ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় আকস্মিক ঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ে কয়েক শ ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে ৪০টির বেশি বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়েছে। ১০–১২ মিনিট স্থায়ী হওয়া এ ঝড়ে ঘরচাপায় এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া আতঙ্কে এক নারী ও ঝড়বৃষ্টির জমে থাকা পানিতে ডুবে এক শিশুর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা লোকজন জানান, আজ ভোর পাঁচটার দিকে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় বৃষ্টির সঙ্গে হঠাৎ ঝড় শুরু হয়। ঝড়ে উপজেলার বড়বাড়ি, পাড়িয়া, দুওসুও এবং আমজানখোর ইউনিয়নের ২০টি গ্রামে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে তিন শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। গাছপালা উপড়ে পড়ার পাশাপাশি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফছানা কাওছার প্রথম আলোকে বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনের পর তাঁরা ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে কাজ করছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন বলেন, আকস্মিক ঝড়ে ধান, ভুট্টা, মরিচসহ আম-লিচুর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ এখনই নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। ক্ষতি নিরূপণে মাঠপর্যায়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা খোঁজখবর নিচ্ছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঝড়ের সময় উপজেলার পাড়িয়া ইউনিয়নের শালডাঙ্গা গ্রামের পইনুল ইসলামের স্ত্রী ফরিদা বেগমের (৪০) ঘরের চালা ভেঙে পড়ে। স্বজনেরা পরে তাঁকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। একই গ্রামের দবিরুল ইসলামের স্ত্রী জাহেদা বেগম (৫০) ঝড়ের আতঙ্কে অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন।
এ ছাড়া দুওসুও ইউনিয়নের লালাপুর নয়াপাড়া গ্রামের নাজমুল ইসলামের আড়াই বছরের ছেলে মো. নাইম ঝড়বৃষ্টির জমে থাকা পানিতে ডুবে মারা গেছে। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মৃত্যুর বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ঝড়ে পাড়িয়া ইউনিয়নের তিলকড়া, শালডাঙ্গা, বঙ্গভিটা, লোহাড়া, বামুনিয়াসহ ১২টি গ্রাম; বড়বাড়ি ইউনিয়নের বেলহাড়া, বেলবাড়ী, বটের হাট, হরিপুরসহ আটটি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেশির ভাগ কাঁচা বাড়ির টিনের চালা উড়ে গেছে। কয়েক জায়গায় গাছ পড়ে ঘর ভেঙে গেছে। রাস্তার পাশের বড় বড় গাছ ভেঙে চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ঝড়ের পর থেকে কয়েকটি এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
লোহাগাড়া উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফজলুর রহমান বলেন, ঝড়ে তাঁদের বিদ্যালয়ের হলরুমের টিনের ছাউনি উড়ে মাঠে গিয়ে পড়ে। বিদ্যুতের খুঁটির ওপর বিদ্যালয়ের ফটকে গাছ ভেঙে পড়েছে।
শালডাঙ্গা গ্রামের শহিদুল ইসলাম বলেন, ভোরে হঠাৎ ঝড় শুরু হয়। ঝড়ে ঘরবাড়ির টিনের চালা উড়ে যায়। আশপাশের গাছ ভেঙে পড়েছে।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বালিয়াডাঙ্গী আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক কামরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ঝড়ে ৪০টির বেশি বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়েছে। এ ছাড়া অনেক জায়গায় বিদ্যুতের তারের ওপর গাছ ভেঙে পড়েছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করতে তাঁদের লোকজন মাঠপর্যায়ে কাজ করছেন।