দীর্ঘ ২৭ বছর পর কিশোরগঞ্জ সদর বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই সম্মেলনে নতুন কমিটি ঘোষণা করতে লেগেছে মাত্র ৫ মিনিটি। কমিটির দুজনই পুরোনো মুখ। এতে খালেদ সাইফুল্লাহকে সভাপতি ও হাজী ইসরাইল মিঞাকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়।
কাউন্সিলরদের ভোট ছাড়াই শুধু একজন ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতির সমর্থনে ও দুজন ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতির প্রস্তাবে সম্মেলন মঞ্চ থেকে তাৎক্ষণিক ঘোষণা করা হয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম। যদিও গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে কমিটি ঘোষণার পাশাপাশি নতুন নেতৃত্ব দিয়ে কমিটি দেওয়ার জন্য অনেকে দাবি করেছিলেন। তবে বিষয়টি আমলে না নিয়ে পুরোনোদের দিয়েই কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।
আজ রোববার জেলা শহরের আখড়াবাজারের কিশোরগঞ্জ বালিকা উচ্চবিদ্যালয় মাঠে সদর বিএনপির এ সম্মেলন হয়। এতে নতুন কমিটি ঘোষণার এক মিনিট আগে আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন জেলা বিএনপির সভাপতি মো. শরীফুল আলম। আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্তি করার সঙ্গে সঙ্গে সদ্য বিলুপ্ত কমিটির আহ্বায়ক ও জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খালেদ সাইফুল্লাহকে সদর বিএনপির সভাপতি এবং সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সদস্যসচিব ও জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী ইসরাইল মিঞাকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়।
এর আগে দুপুর পৌনে ১২টা থেকে কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়। কেন্দ্রীয় বিএনপির নেতারাসহ স্থানীয় নেতারা বিকেল চারটা পর্যন্ত বক্তব্য দেন। সবার পরে বক্তব্য দেন সম্মেলনের প্রধান অতিথি কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল।
হাবিব উন নবী বলেন, স্বৈরাচার শেখ হাসিনা অবৈধভাবে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে তাঁর স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি থেকে এক কাপড়ে উচ্ছেদ করে দিয়েছিল। এখন শেখ হাসিনা নিজেই দেশ থেকে উচ্ছেদ হয়ে গেছেন। শেখ হাসিনা এ দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। শুধু এই অপরাধেই তাঁর এক হাজার বছর জেল হওয়া উচিত। যাঁরা চোরের মতো দেশ থেকে পালিয়ে গেছেন, তাঁদের এই দেশে কস্মিনকালেও আর রাজনীতিতে ফিরে আসার সুযোগ নেই। ভারতকে বাংলাদেশের বিষয়ে হস্তক্ষেপ আর নাক না গলাতে আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বন্ধুত্ব করলে খুনি হাসিনার সঙ্গে নয়, বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে বন্ধুত্ব করুন।’
প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষ হতেই বিকেল ঠিক চারটার দিকে জেলা বিএনপির সভাপতি শরীফুল আলম মাইক হাতে নিয়ে বলেন, এখন দ্বিতীয় অধিবেশন শুরু। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হবে। এমন সময় সদরের এক ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মাইক নিয়ে খালেদ সাইফুল্লাহকে সভাপতি আর হাজী ইসরাইল মিঞাকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সমর্থন করেন। এরপর সঙ্গে সঙ্গে আরও দুই ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি এ সমর্থনে প্রস্তাব দেন।
এ সময় মঞ্চের নিচে থাকা সবাই হাত নেড়ে খালেদ সাইফুল্লাহ আর ইসরাইল মিঞার নামে স্লোগান দিতে থাকেন। তখনই জেলা বিএনপির সভাপতি শরীফুল আলম মাইকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করেন। এ সময় নিজ আসন থেকে উঠে এসে প্রধান অতিথি হাবিব উন নবী সদ্য ঘোষিত কমিটির সভাপতি খালেদ সাইফুল্লাহ ও ইসরাইল মিঞাকে অভিবাদন জানান। নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচনের পুরো প্রক্রিয়া শেষ করতে সময় লেগেছে মাত্র পাঁচ মিনিট। এরপরই সম্মেলন শেষ বলে ঘোষণা করেন জেলা বিএনপির সভাপতি শরীফুল আলম।
এর আগে সদ্য বিলুপ্ত সদর বিএনপির আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহর সভাপতিত্বে সম্মেলন উদ্বোধন করেন জেলা বিএনপির সভাপতি মো. শরীফুল আলম। প্রধান বক্তা ছিলেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. মাজহারুল ইসলাম। সদ্য বিলুপ্ত সদর বিএনপির সদস্যসচিব হাজী ইসরাইল মিঞার সঞ্চালনায় সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে ময়মনসিংহ বিভাগীয় বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবু ওয়াহাব আকন্দ, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য লাইলা বেগম, জেলা বিএনপির সহসভাপতি জাহাঙ্গীর আলম মোল্লা, রুহুল হোসাইন, জালাল মোহাম্মদ গাউস, সরকারি কৌসুঁলি (পিপি) জালাল উদ্দিন, আইনজীবী শরিফুল ইসলাম, রুহুল আমিন আকিল, আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক প্রমুখ বক্তব্য দেন।
এর আগে সকাল থেকেই দীর্ঘদিন পরে অনুষ্ঠিত হওয়া সম্মেলনকে ঘিরে বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে একধরনের উৎসাহ–উদ্দীপনা বিরাজ করে। বিভিন্ন এলাকা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সম্মেলনস্থলে জড়ো হন শত শত নেতা-কর্মী। তবে সম্মেলনের মূল মাঠে জায়গার সংকুলান না হওয়ায় অনেককে মাঠের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
এর আগে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে সম্মেলন ছাড়াই সদর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। আর ১৯৯৭ সালে সদর বিএনপির সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।