খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার শোভনা ইউনিয়নের জিয়েলতলা গ্রামে বিশ্বজিৎ বিশ্বাসের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন শাশুড়ি, শ্যালক, শ্যালকের স্ত্রী ও তাঁদের চার বছরের ছেলে। তাঁদের জন্য কেনাকাটা করতে গতকাল শনিবার বিকেলে বাজারে যাচ্ছিলেন বিশ্বজিৎ। বিশ্বজিতের ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকে চড়েছিলেন তাঁর স্ত্রী ও দুই বছরের মেয়ে, শাশুড়ি, শ্যালকের স্ত্রী ও শ্যালকের ছেলে।
পথে বিশ্বজিতের ইজিবাইকে ওঠেন সাব্বির মোড়ল নামের একজন। তাঁর বাড়ি ডুমুরিয়া উপজেলার খর্নিয়া ইউনিয়নের আঙ্গারদোহা গ্রামে। আর বিশ্বজিতের শ্বশুরবাড়ি গুটুদিয়া ইউনিয়নের বিল পাবলা গ্রামে।
আনন্দ নিয়ে আত্মীয়স্বজনসহ বিশ্বজিৎ চুকনগর বাজারের দিকে যাচ্ছিলেন। খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়ক ধরে যাওয়ার পথে গতকাল বিকেল পৌনে চারটার দিকে হঠাৎ সামনের দিক থেকে আসা একটি ট্রাক সেই আনন্দকে পরিণত করে দিল বিষাদে। ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে ইজিবাইক ছিটকে পড়ে বেশ কিছুটা দূরে। দুমড়েমুচড়ে যায় সেটি। ঘটনাস্থলেই মারা যান বিশ্বজিৎ (৩০) ও সাব্বির মোড়ল (২৩)।
গুরুতর আহত অবস্থায় ডুমুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর মারা যান বিশ্বজিতের শ্যালকের স্ত্রী নীপা ঢালী (২৫) ও শাশুড়ি অমরি ঢালী (৪৫)। ওই হাসপাতাল থেকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যায় বিশ্বজিতের দুই বছরের মেয়ে অর্ণি বিশ্বাস। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিশ্বজিতের স্ত্রী অন্তিমা বিশ্বাস ও শ্যালকের ছেলে অরিজিৎ ঢালী। অন্তিমা বিশ্বাস এখনো অচেতন অবস্থায় আছেন, তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলছেন চিকিৎসকেরা।
বিশ্বজিতের ছোট ভাই অভিজিৎ বিশ্বাসের মুঠোফোন নম্বরে কল দিলে তিনি বলেন, ‘দুর্ঘটনায় যাঁরা মারা গেছেন, একজন বাদে সবাই আমাদের আত্মীয়।’
ডুমুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মো. মেহেরুব হাসান প্রথম আলোকে বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা আহত পাঁচজনকে গতকাল বিকেলে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এর মধ্যে দুজন ছিলেন মৃত। বাকি দুই শিশুসহ তিনজনের অবস্থাও ছিল গুরুতর। এ কারণে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁদের খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে গতকাল রাতে দেখা যায়, তিনতলার সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে অন্তিমা বিশ্বাস ও শিশু অরিজিৎ ঢালীকে। শয্যা না থাকায় বাইরের বারান্দায় রাখা হয়েছে তাঁদের। পাশেই আহাজারি করছিলেন স্বজনেরা।
গতকাল রাত সাড়ে আটটার দিকে সার্জারি ইউনিট-২-এর সহকারী রেজিস্ট্রার মো. কনক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, শিশুসহ দুজনের অবস্থা এখন অপরিবর্তিত। অন্তিমার অবস্থা খুব বেশি গুরুতর না হলেও শরীরের বিভিন্ন জায়গার হাড় ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। আজ রোববার এক্স-রে করানোর পর বিষয়টি বোঝা যাবে। সার্জারি ইউনিট-২-এ শয্যা আছে মাত্র ২০টি। কিন্তু রোগী আছেন ২০০ জনের বেশি। এ কারণে ওই রোগীদের শয্যা দেওয়া সম্ভব হয়নি।
দুর্ঘটনার বর্ণনা দিয়ে প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, গতকাল বিকেল পৌনে চারটার দিকে চুকনগরের দিক থেকে ইটবাহী ডাম্পিং ট্রাক ডুমুরিয়ার দিকে যাচ্ছিল। আর ইজিবাইকটি ডুমুরিয়ার দিক থেকে চুকনগরের দিকে যাচ্ছিল। খর্নিয়া ইউনিয়নের আঙ্গারদোহা কালভার্ট এলাকায় পৌঁছানোর পর দুটি যানের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। ট্রাকটি দ্রুতগতিতে অন্য একটি ট্রাককে অতিক্রম করার সময় ইজিবাইককে ধাক্কা দেয়।
ডুমুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকান্ত সাহা বলেন, ঘটনাস্থলে দুজন, ডুমুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দুজন ও খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজন মারা গেছেন।