কুমিল্লার লালমাই পাহাড়ের টিলার পতিত জায়গায় শখের বশে আম চাষ শুরু করেছিলেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা এ আর এম হারিসুর রহমান। পাহাড়ের মাটিতে আম হবে কি না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন শুরু থেকেই। তবে তাঁর সেই দুশ্চিন্তা কেটে গেছে। শখের বসে করা হারিসুর রহমানের বাগান পেয়েছে বাণিজ্যিক রূপ।
কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার বারপাড়া ইউনিয়নের বারপাড়া গ্রামে দুই একর জায়গায় গড়ে উঠেছে এই আমবাগান। বারি-৪ জাতের প্রতিটি গাছেই ধরেছে আম। আম চাষে এ সাফল্য দেখে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, লালমাই পাহাড়ের পতিত জায়গায় আম চাষে অপার সম্ভাবনা রয়েছে। অত্যন্ত সুস্বাদু, মিষ্টি এই আম কাঁচা ও পাকা দুইভাবে খাওয়া যায়।
গত রোববার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাগানের প্রতিটি গাছে ধরে আছে ছোট-বড় নানা আকারের আম। বাগানের কর্মীরা পোকা ধরেছে কি না, সেটি পর্যবেক্ষণ করছেন। পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথ মাড়িয়ে টিলার ওপর এই আমবাগান দেখতে নানা বয়সী মানুষ আসছেন।
২০১৫ সালে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের পরিচালক (অর্থ) পদ থেকে অবসরে যান এ আর এম হারিসুর রহমান। এরপর ঢাকাতেই থিতু হন। জনহিতকর কাজের জন্য মাঝেমধ্যে এলাকায় যাতায়াত করার সময় কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ হয়। কুমিল্লার কৃষি বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও মাঠপর্যায়ের কর্মীরা আমবাগান করার প্রস্তাব দেন।
হারিসুর বলেন, ‘তাঁদের এ প্রস্তাবে আমি প্রথমে সায় দিইনি। কারণ, আমি এলাকায় থাকি না। আমের চারা রোপণের পর এগুলোর পরিচর্যা করতে হবে। লালমাই পাহাড়ের মাটি আম চাষের জন্য উপযোগী কি না। এত খরচ করে কেমন ফলন হবে? তবু কৃষি বিভাগের লোকেরা আমার পিছু ছাড়েননি।’
একপর্যায়ে রাজি হন হারিসুর। ২০১৬ সালের মে মাসে কৃষি বিভাগ থেকে বিনা মূল্যে বারি-৪ জাতের আমের চারা পান তিনি। সেগুলো দিয়ে লালমাই পাহাড়ের বড় ধর্মপুর মৌজার বারপাড়া এলাকায় পাহাড়ি টিলার দুই একর পতিত জমিতে আমবাগান গড়ে তোলেন। খরচ হয় প্রায় তিন লাখ টাকা। ২০১৭ সালে আমগাছে মুকুল আসে। ২০১৮ সালে আম ধরা শুরু হয়। প্রথম বছর ৫০ মণ আম পাওয়া গেছে। পরের বছর থেকে ১০০ মণ আমের ফলন হচ্ছে। ২৫০টি গাছে এবার আম ১০০ মণ ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করছেন তিনি।
হারিসুর রহমান বলেন, ‘আগে শখের বশে করেছি। এখন এটি বাণিজ্যিকভাবে হয়ে গেছে। কৃষি বিভাগের মাঠকর্মীরা প্রতিনিয়ত বাগানে আসেন। তাঁরা গাছের পরিচর্যা করেন। আমার তিনজন কর্মী তাঁদের নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করেন। রাতে একজন কর্মী আমবাগান পাহারা দেন। এখন বাগানে গেলে প্রাণ জুড়িয়ে যায়।’
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ আইনুল হক বলেন, লালমাই পাহাড়ে কচুমুখী, কাসাভার পর গত কয়েক বছরে চা ও আম চাষ হচ্ছে। এখানকার মাটি ভালো। নানা ধরনের ফল ও সবজি চাষ হলে এই পাহাড়, টিলা রক্ষা পাবে। প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় থাকবে।
কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা এম এম শাহরিয়ার ভূঁইয়া বলেন, কৃষি বিভাগ এই আমবাগানের জন্য সর্বোচ্চ সহযোগিতা করে যাচ্ছে। এই আম অত্যন্ত মিষ্টি। এটি কাঁচা ও পাকা দুইভাবে খাওয়া যায়। লালমাই পাহাড়ে আম চাষের অপার সম্ভাবনা আছে।