মুন্সিগঞ্জে টাকার বিনিময়ে হত্যা মামলায় স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকে আসামি করার অভিযোগ

মামলা দিয়ে হয়রানি করার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন ও বিক্ষোভ করেন স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা ও তাঁর পরিবারের স্বজনেরা। সোমবার বিকেলে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার রসুলপুর খেয়াঘাটে
ছবি: প্রথম আলো

মুন্সিগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে হত্যার ঘটনায় থানায় দুটি মামলা করা হয়েছে। এ দুটি মামলায় গজারিয়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ আলম মোল্লাসহ তাঁর পরিবারের ছয়জনকে আসামি করা হয়েছে। এর প্রতিবাদ জানিয়ে শাহ আলম সোমবার একটি সংবাদ সম্মেলন করেছেন।

সোমবার বিকেলে উপজেলার ইমামপুর ইউনিয়নের রসুলপুর খেয়াঘাট এলাকায় এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়। শাহ আলমের অভিযোগ, দুটি মামলায় নিহত ব্যক্তির স্বজনেরা বাদী হলেও মামলার নিয়ন্ত্রণে ছিলেন বিএনপি ও তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতারা। ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও টাকার বিনিময়ে এসব নাম মামলায় ঢুকিয়ে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সহসভাপতি ও ইমামপুরের বাসিন্দা মো. মজিবুর রহমান।

সংবাদ সম্মেলনে শাহ আলম বলেন, তাঁরা একসময় যুবদল নেতা মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে রাজনীতি করতেন। ২০২০ সালের মে মাসে মুজিবুর রহমান ও তাঁর সহযোগীরা পরিকল্পিতভাবে আমার ছোট ভাই বি আলম মোল্লাকে কুপিয়ে হত্যা করে। মজিবুরকে হত্যা মামলার আসামি করায় তিনি তাঁর পরিবারের ওপর ক্ষুব্ধ হন। গত ৪ আগস্ট তাঁদের গ্রাম থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে মুন্সিগঞ্জ শহরে ছাত্র–জনতার আন্দোলন হয়। সে আন্দোলনে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের হামলায় শহরের উত্তর ইসলামপুর এলাকার মো. সজল মোল্লা, রিয়াজুল ফরাজী, নুর মোহাম্মাদ গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়।

এ ঘটনায় রিয়াজুল ফরাজী, নুর মোহাম্মাদের স্বজনেরা বাদী হয়ে দুটি আলাদা হত্যা মামলা করেন। সে ঘটনায় তাঁদের পরিবারের কেউ সম্পৃক্ত নয়। তার পরও মামলায় তাঁকে, তাঁর মাদ্রাসাপড়ুয়া ছেলে, ভাই ও উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ঈমন আহমেদ সবুজ মোল্লা, আরেক ভাই দর্পণ মোল্লা ও তাঁর ছেলেসহ ছয়জনকে আসামি করা হয়েছে। অথচ তাঁদের এ ঘটনায় কোনো সম্পৃক্ততা নেই। পরে বিভিন্নভাবে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, মুজিবুর রহমান জেলা বিএনপির কয়েকজন নেতাকে বুঝিয়ে তাঁদের নামগুলো মামলায় ঢুকিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে ঈমন আহমেদ সবুজ মোল্লা বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শুরু থেকে রাজধানীর ঢাকায় ছাত্র-জনতার সঙ্গে মাঠে ছিলাম। পুলিশের পিটুনিতে আহত হয়েছিলাম। অথচ আমাকে ও আমার পরিবারকে ছাত্র–জনতা হত্যার আসামি বানিয়ে ফেলেছে। আমরা তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।’

অভিযোগের বিষয়ে যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহসভাপতি মজিবুর রহমান বলেন, যার যার ইউনিয়ন বিএনপির নেতারা এসব নাম দিয়েছেন।

মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে টঙ্গিবাড়ী উপজেলার কামারখাড়া এলাকায় ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়

মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ

এদিকে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে সোমবার সকাল ১০টার দিকে মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার কামারখাড়া এলাকায় স্বর্ণগ্রাম রাধানাথ উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার ব্যানারে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়।

আন্দোলনকারীরা বলেন, ৪ আগস্ট মুন্সিগঞ্জ শহরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে মৃত্যুর ঘটনায় জড়িত অনেক ব্যক্তির এজাহারে রাখা হয়নি। আবার অসংখ্য নিরপরাধ ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে এবং সাধারণ জনগণের কাছে আন্দোলনকারীদের সুনাম ক্ষুণ্ন করতে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে বিএনপির অসাধু নেতারা নিরপরাধ ব্যক্তিদের হত্যা মামলায় ফাঁসাচ্ছে।

এ বিষয়ে দলটির মুন্সিগঞ্জ জেলার সদস্যসচিব মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘মামলার কারা আসামি হবে, কারা হবে না, এসব বিষয় নিয়ে জেলার কোনো নেতা আমার সঙ্গে কথা বলিনি। যারা নিরপরাধ ব্যক্তিদের মামলায় আসামি করেছে, সেগুলো আপনারা তদন্ত করে দেখুন। আমি বিষয়টি আমার কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে জানাব। যারা এমন হীন কাজ করেছে, কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে ওই সব নেতার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করব।’

মুন্সিগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শামসুল আলম তালুকদার বলেন, নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের পক্ষ থেকে বাদী হয়ে মামলা দুটি করা হয়েছে। মামলা দুটি নিয়ে তদন্ত করা হবে। প্রকৃতপক্ষে যারা অপরাধী, তাঁরাই আসামি হিসেবে থাকবেন।