অপরাধ
অপরাধ

চৌদ্দগ্রামে মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছনা, এলাকা ছাড়তে হুমকি

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পরিয়ে তাঁকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। গতকাল রোববার দুপুরে চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বাতিসা ইউনিয়নের কুলিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে। পরে রাতে এ ঘটনার ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।

ভুক্তভোগী ওই বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম আবদুল হাই ওরফে কানু (৭৮)। তিনি ঘটনাস্থলের পাশের লুদিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা। আবদুল হাই কৃষক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও একই সংগঠনের কুমিল্লা দক্ষিণ জেলার সাবেক সহসভাপতি। তাঁর পরিবারের অভিযোগ, লাঞ্ছিতকারীরা সবাই স্থানীয় জামায়াত-শিবিরের নেতা–কর্মী। আবদুল হাইকে এলাকা ছাড়ার জন্য হুমকি দেওয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গতকাল রাত সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘কিছুক্ষণ আগেই ওসি সাহেব আমাকে বিষয়টি জানিয়েছেন। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে এভাবে লাঞ্ছিত করার ঘটনা মেনে নেওয়ার মতো না। আমরা ঘটনাটির খোঁজখবর নিয়ে দেখছি। জামায়াত ও শিবিরের কোনো নেতা–কর্মী এই ঘটনায় জড়িত হয়ে থাকলে আমরা অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব।’

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের রাজনীতি করলেও আবদুল হাই ছিলেন নির্যাতনের শিকার। চৌদ্দগ্রামের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের পক্ষে রাজনীতি না করার কারণে গত প্রায় আট বছর এলাকাছাড়া ছিলেন তিনি। তাঁর বাড়িঘরে একাধিকবার হামলা চালিয়েছেন মজিবুলের লোকজন। সম্প্রতি তিনি বাড়িতে গিয়েছেন। গতকাল দুপুরে বাড়ি থেকে বের হওয়ার পরই তাঁকে আটক করেন একদল লোক। এরপর তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় কুলিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে। সেখানে তাঁর গলায় জুতার মালা পরিয়ে তাঁকে লাঞ্ছিত করা হয়। লাঞ্ছিতকারীরাই ঘটনাটির ভিডিও ধারণ করে ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়েছেন।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ১ মিনিট ৪৬ সেকেন্ডের ভিডিওতে দিয়ে দেখা যায়, দুজন ব্যক্তি জুতার মালা পরা অবস্থায় ওই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে টানাহেঁচড়া করছেন। তাঁকে লাঞ্ছিত করা ব্যক্তিদের একজনই পুরো ঘটনার ভিডিও করেছেন। এ সময় ওই বীর মুক্তিযোদ্ধা বারবার তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার আকুতি জানান।

এ ঘটনার পর আবদুল হাই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। বর্তমানে ফেনীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনি। গতকাল রাত সোয়া ১১টার দিকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি বলেন, ‘আমার বেশি কিছু বলার নেই। মানুষের স্বাধীনতার জন্য দেশ স্বাধীন করেছি, কিন্তু স্বাধীনতার সুফল আজও পাইনি। চৌদ্দগ্রামের সাবেক আওয়ামী লীগের এমপি মুজিবুল হকের অনিয়ম, অত্যাচার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলায় আট বছর বাড়িতে আসতে পারিনি। আমার বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছিল। বর্তমান সময়ে ভেবেছিলাম অন্তত বাড়িতে ঘুমাতে পারব। সেই আশা মনে হচ্ছে পূরণ হবে না। তাহলে কার জন্য দেশ স্বাধীন করেছিলাম? এভাবে জুতার মালা পরার জন্য অবশ্যই নয়।’  

ঘটনার পর থেকে চৌদ্দগ্রাম থানার ওসিকে অন্তত পাঁচবার কল করেছি। একবার তিনি কল ধরেছেন, কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেননি। এরপর আবারও কল করলে তিনি ধরেননি।
গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া, ভুক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধার ছেলে

আবদুল হাইয়ের ছেলে গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া বলেন, ‘হামলাকারীরা সকলেই স্থানীয় জামায়াত ও শিবিরের চিহ্নিত নেতা–কর্মী। তাঁরা ২০ জনের বেশি ছিলেন। তাঁদের মধ্যে নেতৃত্বে থাকা কয়েকজন হলেন কুলিয়ারা গ্রামের আবুল হাশেম, অহিদুর রহমান, পেয়ার আহমেদ, রাসেল, শহীদ, এমরান হোসেন, ফরহান হোসেন, কামরান হোসেন। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে এভাবে লাঞ্ছিত করা হলো, আমি বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে কার কাছে বিচার চাইব?’

গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া অভিযোগ করেন, ‘ঘটনার পর থেকে চৌদ্দগ্রাম থানার ওসিকে অন্তত পাঁচবার কল করেছি। একবার তিনি কল ধরেছেন, কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেননি। এরপর আবারও কল করলে তিনি ধরেননি। যে ওসি কলই ধরেন না, সেখানে আমরা কার কাছে আইনগত সহায়তা চাইব।’

এ বিষয়ে চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ টি এম আক্তার উজ জামান বলেন, ‘ভিডিওটি দেখে আমি ওই বীর মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে দুইবার কথা বলেছি। তিনি কোনো অভিযোগ করতে রাজি হচ্ছেন না। বলছেন, “অভিযোগ করলে আমি এলাকায় থাকতে পারব না, আপনাকেও ঝামেলায় ফেলতে চাই না।” তবে আমরা এ ঘটনা জড়িত ব্যক্তিদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করার চেষ্টা করছি। জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’