সকালে বাড়িভর্তি মানুষ। সবাই এসেছে সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের তিনজন নিহত হওয়ায় পরিবারের বাকি সদস্যদের সান্ত্বনা দিতে। নিহত জাহাঙ্গীর আলমের মা সুফিয়া বেগমের কান্না থামছেই না। তবে বেশ শক্ত মনে হলো বাবা মোস্তাফিজুর রহমানকে। তিনি উপস্থিত মানুষের সঙ্গে কিছুটা স্বাভাবিকভাবে কথা বলছিলেন। তবে কথা বলার একপর্যায়ে হঠাৎ তিনি হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন।
এই সড়ক আমারে শেষ করে দিছে। আমার দুইটা ছেলেরে নিছে। আমার ছোট ভাইডারে নিছে। ছেলের বউ, নাতনিকে নিছে। আর না জানি কারে কারে নেয়!ত্রিশালে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত জাহাঙ্গীর আলমের বাবা মোস্তাফিজুর রহমান
কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকেন, সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া পাঁচজনের কবর তাঁর বাড়ির সামনে। গতকাল শনিবার সড়ক দুর্ঘটনায় ছেলে জাহাঙ্গীর আলম, পুত্রবধূ রত্না বেগম আর নাতনি সানজিদার মৃত্যু হয়। ২০০৪ সালে বাড়ির সামনে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে দুর্ঘটনায় মারা যান তাঁর ছোট ছেলে শামসুল হক। এর আগে ১৯৯৫ সালে একই মহাসড়কে দুর্ঘটনায় মারা যান ছোট ভাই ফজলুল হক। সবার কবরই বাড়ির সামনে।
মোস্তাফিজুর রহমান কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘এই সড়ক আমারে শেষ করে দিছে। আমার দুইটা ছেলেরে নিছে। আমার ছোট ভাইডারে নিছে। ছেলের বউ, নাতনিকে নিছে। আর না জানি কারে কারে নেয়!’
গতকাল বিকেলে ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের কোর্ট ভবন এলাকায় সড়ক পার হতে গিয়ে মারা যান রায়মনি গ্রামের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম (৪২), তাঁর স্ত্রী রত্না বেগম (৩২) ও ৬ বছরের মেয়ে সানজিদা। দুর্ঘটনার সময় ট্রাকচাপায় অন্তঃসত্ত্বা মা রত্না বেগমের পেট চিরে জন্ম নেয় একটি শিশু।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমি প্রতিবন্ধী মানুষ। ছয় বছর ধরে কাজ করতে পারি না। আগে রাজমিস্ত্রির কাজ করতাম। এখন মাসে ৪৫০ টাকা সরকারি প্রতিবন্ধী ভাতা পাই। এ নিয়ে কীভাবে তিনিটি নাতি-নাতনিকে মানুষ করব, সেটা ভেবে পাচ্ছি না।’
সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত জাহাঙ্গীর আলম ও রত্না বেগম দম্পতির ঘরে একটি ছেলে আর একটি মেয়ে আছে। ছেলে মো. এবাদত (৮) আর মেয়ে জান্নাত (১০)। জান্নাত পঞ্চম শ্রেণিতে পড়লেও এবাদত স্কুলে যায় না।
রত্না বেগম অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। প্রসবের নির্ধারিত সময় অতিক্রম করায় গতকাল সকালে তাঁর আলট্রাসনোগ্রাম করানোর জন্য ত্রিশালের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে যান। সেখান থেকে ফেরার পথে ট্রাকের চাপায় ঘটনাস্থলেই তিনজন নিহত হন। ওই সময় ট্রাকের চাপায় রত্না বেগমের পেট চিরে জন্ম নেয় নবজাতকটি। নবজাতকটি আজ সকালে ময়মনসিংহের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন ছিল। সে শঙ্কামুক্ত বলে জানা গেছে।