সকাল থেকে ভারী বৃষ্টি আর সিএনজিচালিত অটোরিকশা মালিকদের ধর্মঘটের কারণে গাড়ি পেতে সমস্যা হয়েছে নগরবাসীর। আজ দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম নগরের প্রবর্তক মোড়ে
সকাল থেকে ভারী বৃষ্টি আর সিএনজিচালিত অটোরিকশা মালিকদের ধর্মঘটের কারণে গাড়ি পেতে সমস্যা হয়েছে নগরবাসীর। আজ দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম নগরের প্রবর্তক মোড়ে

চট্টগ্রাম নগরে তিন দিন ধরে বন্ধ সিএনজিচালিত অটোরিকশা, যাত্রীদের দুর্ভোগ

অফিস শুরুর প্রায় দেড় ঘণ্টা আগে ঘর থেকে বেরিয়েছেন বেসরকারি চাকরিজীবী মোহাম্মদ ফারহান। চট্টগ্রাম নগরের দেওয়ানহাট এলাকায় একটি ইলেকট্রনিকসামগ্রী বিক্রয়কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক তিনি। আজ বুধবার সকাল সাড়ে ৯টায় নগরের বহদ্দারহাট মোড়ে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মোহাম্মদ ফারহান বলেন, ‘দেড় ঘণ্টা আগে বের হয়েও গাড়ি পাচ্ছি না। বৃষ্টির কারণে গণপরিবহনে চাপ বেশি। এদিকে তিন দিন ধরে সড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশা নেই। খবরে শুনলাম, মালিকেরা ধর্মঘট ডেকেছেন। এতে অনেক অফিসগামী যাত্রী ভোগান্তিতে পড়েছেন।’

চট্টগ্রাম নগরে আজ তৃতীয় দিনের মতো সিএনজিচালিত অটোরিকশা বন্ধ। এর ফলে যাতায়াতে ভোগান্তিতে পড়ছে সাধারণ যাত্রীরা। সিএনজিচালিত অটোরিকশা না থাকায় এবং ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকায় অনেকে রিকশাও পাওয়া যাচ্ছে না সময়মতো। দূরের গন্তব্যে রিকাশায় যেতে যেমন সময় বেশি লেগেছে, তেমনি ভাড়াও গুনতে হচ্ছে দ্বিগুণ।

গত সোমবার নিজেদের ১০ দফা দাবি জানিয়ে মানববন্ধন করেন সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক ও শ্রমিকেরা। এদিন নগরে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল বন্ধ রাখেন তাঁরা। কয়েকটি স্থানে ব্যক্তিগত সিএনজি চলাচলেও বাধা দেওয়ার খবর পাওয়া যায়। এদিনের ঘটনায় সিএনজি ভাঙচুরের অভিযোগ এনে গতকাল মঙ্গলবার ও আজ সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল বন্ধের ঘোষণা দেয় মালিক সমিতি। গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে সাত দফা দাবি জানিয়ে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নগর এলাকায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা বন্ধ ঘোষণা করে চট্টগ্রাম মহানগরী অটোরিকশা (সিএনজি) মালিক সমিতি সমন্বয় পরিষদ। ৩টি আলাদা সমিতির অধীনে নগর এলাকায় প্রায় ১৩ হাজার সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল করে বলে জানা গেছে।

দুই পক্ষের যেসব দাবি

চালক ও শ্রমিকদের দাবিগুলোর অন্যতম ব্যাটারিচালিত রিকশা, লাইসেন্স, ডকুমেন্ট ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি চালানো বন্ধ করা। বিনা অপরাধে চালককে মামলা দেওয়া এবং চালককে নির্যাতন বন্ধ করা; সহজ শর্তে চালকদের লাইসেন্স প্রদান; অটোরিকশা ও টেম্পোর সর্বোচ্চ দৈনিক ভাড়া ও মামলার খরচ কমানো।

পাহাড়তলী সিএনজি অটোরিকশা চালক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. এরফান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা মালিক সমিতির সঙ্গে বৈঠকে বসতে চাইলেও তারা রাজি হচ্ছে না। আমরা থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছিলাম। আজ সকালে আমরা হালিশহর সেনানিবাসে স্মারকলিপি দিয়েছি।’

মালিক সমিতির সাত দফা দাবির মধ্যে রয়েছে, সোমবার ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা, নগরে গ্রাম সিএনজি (মফস্‌সলে চলচল করা সিএনজি) ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল বন্ধ করা, রাইড শেয়ারিংয়ের নির্দিষ্ট ইউনিফর্ম নির্ধারণ, মালিকদের দৈনিক জমা বর্তমান বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে গেজেট প্রকাশ করা ও গাড়ির মামলার জরিমানা সহনীয় করা।

চট্টগ্রাম মহানগরী অটোরিকশা (সিএনজি) মালিক সমিতি সমন্বয় পরিষদের প্রধান সমন্বয়ক হায়দার আজম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, মানববন্ধনের নামে কিছু বহিরাগত চালকদের ভেতরে ঢুকে ভাঙচুর চালিয়েছেন। তাই পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নগর এলাকায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা বন্ধ রাখা হয়েছে।

বিপাকে যাত্রীরা, গণপরিবহনে চাপ

সিএনজিচালিত অটোরিকশা বন্ধের কারণে যাতায়াতে কিছুটা ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ যাত্রীরা। তবে অন্যান্য গণপরিবহন চালু থাকায় সেগুলো ব্যবহার করছে তারা। জরুরি কাজে কিংবা দূরের গন্তব্যে পরিবারসহ যাতায়াতে নগরে সিএনজিচালিত অটোরিকশার ব্যবহার বেশি। এসব যাত্রীদের ভোগান্তি বেড়েছে।

আজ বেলা ১১টায় সরেজমিনে নগরের বহদ্দারহাট, মুরাদপুর ও চকবাজার এলাকায় দেখা গেছে, স্বাভাবিকের তুলনায় অতিরিক্ত যাত্রী অপেক্ষা করছে। এ ছাড়া বাস, টেম্পো কিংবা রিকশায় যাত্রীদের চাপ দেখা গেছে বেশি। বৃষ্টি থাকায় গণপরিবহনে চলাচলেও ভোগান্তি দেখা গেছে।

বেলা ১১টার দিকে নগরের চকবাজার এলাকার বাসিন্দা মো. আসিফ উদ্দিন বলেন, সাধারণত টেম্পোতে চলাচল করলেও জরুরি কাজের ক্ষেত্রে সিএনজি ব্যবহার করা হয়। আধা ঘণ্টার মধ্যে গন্তব্যে যেতে হবে, বাস-টেম্পোতে সেটি সম্ভব নয়।

নগরের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মাসুদ আহাম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, দুই পক্ষ তাদের দাবিগুলো নিয়ে এসেছিল। তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে চাইলে পুলিশ সহায়তা করবে। তবে সড়কে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা না করার জন্য বলা হয়েছে।