মনু নদে পানি বেড়ে মৌলভীবাজার-শেরপুর-সিলেট আঞ্চলিক সড়কের দুটি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সড়কের বালিয়াকান্দি ও শাহবন্দর—এই দুটি স্থানের বাঁধ যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে। ভাঙনের এই ঝুঁকি এড়াতে সড়ক দিয়ে যান চলাচল সাময়িক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী এক জরুরি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ কথা জানিয়েছেন।
জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মিরপুর-শ্রীমঙ্গল-মৌলভীবাজার-শেরপুর (মৌলভীবাজার-শেরপুর-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক) সড়কের মৌলভীবাজার সদর উপজেলার ৪৯ কিলোমিটারে বালিয়াকান্দি এবং ৫০ কিলোমিটারে শাহবন্দর বন্যার পানিতে আংশিক প্লাবিত অবস্থায় আছে। বন্যার পানি ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সড়ক-সংলগ্ন মনু নদের শহর রক্ষা বাঁধটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। এমতাবস্থায় বন্যার পানি নেমে যাওয়া পর্যন্ত সড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ থাকবে। সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রয়োজনে বিকল্প সড়ক ব্যবহার করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার শাহবন্দর এলাকার সাংস্কৃতিক সংগঠক ফয়সল ফরিদ বিকেলে বলেন, বাঁধ চুইয়ে পানি বের হচ্ছে। গতকাল বুধবার রাত থেকে স্থানীয় লোকজন বাঁধের কাছে আছেন। আজকে বিকেল থেকে এদিকে (শাহবন্দর) আর গাড়ি চলছে না।
স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, মৌলভীবাজার থেকে সিলেটের সঙ্গে সড়কপথে যোগাযোগের মাধ্যম হচ্ছে মৌলভীবাজার-শেরপুর-সিলেট আঞ্চলিক সড়ক এবং মৌলভীবাজার-রাজনগর-ফেঞ্চুগঞ্জ-সিলেট আঞ্চলিক সড়ক। দুটি সড়কেই বন্যাজনিত কারণে এখন যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় মৌলভীবাজার-শেরপুর-সিলেট আঞ্চলিক সড়ক ও জনপথ বিভাগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বন্ধ করেছে। অপর দিকে রাজনগরের দুটি স্থানে মনু নদের বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় মৌলভীবাজার-কুলাউড়া সড়কের কদমহাটা এবং রাজনগর কলেজ এলাকায় সড়ক বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে। এতে মৌলভীবাজার-রাজনগর-ফেঞ্চুগঞ্জ-সিলেট আঞ্চলিক সড়ক দিয়েও সিলেটে যাতায়াত বন্ধ হয়ে গেছে।
সওজ মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কায়সার হামিদ সড়ক বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘বাঁধের ছিদ্র দিয়ে পানি বের হচ্ছে। এই দুটি জায়গা (বালিয়াকান্দি ও শাহবন্দর) বেশি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। ইউএনও (মৌলভীবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা) ঝুঁকির কথাটি বলেছেন। বুধবার রাত থেকেই ঝুঁকি বেড়েছে। যেকোনো কারণে বাঁধ ভেঙে যেতে পারে। তাই পানি না কমা পর্যন্ত এই স্থান দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করা হয়েছে।’
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) মৌলভীবাজার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় মনু নদের পানি রেলওয়ে ব্রিজে বিপৎসীমার ৭০ সেন্টিমিটার ও চাঁদনীঘাটে ১১৯ সেন্টিমিটার; ধলাই নদে রেলওয়ে ব্রিজের কাছে ২২ সেন্টিমিটার; কুশিয়ার নদী শেরপুরে ১১ সেন্টিমিটার এবং জুড়ী নদী ভবানীপুরে ১৯৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, মৌলভীবাজার জেলার ৭টি উপজেলায় আনুমানিক ১ লাখ ৯৫ হাজার মানুষ বন্যাকবলিত হয়েছেন। আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন ৬ হাজার ৬৫ জন। বন্যাকবলিতদের জন্য ৪৭টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। বন্যার্তদের জন্য ২৮৫ মেট্রিক টন চাল এবং নগদ ২০ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া করা হয়েছে।