গৃহবধূ শিখা আক্তার শিশুসন্তানসহ ঠাঁই নিয়েছেন আশ্রয়কেন্দ্রে। রোববার বিকেলে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার কাপাসিয়া শহীদ স্মৃতি উচ্চবিদ্যালয়ের আশ্রয়কেন্দ্রে
গৃহবধূ শিখা আক্তার শিশুসন্তানসহ ঠাঁই নিয়েছেন আশ্রয়কেন্দ্রে। রোববার বিকেলে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার কাপাসিয়া শহীদ স্মৃতি উচ্চবিদ্যালয়ের আশ্রয়কেন্দ্রে

‘ছোট বাচ্চাডারে লইয়া খুব কষ্টে দিন পার করতাছি’

বন্যায় বাড়িঘর প্লাবিত হওয়ায় গৃহবধূ শিখা আক্তার শিশুসন্তানসহ  ঠাঁই নিয়েছেন আশ্রয়কেন্দ্রে। তাঁর বাড়ি শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার কাপাসিয়া এলাকায়। বাড়ির কাছেই কাপাসিয়া শহীদ স্মৃতি উচ্চবিদ্যালয়ের আশ্রয়কেন্দ্রে কষ্টে দিন পার করছেন তিনি।

গতকাল রোববার বিকেলে আশ্রয়কেন্দ্রে আলাপকালে শিখা আক্তার বলেন, ‘আস্তে আস্তে বাড়িঘরে থাইকা পানি কমতাছে। পাঁচ মাসের সন্তান লইয়া ৯ দিন ধইরা আমরা আশ্রয়কেন্দ্রে আছি। ছোট বাচ্চাডারে লইয়া খুব কষ্টে দিন পার করতাছি। বাড়িঘরে পানি ডুইকা মেলা ক্ষয়ক্ষতি অইচে। অহন ঘরবাড়ি ক্যামনে মেরামত করমু, এই লইয়া আমরা দুশ্চিন্তায় দিন পার করতাছি।’

টানা ছয় দিন রোদ থাকায় নালিতাবাড়ী উপজেলার চারটি ইউনিয়নে বন্যা পরিস্থিতির অনেকটা উন্নতি হয়েছে। কমেছে ভোগাই ও চেল্লাখালী নদীর পানি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ধীরগতিতে পানি কমায় আজ সোমবার সকাল পর্যন্ত উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের ১৭টি গ্রামের ৪ হাজার ৩০০ পরিবার পানিবন্দী আছে। তবে রাজনগর ইউনিয়নের গ্রামগুলো থেকে বন্যার পানি নেমে গেছে। পানি কমতে থাকলেও ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর মেরামত নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন বন্যার্ত লোকজন।

শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্য অনুযায়ী, গতকাল রোববার রাত নয়টার দিকে ভোগাই নদের পানি বিপৎসীমার ২৬৬ সেন্টিমিটার এবং চেল্লাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ১১৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

পাউবো ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ৫ অক্টোবর রাত থেকে ভারতের মেঘালয় রাজ্য থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ও ভারী বর্ষণে নালিতাবাড়ীর কলসপাড়, যোগানিয়া, মরিচপুরান ও রাজনগর ইউনিয়নের ৭১টি গ্রাম প্লাবিত হয়। এতে প্রায় ৩১ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ে। কয়েক দিন ধরে বৃষ্টি না থাকায় ও আকাশে রোদ থাকায় নিম্নাঞ্চলের প্লাবিত গ্রামগুলোর পানি আস্তে আস্তে কমতে শুরু করেছে।
ধীরগতিতে পানি কমার কারণে যোগানিয়ার আটটি গ্রামে ৩০০০, কলসপাড় ইউনিয়নের ছয় গ্রামের ৯০০ এবং মরিচপুরান ইউনিয়নে তিনটি গ্রামের ৪০০ পরিবার পানিবন্দী আছে। তবে গতকাল রাজনগর ইউনিয়নে বন্যার পানি নেমে গেছে। তিনটি ইউনিয়নের ১৭টি গ্রামের এসব এলাকার বাড়িঘরের পানি নেমে গেলেও বাড়ির চারপাশে বন্যার পানি জমে থাকায় মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। তিনটি ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামের রাস্তায় বিভিন্ন অংশে পানিতে ডুবে থাকায় পথচারীদের যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এ ছাড়া বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন স্থানীয় লোকজন।

ঘর থেকে বন্যার পানি নামছে। সেই সঙ্গে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র ভেসে উঠছে। রোববার বিকেলে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার কাপাসিয়া গ্রামে

তালুকপাড়া গ্রামের কৃষক আশরাফ আলী বলেন, ‘এহনো বাড়ি ঘরের চারপাশে পানি। বানের পানি কমছে কিন্ত খুব আস্তে আস্তে। আমগোর গ্রামের বানের পানিতে ঘরবাড়িতে ম্যালা ক্ষয়ক্ষতি অইছে। বাড়ি থাইকা বাইর অইতে নৌকা ও কলার ভেলার ওপর ভরসা করুন লাগে। একেবারে পানি না কমা পর্যন্ত আমগোর কষ্ট কইরাই দিন কাডাইন লাগব।’

যোগানিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ বলেন, খুবই ধীরগতিতে বন্যার পানি কমায় এখনো তাঁর ইউনিয়নে অনেক পরিবার পানিবন্দী আছে। ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে অনেক পরিবারের। গ্রামের চলাচলের কয়েকটি রাস্তার বিভিন্ন অংশে ডুবে আছে। দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন লোকজন।

নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুদ রানা প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি-বেসরকারিভাবে বন্যার্ত মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসন থেকে প্রাপ্ত ৫০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের তালিকা করে ইউপি চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে দ্রুত সেই চাল বিতরণ করা হবে।