সড়ক দুর্ঘটনায় ছেলে আব্দুল মোতালেব (৩৬), পুত্রবধূ সাবিনা আক্তার (৩০), নাতি সোয়াইব (৪) ও নাতনি মুক্তাকে (৯) হারিয়ে একেবারে ভেঙে পড়েছেন নাজিম উদ্দিন। কোনো কথাই বলতে পারছেন না। ঠিক এই সময়ে অন্য পাশ থেকে ভেসে আসছিল মা ময়না বেগমের গগনবিদারী আহাজারি। বৃদ্ধ বয়সে ছেলের পরিবারের সব সদস্যের এমন মৃত্যু দেখতে হবে—এমনটি হয়তো দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারেননি এই দম্পতি।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে শেরপুর সদর উপজেলার কামারিয়া ইউনিয়নের রঘুনাথপুর গ্রামে মোতালেবের বাড়িতে গিয়ে এ দৃশ্য দেখা গেছে।
বুধবার দিবাগত রাত পৌনে দুইটার দিকে পিরোজপুর সদর উপজেলার নুরানি গেট এলাকায় একটি প্রাইভেট কার খালে পড়ে দুই পরিবারের শিশু সদস্যসহ আটজনের মৃত্যু হয়। তাঁদের মধ্যে মোতালেবসহ তাঁর পরিবারের চারজন ছিলেন। তিনি ঢাকা সেনানিবাসে বেসরকারি কর্মচারী হিসেবে চাকরি করতেন। আর পরিবার নিয়ে সেখানেই থাকতেন।
আজ ভোরে দুর্ঘটনায় একই পরিবারের চার সদস্যের মৃত্যুর খবর পৌঁছালে মোতালেবের গ্রামের বাড়ি রঘুনাথপুরে শোকের ছায়া নেমে আসে। আর তাঁর পরিবারে চলছিল শোকের মাতম। দুর্ঘটনার খবর শুনে মোতালেবের বাড়িতে ভিড় করেন প্রতিবেশী ও স্বজনেরা। এ সময় উচ্চ স্বরে কান্নাকাটি করছিলেন মোতালেবের মা ময়না বেগম, বড় বোন লাভলী ও অন্য আত্মীয়স্বজন।
বুক চাপড়িয়ে মা ময়না বেগম বলছিলেন, ‘অহন আমগরে দেখবো কে? কেমনে আমগরে সংসার চলব? অসুস্থ মাইয়ার চিকিৎসার জন্য ওষুধ কিনা দিব কেরা?’
প্রশ্নগুলোর জবাব জানা নেই মোতালেবের বাবা নাজিম উদ্দিনেরও। নীরবতা ভেঙে তিনি হঠাৎ বলে উঠলেন, ‘জানি না আল্লাহ আমারে এ কেমন শাস্তি দিল। আমার পুরা সংসারটা ভাইঙ্গা গেল।’
এই দম্পতির দুই সন্তানের মধ্যে মোতালেব ছিলেন ছোট। বড় মেয়ে লাভলী শারীরিকভাবে অসুস্থ। এ কারণে বাবার বাড়িতেই থাকেন। মোতালেবের একক উপার্জনেই পুরো পরিবারটি চলত। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে পরিবারটি দিশাহারা হয়ে পড়েছে বলে জানান সদর উপজেলার কামারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য মো. ইন্তাজ আলী। তিনি বলেন, মোতালেব অত্যন্ত ভালো মানুষ ছিলেন। তাঁর (মোতালেব) অকালমৃত্যুতে পরিবারটি অসহায় হয়ে পড়েছে। পরিবারটিকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করার আবেদন জানান তিনি।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, মোতালেব ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের মরদেহ আনার জন্য স্বজনেরা পিরোজপুরের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। আগামীকাল শুক্রবার গ্রামের বাড়িতেই সবাইকে দাফন করার কথা আছে।