বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের তিন কর্মীর ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রইস আহম্মেদ ওরফে মান্নার নেতৃত্বে এ হামলা হয়েছে। এ ঘটনায় গতকাল রোববার দিবাগত মধ্যরাতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে রইস, তাঁর সহযোগীসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। রইস বরিশাল সিটির বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত।
গতকাল সন্ধ্যায় নগরের কাউনিয়া বাঁশবাজার এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে। এতে আহত হয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহর তিন কর্মী মনা আহম্মেদ, আবদুল হালিম ও মো. জাহিদ। তাঁদের বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
গতকাল রাত সাড়ে ১১টার দিকে আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ আহত ব্যক্তিদের দেখতে হাসপাতালে যান। এ সময় তিনি এই সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানান এবং এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।
হামলার ঘটনায় নগরের কাউনিয়া থানার পুলিশ যাঁদের গ্রেপ্তার করেছে, তাঁদের মধ্যে রইস আহম্মেদ ছাড়াও আছেন তাঁর ভাই নাদিম আহমেদ, সহযোগী কাশিপুর এলাকার পারভেজ হাওলাদার, বঙ্গবন্ধু কলোনি এলাকার শান্ত ইসলাম, কাউনিয়া এলাকার মেহেদী হাসান, মিজানুর রহমান ওরফে শাওন, মামুন হাওলাদার, রাশেদ হাওলাদার, আল আমিন হাওলাদার ও মো. নান্টু।
কাউনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে আজ সোমবার সকালে প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনায় রাতেই আহত মনা আহম্মেদ বাদী হয়ে কাউনিয়া থানায় একটি মামলা করেছেন। ওই মামলায় রইসসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি বলেন, ২১ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ৪০ থেকে ৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলাটি হয়েছে।
তবে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে গতকাল রাতে প্রথম আলোর কাছে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেন রইস আহম্মেদ। তিনি বলেন, ‘সাদিক ভাই (সাদিক আবদুল্লাহ) যাতে বরিশালে আসতে না পারেন, এ জন্য এ মামলা করা হয়েছে।’
হামলায় আহত মনা আহম্মেদের ছেলে ইরফান বলেন, গতকাল সন্ধ্যায় তাঁর বাবাসহ কয়েকজন নগরের সদর রোডে নৌকা প্রতীকের প্রধান কার্যালয়ের যাওয়ার জন্য মহাশ্মশান এলাকার বাঁশবাজারের সামনে রিকশার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এ সময় মহানগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রইস আহম্মেদের নেতৃত্বে অর্ধশত যুবক তাঁদের ওপর হামলা চালান। তাঁরা রড দিয়ে পিটিয়ে তাঁর বাবার মাথা ফাটিয়ে দিয়েছেন। অপর দুজনকে রড দিয়ে বেধড়ক পেটানো হয়েছে।
সাদিক ভাই (সাদিক আবদুল্লাহ) যাতে বরিশালে আসতে না পারেন, এ জন্য এ মামলা করা হয়েছে।গ্রেপ্তার ছাত্রলীগ নেতা রইস আহম্মেদ
গতকাল রাত সাড়ে ১১টার দিকে আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ আহত ব্যক্তিদের দেখতে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। এ সময় তিনি এই সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানান এবং এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।
এর আগে ৬ মে আবুল খায়ের আবদুল্লাহর পক্ষে গণসংযোগ চালানোয় তাঁর কয়েক কর্মীকে অস্ত্র ঠেকিয়ে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায় মহানগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রইস আহম্মেদ ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় নিরাপত্তা চেয়ে বরিশাল নগরের কাউনিয়া থানায় ৭ মে রাতে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন ভুক্তভোগী মো. সোহাগ নামের স্থানীয় এক ছাত্রলীগ কর্মী। জিডিতে রইস আহম্মেদসহ ১৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছিল এবং ঘটনার সঙ্গে আরও ২০ থেকে ২৫ জন জড়িত থাকার কথা বলা হয়েছিল।
জিডিতে ছাত্রলীগ কর্মী মো. সোহাগ অভিযোগ করেছিলেন, সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহর পক্ষে নগরের ২ নম্বর ওয়ার্ডসহ কাউনিয়া এলাকায় কেউ প্রকাশ্যে কাজ করতে সাহস পাচ্ছে না। ৫ মে বিকেলে তিনি তাঁর সহযোগীদের নিয়ে প্রথম জানুকি সিংহ রোড এলাকায় প্রকাশ্যে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে গণসংযোগ শুরু করেন। এতে মহানগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রইস আহম্মেদ ক্ষুব্ধ হন। এরপর ৬ মে রাতে সাংগঠনিক কাজ শেষ করে সহযোগী সজীবুর রহমান ও সোহেল হাওলাদারকে নিয়ে বাসায় ফেরার সময় স্থানীয় ভূঁইয়া বাড়ির কাছে পৌঁছালে রইস আহম্মেদের নেতৃত্বে পরিচিত ১৭ জন ও অজ্ঞাতনামা আরও ২০ থেকে ২৫ জন এসে তাঁদের ঘিরে ধরেন। তাঁরা সোহাগের ঘাড়ের ওপর রামদা ধরেন এবং সজীবুর রহমান ও সোহেল হাওলাদারকে পিস্তল ঠেকিয়ে জীবননাশের হুমকি দেন বলে জিডিতে উল্লেখ করা হয়।
২০২২ সালের ২৩ জুলাই বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের ৩২ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেন ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি আল নাহিয়ান খান ও লেখক ভট্টাচার্য। এতে আহ্বায়ক করা হয় রইস আহম্মেদকে। কমিটি তিন মাসের জন্য অনুমোদন দেওয়া হলেও সেটি এখনো বহাল। কমিটি ঘোষণার পর বরিশালে ছাত্রলীগের বঞ্চিত নেতা-কর্মীরা শহরে ব্যাপক বিক্ষোভ করে কমিটি বাতিলের দাবি তুলেছিলেন।