নরসিংদীতে বিএনপি কার্যালয়ে আবার হামলা–ভাঙচুর

নরসিংদীর জেলা বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ে আবার হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছে জেলা ছাত্রদলের পদবঞ্চিত ও বহিষ্কৃত নেতা ও তাঁদের সমর্থকেরা
 ছবি: প্রথম আলো

নরসিংদীর জেলা বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয় ও কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকনের বাসভবনে জেলা ছাত্রদলের পদবঞ্চিত ও বহিষ্কৃত নেতারা আবার হামলা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ বুধবার বেলা দুইটায় নরসিংদী সদর উপজেলার চিনিশপুরে বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ে ঘরোয়া সভা চলার সময় ওই হামলা হয়। এ সময় ককটেল বিস্ফোরণ ও ইটপাটকেল ছোড়ার ঘটনা ঘটে।

দলটির নেতা–কর্মীরা জানান, আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানী ঢাকা থেকে নিজ কার্যালয়ে আসেন খায়রুল কবির খোকন। তিনি ভেতরে প্রবেশ করার পরপরই ছাত্রদলের পদবঞ্চিত নেতাদের সমর্থকেরা ওই কার্যালয়ের প্রধান ফটকের পকেট গেট তালাবদ্ধ করে চলে যান। পরে দুপুর ১২টার দিকে জেলা বিএনপির নেতা–কর্মীরা কার্যালয়ের প্রধান ফটক খুলে ভেতরে প্রবেশ করেন।

বিএনপি নেতাদের ভাষ্য, ৮ এপ্রিল অনুষ্ঠেয় সব উপজেলায় বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি সফল করতে আজ বেলা দেড়টার দিকে জেলা বিএনপির কার্যালয়ে প্রস্তুতিমূলক মিটিংয়ে বসেছিলেন তাঁরা। এ সময় ভেতরে ছিলেন দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক খায়রুল কবির খোকন, সদস্যসচিব মনজুর এলাহী, মনোহরদীর সাবেক সংসদ সদস্য সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুলসহ জেলা-উপজেলা পর্যায়ের অন্তত ৫০ জন নেতা।

বেলা দুইটার দিকে ছাত্রদলের পদবঞ্চিত ও বহিষ্কৃত নেতা মাইন উদ্দিন ভূঁইয়া, ফাহিম রাজ অভি ও তাঁদের ৫০-৬০ জন কর্মী-সমর্থক স্লোগান দিতে দিতে জেলা বিএনপির কার্যালয়ে আসেন। তাঁরা ফটকের বাইরে অবস্থান করে কার্যালয়ের ভেতরে অতর্কিতভাবে ককটেল ও ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। এ সময় একের পর এক ককটেল বিস্ফোরিত হতে থাকলে এলাকাজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তিন মিনিটের মধ্যে তাঁরা এসব ঘটনা ঘটিয়ে চলে যান। তাঁরা চলে যাওয়ার পর নরসিংদী মডেল থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে ৮-১০টি অবিস্ফোরিত ককটেল উদ্ধার করে।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত মাইন উদ্দিন ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজ সকালে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে আমার দুজন কর্মীকে তাঁরা মারধর করেছেন, এমন খবর পেয়ে আমরা এ হামলা চালিয়েছি। যত দিন পর্যন্ত জেলা ছাত্রদলের এ কমিটি বাতিল করা না হবে, তত দিন আমরা তাঁদের কোনো কর্মসূচি পালন করতে দেব না।’

জানতে চাইলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও জেলা কমিটির আহ্বায়ক খায়রুল কবির খোকন বলেন, হামলাকারীরা সরকারি দল ও পুলিশ প্রশাসনের ছত্রচ্ছায়ায় এ হামলা চালিয়েছে ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটিয়েছে। পুলিশের নাকের ডগায় থেকে বারবার এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে তারা। এতেই প্রমাণিত যে কারা তাদের ছত্রচ্ছায়া দিচ্ছে। আমরাও এ দেশের নাগরিক, আমাদের নিরাপত্তা দেওয়া প্রশাসনের দায়িত্ব। অথচ প্রশাসন বারবার এসব ঘটনা এড়িয়ে যাচ্ছে।

নরসিংদীর জেলা বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ে আজ বুধবার আবার হামলা চালিয়েছে জেলা ছাত্রদলের পদবঞ্চিত ও বহিষ্কৃতা নেতা ও তাঁদের সমর্থকেরা। হামলার পর এ বিষয়ে বক্তব্য দেন খায়রুল কবির

নরসিংদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কাশেম ভূঁইয়া বলেন, ‘খবর পেয়ে বিএনপির কার্যালয়ে গিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ঘটনাস্থল থেকে অবিস্ফোরিত কিছু ককটেল জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

গত ২৬ জানুয়ারি জেলা ছাত্রদলের পাঁচ সদস্যের আংশিক কমিটির অনুমোদন দেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ। দীর্ঘ ১২ বছর পর ঘোষিত ওই কমিটিতে সিদ্দিকুর রহমানকে সভাপতি ও মেহেদী হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। ওই কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী ছিলেন মাইন উদ্দিন ভূঁইয়া ও ফাহিম রাজ অভি। প্রত্যাশিত পদ না পেয়ে তাঁরা যৌথভাবে তাঁদের কর্মী–সমর্থকদের নিয়ে একের পর এক ঘটনা ঘটিয়ে চলেছেন। এসবের জের ধরে ১২ ফেব্রুয়ারি তাঁরা দুজনসহ মোট তিন নেতাকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল।

ওই কমিটি ঘোষণার রাতে (২৬ জানুয়ারি) পদবঞ্চিত নেতাদের ২০-২৫ জন সমর্থক জেলা বিএনপি কার্যালয়ের প্রধান ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে শতাধিক প্লাস্টিকের চেয়ার, ব্যানার, প্রচারপত্র ও ফেস্টুনে আগুন লাগিয়ে দেন এবং ইটপাটকেল ছুড়ে কার্যালয়টির জানালা ও সিঁড়ির গ্লাস ভাঙচুর করেন। গত ৩০ জানুয়ারি বিকেলে ওই স্থানে খায়রুল কবির খোকনের কুশপুত্তলিকা পোড়ান তাঁরা। পরে কয়েক দফা ওই কমিটি বাতিলের দাবিতে তাঁরা বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেন। ১১ ফেব্রুয়ারি সকালে শিবপুরের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ইটাখোলা মোড়ে ছাত্রদলের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের সময় গুলি ও ককটেল ছুড়ে মারার ঘটনা ঘটে।