মাদারীপুরের কালকিনিতে এসকেন্দার খাঁ (৭০) নামের এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনাকে নির্বাচনী বিরোধ থেকে হত্যাকাণ্ড বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ শনিবার ভোরে উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের ভাটাবালি এলাকায় হামলার এ ঘটনা ঘটে। পরে দুপুর ১২টার দিকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।
মাদারীপুর-৩ (কালকিনি, ডাসার ও সদরের একাংশ) আসনের ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগমের শিবির থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, এসকেন্দার খাঁ তাঁদের কর্মী ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার মিছিলে যাওয়াকে কেন্দ্র করে এই আসনের নৌকার প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য আবদুস সোবহান গোলাপের সমর্থকেরা তাঁকে আজ কুপিয়ে হত্যা করেছেন।
নিহত এসকেন্দার খাঁ লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের ভাটাবালি এলাকার মৃত আমির হোসেন খাঁর ছেলে। তিনি ওই ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কমিটিতে সদস্যপদে ছিলেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আজ ভোরে বাড়ির সামনের রাস্তায় হাঁটতে বের হন এসকেন্দারসহ বেশ কয়েকজন। এ সময় নৌকার প্রার্থী আবদুস সোবহান গোলাপের কর্মী ও লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান ফজলুল হক ব্যাপারীর সমর্থকেরা তাঁর ওপর অতর্কিত হামলা চালান। তাঁরা এসকেন্দারকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আহত করেন। পায়ের রগও কাটা হয়। বাধা দিলে আরেকজনকে কুপিয়ে আহত করা হয়। পরে তাঁদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে পালিয়ে যান হামলাকারীরা। আহত দুজনকে উদ্ধার করে প্রথমে কালকিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাঁদের পাঠানো হয় বরিশালের শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে দুপুর ১২টার দিকে এসকেন্দার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
আমার বাবাকে নৌকার লোকজনে হত্যা করেছে। আমি এ হত্যার বিচার চাই। আমার বাবা তাহমিনা বেগমের ঈগল মার্কার সমর্থক ছিল। আমার বাবার হত্যাকারীদের বিচার চাই।মিলন খা, নিহত এসকেন্দার খার ছেলে
এ খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে ঈগল ও নৌকার সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগমের মুখপাত্র মসিউর রহমান ওরফে সবুজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এসকেন্দার আমাদের সমর্থক। সাবেক চেয়ারম্যান গেন্দু কাজীর (কাজী তোফাজ্জেল হোসেন) সঙ্গে থাকেন। গত বৃহস্পতিবার ঈগলের মিছিলে যাওয়াকে কেন্দ্র করে নৌকার প্রার্থী গোলাপের নির্দেশেই তাঁর এজেন্ট ফজলুর হক ব্যাপারী এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। তিনি এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করতে চান। সাধারণ ভোটারদের মধ্যে ভয় সৃষ্টি করতে চান। যাঁরা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, তাঁদের বিচার চাই আমরা।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ফজলুর হক ব্যাপারী মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এসকেন্দারের সঙ্গে জমি নিয়ে তার চাচাতো ভাইদের দ্বন্দ্ব ছিল। এ কারণে আজ সকালে তাদের মধ্যে হামলার ঘটনা ঘটে। সে মারা গেছে কি না, তা-ও আমি জানি না। তবে আমাকে দায়ী করে যারা কথা বলছে, তারা নির্বাচনে সুযোগ নিচ্ছে। এই হামলার সঙ্গে আমি বা নৌকার প্রার্থী—কেউ জড়িত না।’
কালকিনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি, নির্বাচন নিয়ে কোনো সহিংসতায় তাঁর (এসকেন্দার) ওপর হামলা হয়নি। জমিজমা নিয়ে পূর্ববিরোধ থাকায় তাঁর ওপর হামলা চালানো হয়। এরপরও ঘটনাটি পুলিশ তদন্ত করে দেখছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’
নিহত এসকেন্দার খার ছেলে মিলন খা বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে আছেন। সেখান থেকে বিকেল চারটার দিকে তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার বাবাকে নৌকার লোকজনে হত্যা করেছে। আমি এ হত্যার বিচার চাই। আমার বাবা তাহমিনা বেগমের ঈগল মার্কার সমর্থক ছিল। আমার বাবার হত্যাকারীদের বিচার চাই।’
স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগম কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংরক্ষিত নারী আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য। আবদুস সোবহান গোলাপ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক। তিনি একাদশ সংসদ নির্বাচনে মাদারীপুর-৩ আসনে প্রথমবার সংসদ সদস্য হন।
এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেলে তাহমিনা বেগমের মিছিলে মুহুর্মুহু বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। এতে লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান কাজী তোফাজ্জেল হোসেন ওরফে গেন্দু কাজীসহ অন্তত ১০ জন আহত হন।
তাহমিনা বেগমের সমর্থকেরা তখনো অভিযোগ করেন, নৌকার প্রার্থী আবদুস সোবহান গোলাপের এজেন্ট ফজলুর হক ব্যাপারীর লোকজন তাঁদের মিছিল লক্ষ্য করে এই বোমা মেরেছেন।
মাদারীপুর-৩ আসনে আটজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আবদুস সোবহান গোলাপ ও তাহমিনা বেগম ছাড়াও রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তৌফিকুজ্জামান শাহীন, তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী প্রবীণ হালদার, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির প্রার্থী নিতাই চক্রবর্তী, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রার্থী নকুল কুমার বিশ্বাস, জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. আবদুল খালেক এবং জাকের পার্টির প্রার্থী ইকবাল হোসেন।