সন্তান প্রসব করে হাসপাতালেই এইচএসসি পরীক্ষা দিলেন জান্নাতুল

সন্তান জন্ম দেওয়ার পর হাসপাতালে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন জান্নাতুল ফেরদৌস। আজ শরীয়তপুর শহরের মেট্রো ক্লিনিকে
ছবি: প্রথম আলো

শরীয়তপুরের এক এইচএসসি পরীক্ষার্থী অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান প্রসবের পর হাসপাতালেই পরীক্ষা দিয়েছেন। জান্নাতুল ফেরদৌস নামের ওই পরীক্ষার্থী শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে গতকাল বুধবার সকালে একটি কন্যাসন্তান জন্ম দেন। আজ বৃহস্পতিবার ওই হাসপাতালের শয্যার পাশে বসে তিনি ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা দেন।

জান্নাতুল ফেরদৌস শরীয়তপুর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী। তাঁর পরীক্ষাকেন্দ্র ছিল শহরের সরকারি গোলাম হায়দার খান মহিলা কলেজ।

পরিবারের সদস্যরা জানান, গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে শরীয়তপুর সদর পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাশাভোগ এলাকার সাঈদ খানের সঙ্গে পারিবারিকভাবে জান্নাতুলের বিয়ে হয়। এর মধ্যে তিনি সন্তানসম্ভবা হন। এইচএসসি পরীক্ষার মধ্যেই তাঁর প্রত্যাশিত প্রসবের দিনক্ষণ (ইডিডি) এগিয়ে আসছিল। গত মঙ্গলবার ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি প্রথম পত্রের পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফেরার পর জান্নাতুলের প্রসব বেদনা ওঠে। রাতে স্বজনেরা তাঁকে শহরের মেট্রো ক্লিনিকে ভর্তি করেন। বুধবার সকালে সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জান্নাতুল একটি কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। এদিন তাঁর কোনো পরীক্ষা ছিল না। আজ ছিল ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা। এমন পরিস্থিতিতে কীভাবে পরীক্ষায় দেবেন, তা নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েন। তখন তাঁর স্বজনেরা বিষয়টি লিখিতভাবে জেলা প্রশাসককে জানান। জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নিজাম উদ্দীন আহাম্মেদ হাসপাতালের শয্যায় পরীক্ষা নেওয়ার উদ্যোগ নিতে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) নির্দেশ দেন।

আমার ভাইয়ের স্ত্রীর পড়ালেখা করার অদম্য ইচ্ছাশক্তি আছে। তার এমন মনোবল দেখে আমরা অভিভূত। সে যদি পড়ালেখা চালিয়ে যেতে চায়, তাহলে আমাদের পরিবার সব সময় তার পাশে থাকবে।
মাহিন খান, জান্নাতুলের ননদ

আজ মেট্রো ক্লিনিকের গাইনি ওয়ার্ডের একটি কক্ষে উপজেলা প্রশাসন ওই ছাত্রীর পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করে। সকাল ১০টার সময় পরীক্ষা শুরু হয়। চলে দুপুর একটা পর্যন্ত। এই সময়টুকু নবজাতক জান্নাতুলের মা শাহিদা আক্তারের কাছে ছিল।

জান্নাতুল যতক্ষণ পরীক্ষা দেন, ততক্ষণ তাঁর নবজাতক কন্যা মা শাহিদা আক্তারের কাছে ছিল। আজ শরীয়তপুর শহরের মেট্রো ক্লিনিকে

শাহিদা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা গ্রামে বসবাস করি। সামাজিক নানা বাস্তবতার কারণে অল্প বয়সে মেয়েকে বিয়ে দিতে হয়েছিল। বিয়ের পরও সে পড়ালেখা ছাড়েনি। সন্তান জন্ম দেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মাথায় আবার পরীক্ষায় বসেছে।’

জান্নাতুলের ননদ মাহিন খান বলেন, ‘আমার ভাইয়ের স্ত্রীর পড়ালেখা করার অদম্য ইচ্ছাশক্তি আছে। তার এমন মনোবল দেখে আমরা অভিভূত। সে যদি পড়ালেখা চালিয়ে যেতে চায়, তাহলে আমাদের পরিবার সব সময় তার পাশে থাকবে।’

মেট্রো ক্লিনিকের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) জয়ন্ত কুমার কর্মকার জানান, নবজাত কন্যা ও জান্নাতুল সুস্থ আছেন। তিন-চার দিনের মধ্যেই তাঁরা বাড়ি ফিরতে পারবেন।

শরীয়তপুর সদরের ইউএনও জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র প্রথম আলোকে বলেন, ‘এক এইচএসসি পরীক্ষার্থী সন্তান প্রসব করার পরেই পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা জানিয়ে আবেদন করেন। চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে ও পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে হাসপাতালে ওই পরীক্ষার্থীর জন্য পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ওই পরীক্ষার্থী যে কয়দিন হাসপাতালে থাকবেন, সেখান থেকেই পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন। আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা রেখেছি।’