জব্বারের বলি খেলা উপলক্ষে আজ শুরু হয়েছে বৈশাখী মেলার ১১৫তম আসর। এবার গরমের কারণে ক্রেতার উপস্থিতি কম। আজ বিকেল ৩টায় চট্টগ্রাম নগরের লালদিঘি মাঠ এলাকায়
জব্বারের বলি খেলা উপলক্ষে আজ শুরু হয়েছে বৈশাখী মেলার ১১৫তম আসর। এবার গরমের কারণে ক্রেতার উপস্থিতি কম। আজ বিকেল ৩টায় চট্টগ্রাম নগরের লালদিঘি মাঠ এলাকায়

জব্বারের বলীখেলার মেলায়ও গরমের প্রভাব

প্রচণ্ড দাবদাহের মধ্যেও প্রাণের মেলায় বিক্রেতারা পসরা সাজিয়ে বসেছেন। দুপুরের তপ্ত রোদে ক্রেতাদের আনাগোনা হাতেগোনা। তারপরও উচ্ছ্বাসের কমতি নেই মেলা প্রাঙ্গণে। তবে যথাসময়ে ঠিকই জমে উঠবে প্রাণের আবদুল জব্বারের বলীখেলার মেলা; অর্থাৎ বৈশাখী মেলা, এমন প্রত্যাশা দূরদূরান্ত থেকে আসা ব্যবসায়ীদের।

আবদুল জব্বার স্মৃতি বলীখেলা ও মেলা আজ বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে। লালদীঘির মাঠ ও আশপাশের প্রায় চার বর্গকিলোমিটার এলাকায় প্রতিবছর এই মেলা বসে। লালদীঘির মাঠে আগামীকাল বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হবে মেলার মূল আকর্ষণ বলীখেলা। বলীখেলা ঘিরে তিন দিনের এই বৈশাখী মেলা চট্টগ্রাম, তথা বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী একটা আয়োজন।

মেলায় মাটির জিনিস দেখছেন কয়েকজন ক্রেতা। আজ বিকেল ৩টায় চট্টগ্রাম নগরের লালদিঘী মাঠ এলাকায়

মাটির হাঁড়ি-পাতিল, মৃৎশিল্প, খেলনা, গৃহসজ্জার জিনিসপত্র, খাবার, দা-খুন্তি, শীতলপাটি, ঝাড়ু, হাতপাখা, আসবাব, গাছের চারা—কী নেই এই মেলায়। মূলত তিন দিনের হলেও মেলা শুরু হওয়ার চার দিন আগে থেকেই লালদীঘির মাঠের আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রেতারা আসতে থাকেন। এ যেমন শোভা হ্যান্ডিক্র্যাফটের কথাই ধরা যাক। প্রতিবছরের মতো এবারও ঢাকার দোয়েল চত্বর থেকে এসেছেন প্রতিষ্ঠাটির কর্মীরা। তাঁরা বসেছেন লালদীঘির পেট্রলপাম্প এলাকায়। বিক্রেতা সমশের আলী জানান, তাঁরা শনিবার মেলায় এসেছেন। এক ট্রাক মাটির হাঁড়ি-পাতিল ও গৃহসজ্জার সামগ্রী নিয়ে এসেছেন। প্রতিবছরের মতো এবারও মেলা শেষ হওয়ার পর সব বিক্রি করে ফিরবেন।

গরমের কারণে এবার মেলার প্রথম দিনে ক্রেতাদের উপস্থিতি কিছুটা কম বলে জানালেন রাজশাহী থেকে মৃৎশিল্পের বিভিন্ন সামগ্রী নিয়ে আসা নয়ন ইসলাম। তিনি বলেন, গরমের কারণে ক্রেতা কম। বিকেল ও রাতের দিকে কিছু ক্রেতা আশা করছি।

ইমরান ও নোয়াব আলী বিভিন্ন নকশাকার গৃহসজ্জার সামগ্রী নিয়ে এসেছেন ঢাকা থেকে। তাঁরাও ক্রেতার পথ চেয়ে বসে আছেন। তাঁরা বলেন, সকাল থেকে কিছু কিছু বেচাবিক্রি হচ্ছে। তবে বিকেলের দিকে একটু বাড়তে পারে বলে আশাবাদী।

ক্রেতাদের বেশির ভাগের আগ্রহ মেলায় আসা ফুলের ঝাড়ু ও হাতপাখার দিকে। নগরের অনেক পরিবারই এই মেলা থেকে ফুলঝাড়ু, দা-বঁটি, শিল-পাটা, রুটি বানানোর পিঁড়িসহ সাংসারিক অনেক জিনিসের জন্যই মেলার দিকে তাকিয়ে থাকেন।

মেলায় গৃহাস্থলীর সামগ্রী দেখছেন দুজন ক্রেতা। আজ বিকেল ৩টায় চট্টগ্রাম নগরের লালদিঘী মাঠ এলাকায়

ঝাড়ু নিয়ে বাঁশখালী থেকে এসেছেন মনসুর। তিনি বসেছেন জেল সড়কে। তিনি বলেন, প্রতিবারের মতো এবারও ঝাড়ু নিয়ে এসেছি। এবার দাম একটু বেশি পড়ছে। ভালো ঝাড়ুর দাম জোড়া ৩৫০ টাকা। এ ছাড়া ২০০ টাকা দামের ঝাড়ুও রয়েছে।

গরম থেকে বাঁচতে হাতপাখা নিতে এসেছেন আলী আকবরসহ অনেকে। আকবর বলেন, গরমের দিনে হাতপাখার কদর বেড়েছে। তবে দামও বেশি। কারণ, খরচ বেশি পড়ছে। এক জোড়া ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত দাম হাঁকা হয়। গৃহিণী রোকসানা মেলায় ঘুরে ঘুরে মাটির জিনিসপত্র দেখছিলেন। তিনি বলেন, গরমের কারণে বেশি ঘোরাও যাচ্ছে না। তারপরও কিছু জিনিস কিনতে হবে, তাই আসা।

জব্বারের বলীখেলা ও মেলা এবার ১১৫তম বছরে পা রেখেছে। প্রতিবছর বাংলা ১২ বৈশাখ জব্বারের বলীখেলা অনুষ্ঠিত হয়। বলীখেলা ঘিরে প্রতিবার তিন দিনের মেলা বসে।

উল্লেখ্য, বকশীর হাটের ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে তরুণদের উদ্বুদ্ধ করতে ১৯০৯ সালে লালদীঘির মাঠে শুরু করেছিলেন বলীখেলার। সেই থেকে প্রতিবছর আবদুল জব্বারের নামে এই বলীখেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। করোনার কারণে দুই বছর এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় একবার বলীখেলা অনুষ্ঠিত হয়নি।