ে আছে চাচির গলাকাটা লাশ। খাট ও মেঝে রক্তে ভেসে আছে।’

নিহতের দুই সন্তান কিরণ মিয়া ও নার্গিস আক্তার জানান, ওয়ারিশ হিসেবে পাওনা প্রায় ১৬ শতাংশ জমির ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে বাবা-চাচা তিন ভাইয়ের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে দ্বন্দ্ব অন্তত ১০ বছরের। মামলা হওয়ার পর আদালতের রায়ে সব পক্ষকে সমানভাবে ভাগ করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে চাচা আবদুল সাত্তার তা মেনে নিতে পারেননি। বাবার মৃত্যুর পর গত পাঁচ মাস সাত্তার চাচা ওই জমির পুরোটা দাবি করেছেন। চাচা ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা বাড়িতে এসে হুমকি ও ভয় দেখিয়েছেন। বেশ কয়েক দিন মধ্যরাতেও বাড়িতে এসে হামলা চালিয়েছেন তাঁরা।

তাঁরা আরও জানান বিষয়টিি সমাধানের জন্য মা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দ্বারে দ্বারে ধরনা দিয়েছেন। সর্বশেষ পলাশ থানার ওসির কাছে গেলে তিনি সব পক্ষকে নিয়ে বসে বিষয়টির সমাধানের জন্য পরিদর্শক পদের একজন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেন। তিনি সব পক্ষকে নিয়ে কাগজপত্রসহ কয়েক দফা বসেছেন। আমিন পাঠিয়ে জমি মাপজোখ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেওয়ার কথা ছিল। জমি হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাতেই তাঁদের মাকে হত্যা করা হয়েছে।

পারিবারিক সমস্যা ও চুরি-ডাকাতির মতো বিষয়গুলো সামনে রেখে পুলিশের তদন্ত চলছে। তবে ঘরের কোনো কিছুই অগোছালো ছিল না, খোয়াও যায়নি কোন কিছু।
ইকতিয়ার উদ্দিন, ওসি, পলাশ থানা

ওই বাড়ির ৫০ গজ দূরত্বে অভিযুক্ত আবদুল সাত্তারের দেয়ালঘেরা টিনশেড বাড়ি। আজ সকালে বাড়িটিতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। ঘরের কলাপসিবল গেট ভেতর থেকে তালাবদ্ধ। প্রায় পাঁচ মিনিট ডাকাডাকি করলেও কেউ ঘর থেকে বেরিয়ে আসেননি। আবদুল সাত্তারের মুঠোফোন নম্বর সংগ্রহ করে কল দেওয়া হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। অন্তত পাঁচজন প্রতিবেশী জানান, মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে পরিবারটির কাউকে দেখা যাচ্ছে না।

পলাশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ইকতিয়ার উদ্দিন জানান, এ ঘটনায় জমিজমাসংক্রান্ত বিরোধ, পারিবারিক সমস্যা ও চুরি-ডাকাতির মতো বিষয়গুলো সামনে রেখে পুলিশের তদন্ত চলছে। তবে ঘরের কোনো কিছুই অগোছালো ছিল না, খোয়াও যায়নি কোন কিছু। বাইরে থেকে কোনো ধারালো অস্ত্রও আনা হয়নি, তরকারি কাটার বঁটি দিয়েই তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। দ্রুতই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন হবে বলে জানান তিনি।