গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত প্রথম নারী মেয়র জায়েদা খাতুন আজ সোমবার তাঁর দায়িত্ব বুঝে নিয়েছেন। এ উপলক্ষে আজ দুপুরে শহরের বঙ্গতাজ মিলনায়তনে এক অভিষেক অনুষ্ঠান ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এরপর তিনি নগর ভবনে যান। তবে অনুষ্ঠানে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা এবং আওয়ামী লীগের কোনো বড় নেতাকে দেখা যায়নি।
অনুষ্ঠানে মেয়র জায়েদা খাতুন বলেন, ‘আপনারা ভোট দিয়ে আমাকে মেয়র নির্বাচিত করেছেন। আমার আগেও আমার ছেলে জাহাঙ্গীর আলমকে মেয়র পদে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করেছিলেন। এ জন্য আমি আমার পরিবারের পক্ষ থেকে আপনাদের শুভেচ্ছা জানাই। আমি নির্বাচিত কাউন্সিলর ও সিটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের অনুরোধ জানাচ্ছি। ... মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা এবং আমার ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে একটি সুন্দর ও আধুনিক নগর উপহার দেব। এজন্য আমি সহযোগিতা চাই।’
অভিষেক অনুষ্ঠানের প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক মেয়র ও জায়েদা খাতুনের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম। এ সময় তিনি বলেন, ‘আপনারা মাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। মা-ও বলেছেন তাঁর জীবনবাজি রেখে আপনাদের পাশে থাকবেন, সেবা দেবেন। আপনারা জানেন নির্বাচনের প্রচারণার কাজে টঙ্গীতে গেলে তিনি বারবার বাধা ও হামলার শিকার হয়েছেন। তারপরও তিনি থেমে যাননি।’ তিনি আরও বলেন, ‘কেউ শহরের ক্ষতি করবেন না। এ শহর রক্ষার জন্য অনেক চেষ্টা করেছি, কষ্ট করেছি। আবারও প্রয়োজন হলে মায়ের সঙ্গে থেকে এ সিটির জন্য কাজ করব।’
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ এস এম সফিউল আজম অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। এ সময় সাবেক সংসদ সদস্য কাজী মোজাম্মেল হক, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সচিব মো. আবদুল হান্নানসহ নবনির্বাচিত কাউন্সিলররা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে সকাল ৯টার পর হতেই গাড়িতে চড়ে এমনকি পায়ে হেঁটে নবনির্বাচিত মেয়রের সমর্থকেরা বাদ্য বাজিয়ে নেচেগেয়ে অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হতে থাকেন। একপর্যায়ে পুরো এলাকা লোকে লোকারণ্যে হয়ে পড়ে। আনন্দমিছিলের কোলাহলে আশপাশ মুখর হয়ে ওঠে। অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গেলে গাজীপুর সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সফিউল আজম ও নির্বাচিত কাউন্সিলররা নতুন মেয়রকে ফুলের শুভেচ্ছা জানান।
এরপর মেয়র নগর ভবনে গিয়ে তাঁর আসনে বসেন। এ সময় তাঁর ছেলে জাহাঙ্গীর আলমও পাশে ছিলেন। আগের দিন গতকাল রোববার ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে তাঁর দায়িত্ব হস্তান্তর করেন।
সিটি করপোরেশন সূত্র জানা গেছে, গত ২৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে জায়েদা খাতুন নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ খানের সঙ্গে লড়াই করে তিনি ১৬ হাজার ১৯৭ ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করে চমক সৃষ্টি করেন। জায়েদা খাতুন ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পান।
মেয়রের সমর্থকেরা বলেন, গাজীপুর সিটি নির্বাচনে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। কিন্তু ব্যাংকে জামিনদার হয়ে ঋণখেলাপি হওয়ায় জাহাঙ্গীর আলমের প্রার্থিতা বাতিল হয়ে যায়। এরপর মাকে জয়ী করতে প্রচারণায় নামেন তিনি। তখন জায়েদা খাতুন বলেছিলেন, ছেলের প্রতি নগরবাসীর ভালোবাসা প্রমাণ করার জন্যই তিনি ওই নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। নগরবাসী সেই ভালোবাসার প্রমাণ দিয়েছেন।