খাগড়াছড়ির পথে পথে মৌসুমি ফলের বিকিকিনি

সড়কের ধারে বসে ফল বিক্রি করেন সুজিতা ত্রিপুরা। ছবিটি খাগড়াছড়ির আলুটিলা পুর্নবাসন এলাকা থেকে তোলা
ছবি: প্রথম আলো

খাগড়াছড়ি শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে আলুটিলা পুনর্বাসন এলাকায় সুজিতা ত্রিপুরার (৩৮) বাড়ি। বাড়ির চারপাশে ৩টি আম, ২টি কাঁঠাল, ১টি বেল ও কয়েকটি কলাগাছ লাগিয়েছেন তিনি। চার বছর আগে সাপ্তাহিক হাটবাজারের দিন হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। সেদিন বাজারে যেতে না পারায় ফলফলাদি ঘরেই থেকে যায়।

পরদিন অনেকটা নিরুপায় হয়ে বিক্রির উদ্দেশ্যে আম আর কলা নিয়ে বাড়ির কাছে সড়কের এক পাশে বসেন সুজিতা। দুই ঘণ্টার মধ্যে বিক্রি হয়ে যায় তাঁর সব ফল। এর পর থেকে সড়কের ধারই হয়ে উঠে তাঁর মৌসুমি ফল বিক্রির স্থান।

শুধু সুজিতা ত্রিপুরা নন, এই মৌসুমে খাগড়াছড়ির বিভিন্ন সড়কের ধারে ফল বিক্রি করছেন আরও অনেকে। তেমনি একজন খাগড়াছড়ি পানছড়ি সড়কের শিবমন্দির এলাকার রঞ্জনা চাকমা। তিনি বলেন, প্রতিবছর আম, কাঁঠাল ও লিচুর মৌসুম এলে বিক্রির জন্য নিয়ে যেতে হয় খাগড়াছড়ি বাজারে। কষ্ট করে গাড়ি ভাড়া দিয়ে বাজারে নেওয়ার পর অনেক সময় সব ফল বিক্রি হয় না। তখন নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করতে হয়। পরিমাণে কম হওয়ায় পাইকারি ব্যবসায়ীরাও কিনতে চান না। তাই এ বছর বাড়ির কাছে সড়কের ধারে বসে বিক্রি করেন তিনি। এতে সময় যেমন কম লাগছে, তেমনি ন্যায্যদামও পাচ্ছেন।

সম্প্রতি খাগড়াছড়ি-মাটিরাঙ্গা সড়ক ঘুরে আলুটিলা, রিচাং ঝরনা, ব্যাঙ মারা, সাপমারাসহ একাধিক জায়গায় ছোট ছোট টুকরির ওপর রেখে আম, জাম, কলা, আনারস, লিচু বিক্রি করতে দেখা যায়। এ ছাড়া খাগড়াছড়ি-পানছড়ি, খাগড়াছড়ি-মাটিরাঙ্গা, খাগড়াছড়ি-মহালছড়ি, খাগড়াছড়ি-দীঘিনালা—এই চার সড়কের ধারে ফল নিয়ে বসেন বেশির ভাগ বিক্রেতা। এসব বিক্রেতার অধিকাংশই নারী।

খাগড়াছড়ি আলুটিলা সড়কের পাশ থেকে ফল কিনছিলেন কয়েকজন ক্রেতা। তাঁদের মধ্যে একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাসুদ। তিনি বলেন, ‘সড়কের ধারে বিক্রি করা ফলগুলো টাটকা এবং বিষমুক্ত। বাজারের তুলনায় দামও অনেক কম। স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে দুই বছর ধরে আম, কলা, লিচুসহ সব ধরনের ফল সড়কের ধার থেকেই কিনি আমি।’

সড়কের ধারে ফলের মূল ক্রেতা হলেন পর্যটক ও সড়কে নিয়মিত চলাচল করা যাত্রীরা। নারী বিক্রেতারা বলেন, সড়কের ধারে বিক্রি করার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো বাড়ির কাজ শেষ করে যেকোনো সময় বিক্রির জন্য বসা যায়। বাড়ির কাছে হওয়ায় সন্ধ্যার আগপর্যন্ত বিক্রি করলেও কোনো সমস্যা হয় না। সাধারণত একটি পেঁপে কিংবা পাঁচ কেজি আম নিয়ে বাজারে যাওয়া পোষায় না। জিনিসের দামের চেয়ে গাড়িভাড়া বেশি হয়ে যায়। এখানে যে দামেই বিক্রি হয়, তাতেই লাভ। একটা গাছের ফল খাওয়ার পরে বাদ বাকি যা থাকে, সেগুলো বিক্রি করেও ভালো টাকা পাওয়া যায়।

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী বলেন, ‘খাগড়াছড়ির বিভিন্ন সড়কে যাওয়ার সময় দেখি বিভিন্ন এলাকায় সড়কের গাছের নিচে বসে দু-একজন মিলে ছোট ছোট টুকরিতে রেখে ফলমূল বিক্রি করছেন। এটি একটি ভালো উদ্যোগ। যাঁদের মৌসুমি ফলের দু–একটা গাছ আছে, তাঁরা ঘরের কাছে বসে ফল বিক্রি করতে পারছেন। এতে তাঁদের হাতে অর্থ আসছে।’