সড়ক দুর্ঘটনায় বিকলাঙ্গ হয়েছেন আবুল কালাম। পান প্রতিবন্ধী ভাতা। কিন্তু কয়েক মাস ধরে ভাতা বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন। রোববার সকালে ময়মনসিংহ নগরের জয়নুল আবেদিন উদ্যানে
সড়ক দুর্ঘটনায় বিকলাঙ্গ হয়েছেন আবুল কালাম। পান প্রতিবন্ধী ভাতা। কিন্তু কয়েক মাস ধরে ভাতা বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন। রোববার সকালে ময়মনসিংহ নগরের জয়নুল আবেদিন উদ্যানে

‘ভাতার টেহার লাগি ওষুধ কিনতাম পারতাছি না’

কাকডাকা ভোরে বাড়ি থেকে বের হন আক্কাস আলী। বয়স জিজ্ঞাসা করতেই দাবি করলেন ৮০। একসময় বাদাম বিক্রি ও দিনমজুরের কাজ করতেন। বয়সের ভারে পারেন না। শরীরেও দানা বেঁধেছে নানা অসুখ। বাধ্য হয়ে হাত পাতেন অন্যের দ্বারে। সরকারের পক্ষ থেকে বয়স্ক ভাতা পেলেও কয়েক মাস ধরে না পাওয়ায় তিনি বিপাকে পড়েছেন।

রোববার সকালে ময়মনসিংহ নগরের জয়নুল আবেদিন উদ্যানে প্রবীণ আক্কাস আলীর সঙ্গে কথা হয়। তাঁর বাড়ি জেলার মুক্তাগাছা উপজেলার তারাটি ইউনিয়নের কলাকান্দা গ্রামে। আক্কাস আলী বলেন, ‘আমি সরকারি বয়স্ক ভাতা পাই। তিন মাস পরপর ১ হাজার ৮০০ টাকা পাইতাম। কিন্তু ছয় মাস ধইরা পাইতাছি না। টেহার লাগি ওষুধ কিনতাম পারতাছি না। ভাতার টেহা পাইলে ওষুধ কিনলাম অইলে।’

আক্কাস আলী জানান, আগে বাদাম বিক্রি ও দিনমজুরের কাজ করলেও এক বছর ধরে মানুষের কাছে হাত পাতছেন। প্রতিদিন মুক্তাগাছা থেকে যাওয়া-আসায় ১৪০ টাকা খরচ হয়। জয়নুল আবেদিন উদ্যান ও আশপাশের এলাকা ঘুরে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা হয়। সেই টাকা দিয়ে সংসারের জিনিস কিনে বাড়ি ফেরেন। তাঁর তিন মেয়ে ও এক ছেলে। কিন্তু ছেলে তাঁকে দেখে না। স্ত্রীকে নিয়ে কষ্টের সংসার।

সড়ক দুর্ঘটনায় একটি চোখ হারানোর পাশাপাশি বিকলাঙ্গ হয়েছেন আবুল কালাম (৫৬)। ময়মনসিংহ সদর উপজেলার সিরতা ইউনিয়নের ভাটিয়ারা গ্রামের এই বাসিন্দা জয়নুল আবেদিন উদ্যানে ক্রাচে ভর দিয়ে মানুষের কাছে সাহায্য চাইছিলেন। সকালে তাঁর সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘তিন মাস পরপর ২ হাজার ২৫০ টাকা করে ভাতা পাইতাম। কিন্তু মেলা দিন ধইরা পাইতাছি না। ভাতার টেহা পাইলে আর কিছু টেহা লাগায়ে দুই বস্তা চাল কিনতাম। চাল দিয়া দুই মাস চলত, চিন্তা করণ লাগত না। কিন্তু ভাতা না পাওয়ায় অহন খুব কষ্ট কইরা চলতাছি।’

আবুল কালাম বলেন, ‘আগে দিনমজুরি করে তিন মেয়েকে নিয়ে সংসার চালাতেন। আট বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনা তাঁকে পঙ্গু বানিয়ে দেয়। তিন মেয়ের মধ্যে দুই মেয়ে মারা গেছে। আরেক মেয়ে স্বামীর সংসারে থাকে। বড় মেয়ের একটা সন্তানকে তিনি লালন–পালন করেন।

জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের তথ্যমতে, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় জেলায় ভাতাভোগী মানুষের সংখ্যা ৪ লাখ ৭৮ হাজার। এর মধ্যে ২ লাখ ৪৮ হাজার ৩৪০ জন মাসে ৬০০ টাকা করে বয়স্ক ভাতা পান। ১ লাখ ৬ হাজার ৫২৬ জন বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা নারী ৫৫০ টাকা করে ভাতা পান। ১ লাখ ১৮ হাজার ৮০৭ জন অসচ্ছল প্রতিবন্ধী মাসে ৮৫০ টাকা করে ভাতা পান। অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর বয়স্ক ভাতা পান ৭৩৬ জন, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৩ হাজার ৯২১ জন শিক্ষা উপবৃত্তি পান।

সমাজসেবা অধিদপ্তরের ময়মনসিংহের উপপরিচালক রাজু আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ভাতা ছাড় করা হয়েছে। উপকারভোগীরা ইতিমধ্যে ভাতা পেতে শুরু করেছেন। পর্যায়ক্রমে সবাই পাবেন।