চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে মিজানুর রহমান (৫০) নামের এক বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার রাতে ভারতের নোনাগঞ্জ সীমান্তের ভারতীয় অংশে এ ঘটনা ঘটে। ওই এলাকা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের নদীয়া জেলার কৃষ্ণগঞ্জ থানার ভেতরে পড়েছে।
আজ শনিবার বিকেলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে মিজানুর রহমানের রক্তাক্ত মৃতদেহের ছবি ছড়িয়ে পড়ে। তাতে বিএসএফের গুলিতে মৃত্যুর বিষয়টি বলা হয়। ছবি দেখে তাঁর স্ত্রী নাসিমা খাতুন লাশটি তাঁর স্বামীর বলে শনাক্ত করেছেন।
মিজানুর রহমান ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামের নবীছদ্দী মণ্ডলের ছেলে। তিনি জীবননগরের সীমান্ত ইউনিয়নের বেনীপুর গ্রামের আয়ুব আলীর মেয়ে নাসিমা খাতুনকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর তিনি শ্বশুরবাড়ি এলাকায় আসাদ মেম্বারের জমিতে পাটকাঠি ও টিনের ঘর তুলে চার বছর ধরে বসবাস করছিলেন। মিজানুর-নাসিমা দম্পতির চার বছর বয়সী একটি মেয়ে আছে।
এদিকে ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকায় আজ সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, সীমান্তের নদীয়ায় কৃষ্ণগঞ্জ থানার নোনাগঞ্জ সীমান্তচৌকি এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া কাটার অভিযোগে এক অনুপ্রবেশকারীকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে বিএসএফ। বিএসএফ জওয়ানের ছোড়া গুলিতে জখম হন ওই অনুপ্রবেশকারী। তাঁকে উদ্ধার করে কৃষ্ণগঞ্জ গ্রামীণ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানকার চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃতের নাম–পরিচয় জানা যায়নি। কৃষ্ণগঞ্জ থানার পুলিশ মরদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে।
ওই সংবাদে বিএসএফের দক্ষিণ বঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের ডিআইজি এ কে আর্যের বরাত দিয়ে ঘটনাটি নিশ্চিত করা হয়েছে।
আজ বিকেলে বেনীপুর গ্রামের বাড়িতে গিয়ে কথা হয় নাসিমার সঙ্গে। নাসিমা প্রথম আলোকে জানান, গত বুধবার রাতে এলাকার চিহ্নিত তিন ‘ধুর’ (চোরাপথে দুই দেশের মধ্যে মানুষ পারাপারের কারবার) পাচারকারী ফারুক, বাদল ও জীবন বাড়িতে এসে তাঁর স্বামী মিজানুরকে ডেকে নিয়ে যান। ভারতে ছয়জনকে পারাপারের জন্য শ্রমিক হিসেবে ডেকে নিয়ে যান। ওই তিনজন বৃহস্পতিবার ভারত থেকে ফিরে আসেন এবং নাসিমার হাতে দুই হাজার টাকা তুলে দেন। নাসিমা স্বামীর খোঁজ জানতে চাইলে ফারুক জানান, মিজানুর ভারতে আটকা পড়েছেন। আসতে কয়েক দিন দেরি হবে। কিন্তু শুক্রবার রাতে সীমান্ত এলাকায় মুখে মুখে খবর ছড়িয়ে পড়ে, মিজানুরকে বিএসএফ গুলি করে হত্যা করেছে।
সীমান্ত ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ইশাবুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, মিজানুর রহমান এর আগে ভারতীয় গরুর ব্যবসা করতেন। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি অবৈধভাবে মানুষ পারাপারের কাজ করে আসছিলেন। বুধবার রাতে মিজানুর ও তাঁর সহযোগীরা কয়েকজনকে নিয়ে অবৈধভাবে পশ্চিমবঙ্গের কৃষ্ণগঞ্জ থানার নোনাগঞ্জ সীমান্তে যান। ফেরার সময় বিএসএফ সদস্যরা তাঁদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান মিজানুর। তাঁর সহযোগীরা পালিয়ে যান।
জীবননগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম জাবীদ হাসান মিজানুর নিখোঁজের বিষয়ে অভিযোগ পাওয়ার কথা নিশ্চিত করে জানান, মিজানুর রহমানের স্ত্রী থানা-পুলিশকে মৌখিকভাবে জানিয়েছিলেন, তিন দিন ধরে তাঁর স্বামীকে পাওয়া যাচ্ছে না।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ৫৮ ব্যাটালিয়নের পরিচালককে ফোন করলে তিনি ধরেননি। খুদে বার্তা পাঠালেও উত্তর পাওয়া যায়নি।