লিবিয়ায় পাচার হওয়া যশোরের সৈয়দ আবদুস সালাম (৪২) পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) সহায়তায় দেশে ফিরেছেন। তিনি আজ রোববার আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। সৈয়দ আবদুস সালাম যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার খলসী গ্রামের সৈয়দ তোজাম্মেল হোসেনের ছেলে। লিবিয়ায় তাঁকে আটকে রেখে পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করেন পাচারকারীরা।
পিবিআই সূত্র জানায়, সৈয়দ আবদুস সালাম একজন কৃষক। পারিবারিক সচ্ছলতার জন্য তিনি বিদেশ যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁর প্রতিবেশী নওয়াব আলী তাঁকে রোমানিয়ায় পাঠাতে পারবেন বলে জানান। এরপর সালাম পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে রোমানিয়ায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। পরে নওয়াব আলী তাঁকে রোমানিয়ার পরিবর্তে ইতালি পাঠানোর কথা বলেন। সে অনুযায়ী নওয়াব আলীর সঙ্গে সালামের চার লাখ টাকায় চুক্তি হয়। চুক্তির টাকা পেয়ে নওয়াব আলী তাঁকে ২০২৩ সালের ২২ মার্চ হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে দুবাই নিয়ে যান। সেখানে দুই দিন অবস্থান করার পর তিনি তাঁকে মিসরে নিয়ে যান। মিসরে পাঁচ ঘণ্টা বিরতির পর তাঁকে লিবিয়ায় নিয়ে একটি বাসার ভেতর আটক রাখেন নওয়াব আলী। সেখান থেকে ২০–২২ দিন পর নওয়াব আলী তাঁকে ইতালি পাঠানোর জন্য অপরিচিত কিছু লোকের কাছে পাঠান। ওই লোকেরা সালামকে নাদিম ও হাসান নামের দুই ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। সালাম তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এরপর তাঁরা তাঁকে একটি অজ্ঞাত স্থানে আটক করে রাখেন। সেখানে মুক্তিপণ আদায়ের জন্য সালামের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতে থাকেন। এরপর তাঁরা সালামের পরিবারের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় ১৫ লাখ টাকা আদায় করেন। সালামের পরিবারের লোকজন বুঝতে পারেন তিনি কোনো মানব পাচার চক্রের হাতে জিম্মি হয়ে আছেন। তাঁকে উদ্ধারের জন্য তাঁর স্ত্রী গত ২ মে মানব পাচার আইনে আদালতে মামলা করেন।
আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআই যশোরকে নির্দেশ দেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআইয়ের (যশোর) পরিদর্শক মীর রেজাউল হোসেন বিদেশে থাকা মানব পাচারকারী চক্রের সদস্য আসামি নওয়াব আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। নওয়াব আলী ভিডিও কলের মাধ্যমে সৈয়দ আবদুস সালামের সঙ্গে তদন্তকারী কর্মকর্তার কথা বলিয়ে দেন। এরপর নওয়াব আলী লিবিয়া থেকে সালামকে দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। ১৩ সেপ্টেম্বর তিনি দেশে ফিরে আসেন।
পিবিআই (যশোর) পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন বলেন, আজ আদালতে সৈয়দ আবদুস সালাম ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের জন্য চেষ্টা চলছে।