হঠাৎ করেই পঞ্চগড়ের বোদা সীমান্তে সনাতন ধর্মের কিছু মানুষ জড়ো হন
হঠাৎ করেই পঞ্চগড়ের বোদা সীমান্তে সনাতন ধর্মের কিছু মানুষ জড়ো হন

পঞ্চগড়ের বোদা

হঠাৎ করে অচেনা কিছু মানুষ সীমান্তে জড়ো হন, ফিরে যান প্রশাসনের হস্তক্ষেপে

পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী কাজলদীঘি কালিয়াগঞ্জ ইউনিয়নের লাহিড়ীপাড়া এলাকায় গত বুধবার দুপুরে হিন্দু সম্প্রদায়ের কয়েকজন ব্যক্তি জড়ো হয়েছিলেন। তাঁদের ওপর নির্যাতন হচ্ছে, দাবি করে ভারতে যাওয়ার সুযোগ দিতে বিএসএফকে অনুরোধ করেন তাঁরা। খবর পেয়ে পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম বিজিবির সহায়তায় ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা করেন। পরে বিজিবি ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের হস্তক্ষেপে জড়ো হওয়া লোকজনকে সন্ধ্যায় বাড়িতে পাঠানো হয়।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ওই মানুষেরা ভারতে যেতে সেখানে জড়ো হন। তবে কারও সঙ্গে কোনো জিনিসপত্র বা ব্যাগ ছিল না। তাঁদের কেউ স্থানীয় বাসিন্দাও নন। সবাই অন্য এলাকা থেকে সেখানে আসেন। সীমান্তের ৭৭২ নম্বর পিলার এলাকায় জড়ো হওয়ার পর বিজিবির সহায়তায় তাঁদের ফেরত পাঠানো হয়।

ভারত সীমান্তঘেঁষা লাহিড়ীপাড়া গ্রামের অপর প্রান্তে ভারতের ধরধরা পাড়া গ্রাম। দুই দেশের সীমান্তে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে কোনো কাঁটাতারের বেড়া নেই। গতকাল শনিবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত এবং আজ রোববার সীমান্তঘেঁষা লাহিড়ীপাড়া, চিরাকুটি, কালীতলা-বনগ্রাম, ধামেরহাটসহ কয়েকটি এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, স্বাভাবিকভাবেই চলাফেরা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সীমান্ত এলাকায় টহল দিচ্ছে বিজিবি ও বিএসএফ। এলাকাবাসী জানান, গত বুধবার হঠাৎ করে কিছু ব্যক্তি সেখানে জড়ো হন। পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে তাঁরা ফিরে যান। এরপর আর ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়নি।

লাহিড়ীপাড়া গ্রামের বাসিন্দা জয়দেব রায় (৩৫) প্রথম আলোকে বলেন, বুধবার হঠাৎ করে বাইরে থেকে লোকজন তাঁর বাড়ির পাশে জড়ো হতে শুরু করেন। এঁদের মধ্যে কেউ কেউ বলছিলেন, তাঁদের বাড়িতে হামলা হয়েছে। এ জন্য তাঁরা ভারতে চলে যেতে চান। পরে তাঁদের দেখতে আরও অনেক লোক সেখানে জড়ো হন। তিনি বলেন, ‘আমরা সুখে-শান্তিতে এখানে বসবাস করছি। আমাদের ওপর কোনো হামলা হয়নি। আমরা ভারতে যেতে চাই না। যাঁরা এখানে এসেছিলেন, তাঁদের কারও বাড়ি দেবীগঞ্জে, কারও বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ে।’

পাশের চিরাকুটি এলাকার সুনীল চন্দ্র রায় (৬০) বলেন, ওই দিন যাঁরা ভারতে যাবেন বলে সীমান্তে জড়ো হয়েছিলেন, তাঁদের কেউ স্থানীয় নন। ফোনে ফোনে খবর পেয়ে কাঁটাতারের বেড়া না থাকায় তাঁরা এখানে এসেছিলেন। আর তাঁরা ঘটনা দেখতে সেখানে গিয়েছিলেন। যাঁরা এসেছিলেন, তাঁদের সঙ্গে পরিবারের লোকজন বা কোনো কাপড়চোপড় ছিল না। শুধু মানুষগুলোই এসেছিলেন।

কালীতলা-বনগ্রাম এলাকার জ্যোতি বসু রায় বলেন, ‘কিছু লোকজন বাইরে থেকে হিন্দু ধর্মের লোকজনকে সেখানে এনে গুজব ছড়াতে চেয়েছিলেন। আমাদের এলাকায় কোনো হিন্দুর বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেনি। এলাকার কেউ ভারতে যেতেও চাননি। সেখানে জড়ো হওয়া কোনো লোকের সঙ্গে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ছিল না। সেখানে জড়ো হওয়া বেশির ভাগ লোকই ছিলেন বাইরের।’

বিজিবির স্থানীয় বিওপির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ওই দিন ভারতে যাওয়ার কথা বলা ব্যক্তি ছিলেন সর্বোচ্চ ৩০ থেকে ৩৫ জন। বাকি লোক এসেছিলেন তাঁদের দেখতে। যাঁরা জড়ো হয়েছিলেন, তাঁদের ভারতে যাওয়ার মতো কারোরই কোনো প্রস্তুতি দেখা যায়নি। বিষয়টি নিয়ে বিএসএফের সঙ্গে কথা বললে তারা জানিয়েছিল, তারা কোনো অবস্থাতেই এভাবে কাউকে নেবে না। পরে বিজিবি তাদের সেখান থেকে চলে যেতে বলে।

কাজলদীঘি কালিয়াগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মোমিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে হিন্দু ধর্মের দুজন মানুষের বাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। দুজনই স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা। তবে তাঁরা ভারতে যেতে চাননি। ওই দিন সীমান্তে যাঁরা জড়ো হয়েছিলেন, তাঁরা সবাই আমার ইউনিয়নের বাইরের। পরে তাঁদের বোঝানোর পর মনে সাহস জুগিয়ে বিজিবির সহায়তায় বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়।’