ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের সদ্য পদত্যাগকারী সংসদ সদস্য আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার উপনির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রসঙ্গে সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা বলেছেন, ‘তাঁর ওপর সরকারের একটা প্রচণ্ড চাপ আছে। সরকার আমাদের পদত্যাগকে বিতর্কিত করতে চেয়েছে। সরকার সফল হয়েছে। আবদুস সাত্তার ভূঁইয়াকে চাপ দিয়ে নির্বাচনে আনা হয়েছে।’
আজ শনিবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের পুনিয়াউট এলাকায় বিএনপির ১০ দফা দাবি ও রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের রূপরেখা বিষয়ে আলোচনা সভায় রুমিন ফারহানা এ কথা বলেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের মঞ্চ ভেঙে পড়াকে ইঙ্গিত করে রুমিন ফারহানা বলেন, ‘কাল তো দেখেছেন সবাই, স্মার্ট বাংলাদেশ কীভাবে ধসে পড়েছে। রাস্তাঘাটের অবস্থা খুবই খারাপ। তাই আসার সময় গাড়ি আস্তে চালাতে বলেছিলাম।’ রুমিন আরও বলেন, ‘আপনারা জানেন, কিছুদিন আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতে যে ঘটনা ঘটেছে, তা অত্যন্ত লজ্জাজনক। আওয়ামী লীগের উপজেলা সাধারণ সম্পাদক বারের সভাপতি গিয়ে যেভাবে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছেন একজন জজ সাহেবকে, তা আদালতে চলতে পারে না।’
যত দিন পর্যন্ত বাংলাদেশ দলীয় সরকারের অধীনে একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন না হবে, তত দিন পর্যন্ত বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা থাকবে।রুমিন ফারহানা
রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের রূপরেখা বিষয়ে রুমিন ফারহানা বলেন, ‘বিএনপি যদি জনগণের ভোটে রাষ্ট্রক্ষমতার দায়িত্ব পায়, তাহলে বিএনপি কী ধরনের রাষ্ট্র দেখতে চায়, তার একটি রূপরেখা আমাদের ২৭ দফা দাবিতে দেওয়া হয়েছে। এর আগে আমরা বর্তমান দলীয় কর্মসূচি হিসেবে ১০ দফা দিয়েছি। ২৭ দফার শুরুতেই আমরা বলেছি, আমরা সংবিধান সংস্কার কমিটি করব। কেন সংবিধান সংস্কার কমিটির কথা আসছে, আসছে এই কারণে, আওয়ামী লীগ গত ১৫ বছর বিনা ভোটে ক্ষমতায় থেকে সংবিধানকে কাটাছেঁড়া করে তাদের একটা দলীয় বইয়ে পরিণত করেছে। যদি ভবিষ্যৎ সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকে কোনো দলের, যা ২০০১ সালে বিএনপির ছিল, তাহলে তারা সংবিধান পরিবর্তন করতে পারে দেশ ও মানুষের কল্যাণে। সেটাকে বন্ধ করার কোনো এখতিয়ার আওয়ামী লীগের নেই।’
রুমিন বলেন, ‘আমরা একই সঙ্গে নির্বাচনকালীন একটি দল নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা বলছি। অনেকে আমাকে প্রশ্ন করেন, আমরা কতবার তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাখব? আমরা কি কোনো দিন দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে পারব না? আমার উত্তর খুব পরিষ্কার। যত দিন পর্যন্ত বাংলাদেশ দলীয় সরকারের অধীনে একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন না হবে, তত দিন পর্যন্ত বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা থাকবে। মানুষকে তার ভোট দিতে দিতে হবে। মানুষকে তার পছন্দের প্রতিনিধি নির্বাচন করার শক্তি দিতে হবে। আমাদের সংবিধান মানুষকে এই ক্ষমতা দিয়েছে। আমাদের সংবিধান অনুযায়ী দেশের মালিক হচ্ছে দেশের মানুষ।’
রুমিন ফারহানা বলেন, ‘গত ১৫ আমরা দেখেছি, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের-বিপক্ষের শক্তি, স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষের শক্তি ইত্যাদি ইত্যাদি শব্দ দিয়ে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ—যেগুলোর কোনো অস্তিত্ব বাংলাদেশে নেই, এগুলো তারা নিয়ে এসে সেই ভিত্তিতে জাতিকে তারা দুই ভাগে বিভক্ত করেছে। আমরা এই বিভক্ত জাতিকে আবারও ঐক্যবদ্ধ করব।’ তিনি বলেন, বিএনপি কোনো ক্ষমতাপাগল দল নয়। জনগণ ভোট দিলে বিএনপি থাকবে, ভোট না দিলে বিএনপি চলে যাবে। যা গন্ডগোল, সেটা করে আওয়ামী লীগ। যেকোনোভাবে ক্ষমতায় থাকতে হবে, ক্ষমতায় গেলে আর কোনোভাবে নামা যাবে না, এগুলো আওয়ামী লীগের নীতি। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫-এ তারা এমন করেছে।