নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় একটি ষাঁড়ের লড়াইয়ের প্রস্তুতিকালে সেনাবাহিনী অভিযান চালিয়ে সাতজনকে আটক করেছে। এ সময় একটি ষাঁড়সহ সাতটি মোটরসাইকেলও জব্দ করা হয়। আজ রোববার সকাল ছয়টার দিকে উপজেলার দলপা ইউনিয়নের জল্লী এলাকার একটি মাঠে পরিচালনা করা হয় এ অভিযান।
সেনাবাহিনীর দাবি, আয়োজকেরা সেখানে ষাঁড়ের লড়াইয়ের নামে জুয়া খেলার আয়োজন করেছিল। সেনাবাহিনী হাজির হলে জুয়ারিরা হামলার চেষ্টা করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এক রাউন্ড রাইফেলের গুলি ছোড়া হয়।
এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা, পুলিশ ও নেত্রকোনা অস্থায়ী সেনাক্যাম্প সূত্রে জানা গেছে, রোববার ভোরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে জল্লী এলাকায় ষাঁড়ের লড়াইয়ের নামে জুয়া খেলার আয়োজন করে কিছু ব্যক্তি। গোপন সূত্রে তা জানতে পেরে নেত্রকোনা সেনাক্যাম্পের একটি দল সেখানে অভিযান চালায়। এ সময় আয়োজকেরা সেনাবাহিনীর ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে হামলার চেষ্টা করে। তখন এক রাউন্ড রাইফেলের গুলি ছুড়ে সেনাসদস্যরা পরিস্থিতি অনুকূলে আনেন।
এ ঘটনায় আটক ব্যক্তিরা হচ্ছেন ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার বড়াইল গ্রামের মিজানুল হক, গৌরীপুর উপজেলার কান্দা গ্রামের সবুজ মিয়া, বীর আহামদপুর গ্রামের খায়রুল ইসলাম, কেন্দুয়ার ভগবতীপুর গ্রামের এখলাছ মিয়া, বলাইশিমুল গ্রামের অন্তর মিয়া, সদর উপজেলার ঢুলিগাতি গ্রামের মাসুম ও সুনামগঞ্জের ধর্মপাশার পাইকরাটি গ্রামের পিন্টু মিয়া।
এদিকে রোববার দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় সেনাক্যাম্পের উপ-অধিনায়ক মেজর জিসানুল হায়দার বিষয়টি উত্থাপন করেন। এ সময় অভিযানের বিষয়টি নিয়ে মেজর জিসানুল হায়দার ও জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার (ডিএসবি) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) মো. লুৎফর রহমানের মধ্যে বিতর্ক হয়।
সভায় উপস্থিত থাকা একজন সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, মেজর জিসানুল হায়দার ওই জুয়ার আয়োজন থেকে পুলিশের বিরুদ্ধে উৎকোচ গ্রহণের অভিযোগ তোলেন। একজনের বরাত দিয়ে মেজর বলেন, সেনাবাহিনী অভিযান চালাতে গেলে একজন বলেন, ‘আপনারা কেন আসছেন? পুলিশকে টাকা দেওয়া হয়েছে।’ সঙ্গে সঙ্গে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার লুৎফর রহমান অভিযোগ অস্বীকার করে ঢালাওভাবে কথা না বলে সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণসহ কথা বলার অনুরোধ করেন।
এ ব্যাপারে মেজর জিসানুল হায়দার বলেন, ষাঁড়ের লড়াইয়ের নামে জুয়া খেলার তথ্য পেয়ে অভিযান চালানো হয়েছে। এ সময় সেনাবাহিনীর ওপর হামলার চেষ্টা করা হচ্ছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে একটি গুলি ছোড়া হয়েছিল। অপর প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা সভায় বিষয়টি উত্থাপিত হয়েছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. লুৎফর রহমান বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা সভায় মেজর জিসানুল হায়দার বলেন, আজ সকালে কেন্দুয়া থানা এলাকায় ষাঁড়ের লড়াই থামাতে গিয়ে লাইভ ফায়ারিং করেন এবং ওখানে কেউ একজন বলেন, “পুলিশকে টাকা দিয়েছি, আপনারা কেন এসেছেন।” তিনি আরও বলেন, “ওখানে পুলিশ লেখা একটি মোটরসাইকেলও ছিল।” তাঁর কথার পরিপ্রেক্ষিতে আমি জানাই কোন পুলিশ টাকা নিয়েছেন, সুনির্দিষ্টভাবে বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস বলেন, ‘জুয়া খেলার নামে ষাঁড়ের লড়াইয়ের বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় আলোচনা হয়েছে। ঘটনাটির খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।’