খানাখন্দে ভরা সড়ক, ঢিলেঢালা নিরাপত্তা 

প্রায় ৩০ একর জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত শিল্পনগরে ১৯৭টি প্লট আছে। এর মধ্যে ৮২টি প্লটে কারখানা গড়ে উঠেছে। চালু রয়েছে ৫৮টি কারখানা।

জামালপুরের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) শিল্পনগরীর অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো খানাখন্দে ভরা। সামান্য বৃষ্টিতে সেখানে পানি জমে থাকে। মাথায় বা ভ্যানে উঠিয়ে নগরের প্রধান সড়কে গিয়ে পণ্য গাড়িতে তুলে দিতে হয়। গত রোববার

খানাখন্দে ভরা সড়ক। সামান্য বৃষ্টিতে সেখানে হাঁটুসমান পানি জমে। নালা-নর্দমাগুলো দিয়ে পানি নিষ্কাশন হয় না। বৈদ্যুতিক খুঁটিতে থাকা বেশির ভাগ বাতি জ্বলে না। ফটক না থাকায় যে কেউ অবাধে আসা-যাওয়া করতে পারে। একপাশে সীমানাপ্রাচীর নেই। ফলে নিরাপত্তার অভাবে শ্রমিকেরা রাতে কাজ করতে চান না।

জামালপুরের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) শিল্পনগরী বর্তমানে নানা সমস্যায় জর্জরিত। এ অবস্থায় সেখানে শিল্পকারখানা চালাতে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন উদ্যোক্তারা। বিসিক শিল্প মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. এনামুল হক খান বলেন, বিসিক নগরের অবস্থা ভালো নেই। রাস্তা, নর্দমা কিছুই ভালো নেই। দুই বছর হলো নালা-নর্দমা কাজ চলছে। সম্প্রতি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ ফেলে চলে গেছে। মালিক ও কর্মচারীদের নিরাপত্তা নেই। সবকিছু মিলে এখানে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা করার মতো কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই। বিষয়গুলো নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বারবার বসেও কোনো কাজ হয়নি।

বিসিক নগরের অবস্থা ভালো নেই। সবকিছু মিলে এখানে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা করার মতো কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই।
এনামুল হক খান, বিসিক শিল্প মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক

গত রোববার সরেজমিন শিল্পনগর ঘুরে দেখা গেছে, বিসিকের অভ্যন্তরের রাস্তাঘাট খানাখন্দে ভরা। পিচঢালাই নেই কিছু সড়কে। কোথাও কোথাও পানি জমে আছে। চারপাশে আবর্জনা ছড়িয়ে আছে। এই শিল্পনগরে ঢোকার দুটি (উত্তর ও দক্ষিণ পাশ) পথ আছে, কিন্তু একটিতেও ফটক নেই। ২৪ ঘণ্টা উন্মুক্ত থাকে। বিনা বাধায় যে কেউ শিল্পনগরে প্রবেশ করতে পারেন। দক্ষিণ পাশে একটি পুকুর থাকায়, সেখানে সীমানাপ্রাচীরও নেই। 

শ্রমিকেরা বলেন, এই শিল্পনগরে সাড়ে তিন কিলোমিটারের রাস্তার মধ্যে দুই কিলোমিটারের অবস্থাই খারাপ। নতুন করে নালা নির্মাণের কাজ চলছে। পুরোনো নালাগুলো দিয়ে পানি নিষ্কাশন হয় না। সামান্য বৃষ্টিতে রাস্তাগুলোতে হাঁটুসমান পানি জমে থাকে। ফলে উৎপাদিত পণ্য পরিবহনে সমস্যা হয়। মাথায় বা ভ্যানে উঠিয়ে নগরের প্রধান সড়কে গিয়ে গাড়িতে তুলে দিতে হয়। রাতের বেলায় এ এলাকা নিরাপদ নয়। যে কেউ যখন-তখন শিল্পনগরীতে ঢুকে পড়তে পারে, প্রহরী নেই। এ ছাড়া রাতে বখাটেদের আড্ডা বসে। 

জামালপুর বিসিক শিল্পনগর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৮০ সালে শিল্পনগরটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। শহরের জামালপুর-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশে প্রায় ৩০ একর জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত শিল্পনগরে ১৯৭ প্লট আছে। এর মধ্যে ৮২টি প্লটে কারখানা গড়ে উঠেছে। চালু রয়েছে ৫৮টি কারখানা। চালু কারখানাগুলোর মধ্যে ৩৬টি খাদ্য ও খাদ্যজাত শিল্প, ১৮টি হালকা প্রকৌশল শিল্প, ৪টি রসায়ন শিল্পকারখানা।

উদ্যোক্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, এই শিল্পনগরে প্রায় ২০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ করা হয়েছে। এসব কারখানায় কর্মসংস্থান হয়েছে তিন হাজার নারী-পুরুষের। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এই শিল্পনগর থেকে প্রায় ২০ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি হয়েছে। আর প্রতি অর্থবছরে উদ্যোক্তারা সরকারকে রাজস্ব দিচ্ছেন ২৫ থেকে ৩০ কোটি টাকা। অথচ দেশের এই লাভজনক শিল্পনগরটির সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর দিকে কারও মনোযোগ নেই। 

প্লাস্টিক পণ্য তৈরি হয় সিফাত প্লাস্টিক অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কারখানায়। ওই কারখানার মালিক মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বছরের পর বছর ধরে বিসিকের সড়কগুলোর করুণ অবস্থা। একটি সড়কেরও খোয়া বা পিচঢালাই নেই। সামান্য বৃষ্টিতে প্রতিটি রাস্তায় হাঁটুসমান পানি থাকে। আর ভারী বৃষ্টি হলে, পানি কারখানায় ঢুকে যায়। সড়ক খারাপ থাকায় যানবাহন বিসিক নগরে ঢুকতে চায় না। বিকল্প ব্যবস্থায় পণ্য প্রধান সড়কে নিয়ে পরিবহন করতে হয়। ফলে বেশি ভাড়া গুনতে হচ্ছে। শিল্পনগরের বেশির ভাগ বাতিগুলো বিকল। রাতে ভুতুড়ে পরিবেশের সৃষ্টি হয়। শিল্পনগরে নেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ফলে রাতে নারী শ্রমিকেরা কাজ করতে চান না। এসব সমস্যা সমাধান ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকলে, আরও উদ্যোক্তা আকৃষ্ট হবে।

জামালপুর বিসিক শিল্পনগরের শিল্পনগর কর্মকর্তা মো. মনজুরুল ইসলাম বলেন, ২০২১ সালের জুলাই মাস থেকে শিল্পনগরের রাস্তা ও নর্দমা সংস্কারে ৭ কোটি টাকার একটি কাজ চলছে। নর্দমার কাজ প্রায় ৯০ শতাংশ শেষ হয়েছে। তবে সড়কের কাজ শুরু হয়নি। নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি ঢিলেতালে করছেন। শিল্পনগরের অভ্যন্তরে থাকা কর্মকর্তাদের কার্যালয় পাহারা দেওয়ার জন্য দুজন নিরাপত্তাপ্রহরী আছেন। আর কোনো প্রহরী নেই।

জামালপুর বিসিকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (ভারপ্রাপ্ত) সম্রাট আকবর বলেন, প্রায় ৩০ বছর বিসিকে কোনো নিয়োগ ছিল না। ফলে গতিশীলতা কম ছিল। ২০১৫ সাল থেকে নিয়োগ শুরু হয়েছে। আগের থেকে এখন কাজের গতি অনেক বেড়েছে। কিছু সমস্যা এই শিল্পনগরে রয়েছে। সেগুলো সমাধানের চেষ্টা চলছে। প্রতিদিনই প্লট বরাদ্দের জন্য উদ্যোক্তারা আসেন। যেসব উদ্যোক্তারা প্লট নিয়ে ফেলে রাখছেন তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।