রংপুরে আলু-পেঁয়াজের বাজার আবার অস্থির, আলু ৬৫, পেঁয়াজ ১০০

হিমাগার থেকে আলু বের করে বিক্রির জন্য বাছাই করা হচ্ছে। স্টিক জাতের এই আলু হিমাগারে ২৫ থেকে ২৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শুক্রবার রংপুর শহরতলির ময়নাকুঠি এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

রংপুরের বদরগঞ্জ, তারাগঞ্জসহ আশপাশের উপজেলায় আলু ও পেঁয়াজের বাজার আবার অস্থির হয়ে পড়েছে। সরকারিভাবে পণ্য দুটির দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হলেও ব্যবসায়ীরা তা মানছেন না। এতে ভোক্তাসাধারণ ক্ষোভ ও হতাশা ব্যক্ত করেছেন।

গত ১৪ সেপ্টেম্বর প্রতি কেজি আলু ৩৬ ও দেশি পেঁয়াজ ৬৫ টাকা দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকার। তখন আলু খুচরা বাজারে সর্বোচ্চ ৫০ ও পেঁয়াজ ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। এর কয়েক দিন পর খুচরা বাজারে আলু ৪০ ও পেঁয়াজ ৬৮ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হয়। কিন্তু বর্তমানে সেই আলু প্রতি কেজি সর্বোচ্চ ৬৫ ও দেশি পেঁয়াজ ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দাম বেড়ে গেলেও বাজারে প্রশাসনিক কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না।

আজ শুক্রবার রংপুরের বিভিন্ন খুচরা বাজারে সর্বোচ্চ ৬৫ ও সর্বনিম্ন ৫০ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি হয়েছে। হিমাগার পর্যায়ে প্রকারভেদে তা বিক্রি হয়েছে ৪৬ থেকে ৫২ টাকায়। অথচ মৌসুমের শুরুতে আলুচাষিরা বিক্রি করেছেন ১০ থেকে ১১ টাকা কেজি। চাষিরা বলছেন, বছর শেষে আলুর অনিয়ন্ত্রিত বাজার, সামনে উৎপাদন খরচ দ্বিগুণ হবে।  

বদরগঞ্জের আমরুলবাড়ি গ্রামের কৃষক তৈয়ব আলী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘সরকার তো আলু-পেঁয়াজের দাম বান্দি দিয়া খালাস। ব্যবসায়ীরা ইচ্ছামতো দাম বাড়াইতে আছে। এক কেজি আলু বা পেঁয়াজ কিনবার গেইলে বুকটা ফাটি যায়। দেখার কাঁয়ো নাই।’

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ ও বিপণন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এবার আলু চাষ হয়েছে ৫৩ হাজার ৩০৫ হেক্টর জমিতে। উৎপাদিত হয়েছে ১৬ লাখ ৪ হাজার ৫৫৬ মেট্রিক টন আলু। জেলায় আলুর বাৎসরিক চাহিদা ১ লাখ ২৭ হাজার ৭০৯ মেট্রিক টন। কৃষি বিভাগের দেওয়া তথ্যমতে, গতকাল পর্যন্ত জেলার ৩৯টি হিমাগারে আলুর মজুত ছিল ১ লাখ ৫ হাজার টন। এর বেশির ভাগই বীজ আলু।

আলুর এমন আকাশচুম্বী দামের প্রভাব পড়বে এবারে আলু চাষেও। আজ রংপুরের তারাগঞ্জের কিষান, সিনহা, ব্রাদার্স, এনএন হিমাগার ও বদরগঞ্জের শাহজালাল হিমাগার ঘুরে দেখা গেছে, পাইকারিতে প্রকারভেদে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয়েছে কার্টিনাল ৪৬ ও শীল ৫২ টাকা পর্যন্ত। খুচরা বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬৫ টাকায়।

তারাগঞ্জের ছুট মেনানগর গ্রামের আলুচাষি রূপচাঁদ আলী বলেন, গত মৌসুমে খেত থেকে আলু তোলা পর্যন্ত প্রতি কেজি উৎপাদনে খরচ পড়েছিল ৯ টাকা। তখন তা বিক্রি হয় ১০ থেকে ১১ টাকায়। ব্যবসায়ীরা ওই দামে আলু কিনে হিমাগারে রেখে এখন বিক্রি করছেন ৫০ থেকে ৬৫ টাকায়। কেনাসহ হিমাগারভাড়া ও অন্যান্য খরচ মিলিয়ে ব্যবসায়ীদের প্রতি কেজিতে খরচ পড়েছে সর্বোচ্চ ২০ টাকা।

তারাগঞ্জের রিকশাচালক আবদুর রহিম বলেন, ‘এ্যালা কামাই নাই। বাজারোত গেইলে জিনিসের দাম শুনিয়া মাথা ঘোরে। সবাই ভোট হওয়া না হওয়া নিয়া ব্যস্ত। জিনিসের দাম যে খালি বাড়াওচে, সেটা কি সরকার দেখপের নেয়!’

বদরগঞ্জ বাজারের খুচরা সবজি বিক্রেতা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সরকার দাম বান্দি দিয়া কী করবে! হামাক কিনবার নাগে বেশি দামে। দুই–চাইর টাকা লাভ করি হামরা বেচে দেই। হামার কী দোষ? অথচ সরকারি লোক আসিয়া হামারে জরিমানা করে। আড়োতোত হাত দেয় না।’

রংপুর কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ কৃষি বিপণন কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, হিমাগারে সংরক্ষণভাড়া, উৎপাদন, পরিবহন, শ্রমিক, বস্তা, ওজনসহ প্রতি কেজি আলুতে খরচ পড়েছে প্রায় ২০ টাকা। সেই আলু বাজারে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা পর্যন্ত। বদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সাঈদ বলেন, নির্ধারিত দামে আলু কিংবা পেঁয়াজ বিক্রি করতে হবে। কেউ বেশি দামে বিক্রি করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।