তিনবার ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে জামানত হারানো আবদুল আলী বেপারী এবার প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মানিকগঞ্জ-১ (ঘিওর, দৌলতপুর ও শিবালয়) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। আজ রোববার দুপুরে যাচাই–বাছাই শেষে তাঁর মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেন জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক রেহেনা আকতার। এরপর আবদুল আলী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের বারান্দার কান্নায় ভেঙে পড়েন। গড়াগড়ি করে কান্না করেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মানিকগঞ্জ-১ আসনে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে নাতিকে নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন আবদুল আলী বেপারী। তাঁর বাড়ি মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার সিংজুরী ইউনিয়নের বেড়াডাঙ্গা গ্রামে। একসময় তিনি ইট-বালু সরবরাহের ব্যবসা করতেন। এখন তেমন কিছু করেন না। গ্রামের বাড়িতে থাকেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আবদুল আলীর ছেলে ও দুই মেয়ের সবাই শিক্ষিত। তিনি স্বশিক্ষিত। পরিবারের সদস্যরা চান না আবদুল আলী নির্বাচন করুন। কিন্তু নির্বাচনে অংশ নেওয়া এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা করাই তাঁর শখ। ২০১১, ২০১৬ এবং ২০২১ সালে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন করেন। প্রতিবারই তিনি জামানত হারিয়েছেন।
আজ বেলা একটার দিকে মনোনয়নপত্র যাচাই–বাছাই শেষে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল আলীরটি বাতিল ঘোষণা করেন। সেখানেই তিনি গড়াগড়ি করে কান্নায় ভেঙে পড়েন। পরে সেখানে উপস্থিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাঁকে সান্ত্বনা দেন এবং প্রার্থিতা ফিরে পেতে আপিলের পরার্মশ দেন।
আবদুল আলী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি এখন আমার ভোটাদের মুখ দেখাব কেমনে? আমি আর বাঁচুম না। আমি ভোট দিতে না পারলে মরুম, আমার জীবন রাখুম না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমার আবেদন, আমার ভোট আমাকে দিয়ে যেন মরতে পারি। আমার বিশ্বাস আছে, মানুষ আমাকে ভোট দেবে। আমি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে সংসদে যাইতে চাইছিলাম। যেকোনো চক্রান্তের মাধ্যমে আমার নমিনেশন (মনোনয়ন) বাদ দেওয়া হইচে। আমি এই চক্রান্ত বিশ্বাস করি না। আমাকে আমার ভোট দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হোক।’
আবদুল আলী বেপারীর মনোনয়নপত্র বাতিলের প্রসঙ্গে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা রেহেনা আকতার বলেন, মনোনয়নপত্রের সঙ্গে আয়কর রিটার্ন ও টিন সার্টিফিকেট এবং স্বতন্ত্র-সমর্থক ভোটারের স্বাক্ষরের গরমিল থাকায় ওই প্রার্থী (আবদুল আলী বেপারী) মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। তবে আগামী ৫ থেকে ৯ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনে তিনি আপিল করার সুযোগ পাবেন।
গত বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর আবদুল আলী সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘আমার স্ত্রী নির্বাচন করতে নিষেধ করলেও আমার মন চায়। নির্বাচন আইলে আমি ঠিক থাকতে পারি না। আমাদের ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দাঁড়াইছি, তখন মনোনয়নপত্র এক প্রতিবেশীর বাড়িতে রেখে আসি। আমার স্ত্রী জানার পর গলায় দা ধরে। এরপরও আমি নির্বাচন করেছি। এখন পরিবারের লোকজন খুব একটা নির্বাচনে দাঁড়াতে বাধা দেয় না। যত দিন বাঁচি নির্বাচন করেই যাব।’