সুনামগঞ্জে গত বছরের বন্যায় নিয়ামতপুর-তাহিরপুর সড়কটির ব্যাপক ক্ষতি হয়। দুই উপজেলার ৯ কিলোমিটার দূরত্বের সড়কটি সংস্কারে সাড়ে ৩৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেয় সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর। কাজ শুরুর আগেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকা বিল দেওয়ার প্রস্তাব করে সওজ। গত জুন মাসে ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা পরিশোধ করা হলেও এখনো পুরোদমে কাজ শুরু হয়নি।
সুনামগঞ্জ সওজ সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জ-জামালগঞ্জ সড়কের বিশ্বম্ভরপুর অংশের নিয়ামতপুর থেকে উত্তরে তাহিরপুর উপজেলায় একটি সড়ক চলে গেছে। গত বছরের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়কটি সংস্কারে ৩৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকার একটি প্রকল্প নেওয়া হয়। যৌথভাবে কাজটি পায় ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘সালেহ অ্যান্ড ব্রাদার্স’ ও ‘কামরুল অ্যান্ড ব্রাদার্স’ নামের দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কার্যাদেশ অনুযায়ী চলতি বছরের ৭ জুন কাজ শুরু করে আগামী বছরের ৬ মার্চ শেষ করার কথা। কিন্তু কাজ শুরুর আগেই জুন মাসে ঠিকাদারকে ৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকা বিল পরিশোধের চাহিদা দেখিয়ে প্রধান কার্যালয়ে বিল পাঠায় সুনামগঞ্জ সওজ। কিন্তু তহবিল সংকটের কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ১ কোটি ৯০ লাখ টাকার বিল দেওয়া হয়।
সুনামগঞ্জ-জামালগঞ্জ সড়কের নিয়ামতপুর মোড়ে গত ২৭ সেপ্টেম্বর কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন সুনামগঞ্জ-৪ (সদর-বিশ্বম্ভরপুর) আসনের সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ। এর তিন মাস আগেই ঠিকাদারকে বিল দেওয়া হয়েছে। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের বাসিন্দারা সদর ও তাহিরপুর উপজেলায় এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করেন। এ ছাড়া তাহিরপুর উপজেলার মানুষও জেলা সদরে যাতায়াতের জন্য বিকল্প সড়ক হিসেবে এটি ব্যবহার করেন।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, বন্যায় সড়কটির বেহাল। বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দ। কোথাও কোথাও সড়কের পাশের মাটি ধসে গেছে। সড়কের চানপুর এলাকার কোপা নদীর ওপরের সেতুর দুই পাশে ধস দেখা দেওয়ায় বেইলি সেতু বসানো হয়েছে। সড়কের ফতেপুর এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, আবুয়া নদীর ওপর একটি নতুন সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। সেতুর উত্তর পাশের সংযোগ সড়কে কিছু মাটি ফেলা আছে। স্থানীয় লোকজন জানান, সড়কের সংস্কারকাজের অংশ হিসেবে মাসখানেক আগে মাটি ফেলা হয়েছিল। এরপর আর কাজ হয়নি। সড়কের শাহপুর, বসন্তপুর এলাকা ঘুরে কাউকে কাজ করতে দেখা যায়নি।
কাজের তদারকির দায়িত্বে আছেন সুনামগঞ্জ সওজের উপসহকারী প্রকৌশলী সহদেব সূত্রধর। তিনি বলেন, কার্যাদেশ দেওয়ার পর পানি চলে আসায় কাজ শুরু করা যায়নি। জুন মাসের পর বিল হতে সময় লাগে। তাই ৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকার বিলের চাহিদা প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘চাহিদা অনুযায়ী তো বিল পাওয়া যায়নি। বিল হয়েছে ১ কোটি ৯০ লাখ টাকার। এখন একটা পক্ষ এটা নিয়ে প্রচার চালাচ্ছে, এটা ঠিক না।’ কাজের বিষয়ে তিনি বলেন, মাটি পাওয়া সমস্যা। হাওরে এখনো পানি। পানি কমলে মাটি পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। তখন পুরোদমে কাজ শুরু হবে।
কাজটি ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পেলেও করছেন সিলেটের ঠিকাদার আবদুল হান্নান। কাজ শুরুর আগে ১ কোটি ৯০ লাখ টাকার বিল তুলে নেওয়ার কথা প্রথমে অস্বীকার করেন তিনি। সওজ নিশ্চিত করেছে জানালে আবদুল হান্নান বলেন, ‘এইটা দিছে। চাইছিলাম তো অনেক বেশি। তবে কাজও কিন্তু হচ্ছে। মাটি পাওয়াই তো সমস্যা। নির্বাচনের আগেই কাজ শেষ করব।’
সওজের সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম প্রামাণিক কাজ শুরুর আগে ঠিকাদারকে বিল দেওয়ার বিষয়ে বলেন, ‘যেকোনো কাজের ক্ষেত্রে বিলের চাহিদা দেওয়া যায়। কাজ তো হবেই। নিয়মানুযায়ী কিছু বিল দেওয়া হয়েছে। সেটা কাজের বরাদ্দের তুলনায় সামান্যই।’