শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দিন ‘খেলতে যাচ্ছি’ বলে বাসা থেকে বের হয় ১২ বছর বয়সী মাদ্রাসাছাত্র জোবায়েদ আহমেদ। এরপর আর ফেরেনি। সে পরিবারের সঙ্গে রাজধানীর উত্তরার ৮ নম্বর সেক্টরে থাকত। গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের নান্দাইলে।
ছেলের সন্ধানে ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন হাসপাতালের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন মা রাবেয়া খাতুন। আজ শনিবার মুঠোফোনে রাবেয়া খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার পুতরে (ছেলে) আপনারা ফিরিয়ে দেন। আমার পুতকে ছাড়া আমি বাঁচব না। আমার জীবনে আর কিছু চাই না। আমার পুতকে আমার কোলে ফিরে পেতে চাই। আমার একটা ছেলে আল্লাহ কেন নিয়ে নিল?’
রাবেয়া খাতুন বলেন, ৫ আগস্ট সকালে একসঙ্গে খাওয়াদাওয়ার পর তিনি একটু ঘুমান। বেলা ১১টার দিকে ছেলে তার বৃদ্ধ দাদিকে বাসার পাশে মাঠে খেলতে যাওয়ার নাম করে বের হয়ে যায়। এরপর আর ফিরে আসেনি। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ, কুর্মিটোলা হাসপাতালসহ অনেক হাসপাতালে ছেলেকে খুঁজেছেন। কিন্তু কোথাও সন্ধান পাননি।
রাবেয়া খাতুন আরও বলেন, ‘গণভবনে যাওয়ার আগের দিন উত্তরায় সংঘর্ষের সময় আমার ছেলে সেখানে গিয়েছিল। ওই দিন সন্ধ্যাবেলায় আমরা খোঁজাখুঁজি করে তাঁকে বাসায় নিয়ে আসি। আমরা তাকে থামাতাম, বলতাম তুমি ছোট মানুষ এসবে যাবে না। আমার ধারণা, ছেলে ৫ তারিখে আন্দোলনে গিয়েছিল। আমার সন্তানের সন্ধান চাই।’
শিশু জোবায়েদ পবিত্র কোরআনের ১৪ পারার হাফেজ। পড়াশোনা করে সে পাইলট হওয়ার স্বপ্ন দেখত। মা রাবেয়া খাতুন বলেন, ‘আমার ছেলেকে মাদ্রাসায় পড়াতাম। কিন্তু সে স্কুলে পড়তে চাইত। আমাকে বলত “আমি স্কুল-ভার্সিটিতে পড়ে অনেক বড় হব। পাইলট হব, মাদ্রাসায় পড়লে এসব হতে পারব না।” আমার ছেলের সব স্বপ্ন পূরণ করব, আমার কাছে ফিরিয়ে দেন।’
নিখোঁজ জোবায়েদের চাচা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের শিক্ষার্থী ফয়সাল আহমেদ বলেন, ‘৫ আগস্ট বাসা থেকে আমার ভাতিজা বের হয়। আর ফিরে আসেনি। আশপাশের মানুষ বলাবলি করছেন, আমার ভাতিজির মতো একটি ছেলের মাথায় ওই দিন গুলি লেগেছিল। এরপর ঢাকার বিভিন্ন মর্গে খুঁজেও আজ পর্যন্ত কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় তাঁর পরনে ছিল সাদা গেঞ্জি আর কালো প্যান্ট।’