দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা বাদ দিলে সারা দেশে ভোটের পরিস্থিতি ভালো আছে বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আলমগীর। আজ মঙ্গলবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তার সম্মেলনকক্ষে মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, নির্বাচনে অনেক প্রার্থী আছেন। তাঁদের মধ্যে ভালো প্রতিযোগিতা হবে। দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা বাদ দিলে সারা বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা ও ভোটের পরিস্থিতি ভালো আছে। তিনি বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জসহ ১৫ নম্বর জেলা ঘুরে এসেছি। আজ কিশোরগঞ্জ থেকে নারায়ণগঞ্জে এসেছি। আসার পথে আইনশৃঙ্খলার অবনতি আছে এমন কোনো পরিস্থিতি কোথাও দেখিনি। নির্বাচন অত্যন্ত সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে হবে এবং জাতি উৎসবের সঙ্গে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে।’
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জে রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হকের সভাপতিত্বে পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল, ৬২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল খালেদ মাহমুদ, র্যাব-১১-এর কর্নেল তানভীর মাহমুদসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ইসি মো. আলমগীর বলেন, নির্বাচন আয়োজনের জন্য কয়েক লক্ষাধিক লোক মাঠে থাকবে। দু-একটি সন্ত্রাসী কাজ করে এত বড় একটি নির্বাচনকে ভন্ডুল করার সুযোগ নেই। দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ গোয়েন্দা সংস্থা তৎপর রয়েছে, তারা এ বিষয়ে দেখবে। নির্বাচন অত্যন্ত সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে হবে এবং জাতি উৎসবের সঙ্গে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। তেজগাঁওয়ে চলন্ত ট্রেনে আগুনে চারজনের প্রাণহানির ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।
ইসি মো. আলমগীর আরও বলেন, ‘উৎসবের নির্বাচন মানেই ভোটার উপস্থিতি। ভোটার উপস্থিতি হবে বলেই উৎসবের নির্বাচন হবে, শুধু প্রার্থী দিয়ে তো নির্বাচন হয় না। আমরা আশা করছি ভালো ভোটার উপস্থিতি হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর সব নির্বাচনে সকালে ব্যালট পেপার পাঠানো হয়েছে। আমরা এটার ভালো ফল পেয়েছি। অন্তত এ কথা কেউ বলার সুযোগ পাবে না যে আগের রাতে ভোট হয়েছে। এই অপরাধের সুযোগ যাতে না হয়, সুযোগ না থাকে, এটা যাতে সবার কাছে বিশ্বাসযোগ্য হয়, সে কারণে আমরা সকালে ব্যালট পেপার কেন্দ্রে পাঠাব। যেসব দুর্গম এলাকায় সকালে ব্যালট পাঠানো সম্ভব হবে না, সেখানে কেন রাতে ব্যালট পেপার পাঠানো হবে, সুনির্দিষ্ট কারণ ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট হলেই রাতে ব্যালট পেপার পাঠানো হবে।’
মো. আলমগীর আরও বলেন, ‘প্রভাবশালী প্রার্থীরা যাতে কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তার করতে না পারেন, সে জন্য কেন্দ্রের নিরাপত্তায় আমাদের পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেট আছে, র্যাব-বিজিবি আছে, তারা নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন। মাঠ সবার জন্য সমান। আইন সবার জন্য সমান। সব প্রার্থী সমানভাবে যাতে প্রচারণা চালাতে পারেন, সেটা নিশ্চিত করা হবে। তিনি বলেন, নির্বাচনের উৎসবমুখর পরিবেশ শুরু হয়ে গেছে। প্রার্থীরা বাড়ি বাড়ি যাবে, ভোটারদের উদ্বুদ্ধ করবেন। তাঁরা ভোটারদের কেন্দ্রে আনবেন।’
সেনাবাহিনীর দায়িত্বের বিষয়ে ইসি আলমগীর বলেন, তারা নির্বাচনে টহল দেওয়াসহ সবকিছুতেই থাকবে। জনগণের জানমাল, ভোটকেন্দ্র সবকিছুর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন। তিনি বলেন, ‘আপনারা বিনা দ্বিধায় ভোটকেন্দ্রে যাবেন। উৎসবের সঙ্গে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবেন। কারও কথায় প্ররোচিত হয়ে ভোট দেবেন না, আপনারা স্বাধীন চিন্তা অনুযায়ী ভোট দেবেন।’ তিনি বলেন, প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে প্রার্থীদের পোলিং এজেন্টদের উপস্থিতি সকালে নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিটি কেন্দ্রে পোলিং এজেন্টদের উপস্থিতিতে ফল ঘোষণা করতে হবে। তাঁদের স্বাক্ষর ছাড়া নির্বাচনের ফল ঘোষণা করা যাবে না। তিনি বলেন, যদি কোনো কেন্দ্র থেকে কোনো প্রার্থীর পোলিং এজেন্টকে বের করে দেওয়া হয়, তাহলে কঠিন ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নির্বাচন উপলক্ষে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে জোর দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, বৈধ অস্ত্র উইড্রো করা হলে আরও ঝামেলা হবে। এ কারণে বৈধ অস্ত্রধারীরা অস্ত্র প্রদর্শন করতে পারবেন না। এই নিয়মকানুন তিনি মেনে চলবেন। আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আছেন, তাঁরা দেখবেন।