ভারত থেকে ৫৫ জেলেকে দেশে ফিরিয়ে আনতে পাথরঘাটায় মৎস্যজীবীদের মানববন্ধন

৫৫ জেলেকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে মানববন্ধনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন মৎস্যজীবীরা
ছবি: প্রথম আলো

বঙ্গোপসাগরে ঝড়ের কবলে পড়ে সাগরপথে ভারতে চলে যাওয়া বাংলাদেশের ৫৫ জেলেকে দেশে ফিরিয়ে আনতে মানববন্ধন করেছেন বরগুনার পাথরঘাটার মৎস্যজীবীরা। আজ সোমবার সকাল ১০টায় পাথরঘাটা বিএফডিসি মৎস্য অবতরণকেন্দ্রে ঘণ্টাব্যাপী এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধন শেষে পাথরঘাটার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুফল চন্দ্র গোলদারের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে স্মারকলিপি দেন মৎস্যজীবীরা।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ১২ আগস্ট বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ঝড়ের কবলে পড়ে পাথরঘাটার এফবি ফাতিমা ট্রলার। এ সময় ওই ট্রলারের ইঞ্জিনও বিকল হয়ে যায়। পরে ওই ট্রলারের ১১ জেলে ভাসতে ভাসতে ভারতের চব্বিশ পরগনার ছোট মোল্লাখালী চর এলাকায় চলে যান। তাঁরা বর্তমানে ভারতের ২৪ পরগনা কারাগারে আছেন। এদিকে ১৯ আগস্ট ঝড়ের কবলে পড়ে পাথরঘাটা ও বরগুনা সদর উপজেলার মাছ ধরা আটটি ট্রলার ডোবার ঘটনা ঘটে। ঝড়ের কবলে পড়ে ওই ট্রলারগুলোর ৪৪ জেলে ভারতের কাকদ্বীপ ও বৌদ্ধপুর আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। ভারতের কারাগারে আটক ১১ জেলে এবং ভারতের কাকদ্বীপ ও বৌদ্ধপুর আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা ৪৪ জেলেসহ মোট ৫৫ জেলেকে দেশে ফিরিয়ে আনতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করা হচ্ছে।

পাথরঘাটা বিএফডিসি মৎস্য আড়তদার মালিক সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন জমাদ্দারের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য দেন পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদের নারী ভাইস চেয়ারম্যান ফাতিমা পারভীন, বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাছুম আকন, পাথরঘাটা বিএফডিসি মৎস্য আড়তদার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এনামুল হোসাইন, বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আবদুল মান্নান মাঝি, পাথরঘাটা বিএফডিসি পাইকার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আব্বাস মিয়া, পাথরঘাটা বিএফডিসি ঘাট শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ফারুক হোসেন আকন প্রমুখ।

পাথরঘাটা বিএফডিসি মৎস্য আড়তদার মালিক সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারতের দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর হওয়ায় প্রায়ই ভারতের জেলেরা ট্রলারসহ বাংলাদেশের জলসীমা অতিক্রম করে বরগুনা, পটুয়াখালী ও বাগেরহাট এলাকায় চলে আসে। তখন মানবিক দিক বিবেচনা করে আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতায় ওই সব ট্রলারের জেলেদের ভারতে যেতে সহযোগিতা করি। কিন্তু বাংলাদেশের জেলেরা ঝড়ের কবলে পড়ে ভারতে চলে গেলে তাঁদের সহজে দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয় না। ভারতের কারাগারে সম্প্রতি ১১ জেলে, আশ্রয়কেন্দ্রে ৪৪ জেলসহ যাঁরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন, তাঁদের দেশে ফিরিয়ে দিতে ভারত সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।’

এদিকে মানববন্ধন শেষে পাথরঘাটার ইউএনও সুফল চন্দ্র গোলদারের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে স্মারকলিপি দেন মৎস্যজীবীরা। জানতে চাইলে সুফল চন্দ্র গোলদার প্রথম আলোকে বলেন, ১১ জেলের তালিকা নিয়ে ট্রলার মালিক সমিতির নেতা গোলাম মোস্তফা চৌধুরী ভারতে রয়েছেন। অপর জেলেদের ব্যাপারেও প্রশাসনের তৎপরতা রয়েছে।

ভারত থেকে গোলাম মোস্তফা চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বরগুনা ও পিরোজপুর এলাকার ৪৪ জেলে ভারতে রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে কাকদ্বীপে ২১ জন ও বৌদ্ধপুর আশ্রয়কেন্দ্রে ২৩ জন। ওই ৪৪ জেলের বাড়ি পিরোজপুর ও বরগুনা জেলায়। এ ছাড়া এফবি ফাতিমা ট্রলারের ১১ জেলে ভারতের ২৪ পরগনা কারাগারে আটক রয়েছেন। ঝড়ের কবলে পড়ে অনিচ্ছা সত্ত্বেও ভারতে চলে যাওয়া ওই জেলেদের দেশে ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ ও ভারতের তেমন কোনো সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না। মানবিক দিক বিবেচনা করে তাঁদের দেশে ফিরিয়ে আনতে দুই দেশেরই সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।

এ ব্যাপারে বরগুনা জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান বলেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি আমিও শুনেছি। তবে ওই জেলেদের তালিকা না পাওয়ায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র দপ্তরে লিখিত তথ্য পাঠানো যাচ্ছে না। তারপরও বিষয়টি আমরা খোঁজখবর নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে কথা বলব। মানবিক দিক বিবেচনা করে ঝড়ের কবলে পড়া জেলেদের বিষয়টি দেখার অনুরোধ করা হবে।’