চলতি মৌসুমে জেলায় ৮ হাজার ২৫ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ হয়েছে; যা থেকে ২২ হাজার ৭১০ মেট্রিক টন শুকনা মরিচ উৎপাদিত হবে।
মাথায় ছাতা নিয়ে সহেনা রানী ও যাদব চন্দ্র বর্মণ দম্পতি খেত থেকে পাকা মরিচ তুলছিলেন। তীব্র গরমে মরিচ পাকছে বেশি। প্রতিদিনই মরিচ তোলা ও শুকাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তাঁরা।
ওই দম্পতির বাড়ি পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার ধামোর ইউনিয়নের জুগিকাটা এলাকায়। গত মঙ্গলবার দুপুরে বাড়ির অদূরে মরিচখেতে কথা হয় যাদব চন্দ্র বর্মণের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘চুক্তি (লিজ) নেওয়া এক বিঘা জমিতে এবার জিরা জাতের মরিচ চাষ করেছি। ফলনও হয়েছে ভালো, বিঘায় ১২-১৩ মণ মরিচ হতে পারে। জিরা মরিচ বর্তমানে বাজারে ১৬ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। সেই হিসাবে এবার ভালোই লাভ হবে।’
পঞ্চগড়ে মরিচ পাকতে শুরু করেছে। চাষিরা ব্যস্ত সময় পার করছেন মরিচ তোলা আর শুকানোর কাজে। ফলন আর দাম ভালো হওয়ায় মরিচচাষিদের মুখে হাসির ঝিলিক। স্থানীয় শ্রমিকদের পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী ঠাকুরগাঁও জেলা থেকে শ্রমিকেরাও মরিচখেতে কাজ করছেন।
জুগিকাটা এলাকা থেকে কিছুটা দক্ষিণে মির্জাপুর ইউনিয়নের মির্জাপুর খেলার মাঠে গিয়ে দেখা যায়, কৃষকেরা শুকাতে দিয়েছেন খেতের মরিচ। মির্জাপুর মাঠে মরিচ শুকাতে দিচ্ছিলেন স্থানীয় মরিচচাষি বাবুল হোসেন। তিনি জানালেন, এবার সোয়া বিঘা জমিতে বাঁশগাইয়া জাতের মরিচ চাষ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। সোয়া বিঘা জমিতে প্রায় ১৫-১৬ মণ শুকনো মরিচ হবে। এরই মধ্যে এক মণ শুকনো মরিচ বিক্রি করেছেন তিনি। বর্তমানে প্রতি মণ বাঁশগাইয়া মরিচ ১২ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় চলতি মৌসুমে ৮ হাজার ২৫ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ হয়েছে; যা থেকে ২২ হাজার ৭১০ মেট্রিক টন শুকনা মরিচ উৎপাদিত হবে। পাঁচটি উপজেলার মধ্যে শুধু আটোয়ারীতেই মরিচ চাষ হয়েছে ৩ হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে। এবার স্থানীয় জাতের মরিচ ছাড়াও উচ্চফলনশীল (হাইব্রিড) জাতের বাঁশগাইয়া, পাবনা, জিরা, বিন্দুসহ বিভিন্ন জাতের মরিচের চাষ হয়েছে।
মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যেন্ত সদর উপজেলার গড়িনাবাড়ি, আটোয়ারী উপজেলার ধামোর, মির্জাপুর ও বোদা উপজেলার ঝলইশালশিরি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিস্তীর্ণ এলাকায় চাষ হয়েছে গ্রীষ্মকালীন মরিচ। গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে কাঁচা-পাকা মরিচ। কৃষকেরা মরিচ তোলা ও শুকানোয় ব্যস্ত সময় পার করছেন। খেত থেকে মরিচ তুলে দিচ্ছেন শ্রমিকেরা। প্রতি কেজি মরিচ তুলে তাঁরা পান ৭-৯ টাকা। ফাঁকা মাঠ, রাস্তার ধার, বাড়ির উঠান, ছাদসহ বিভিন্ন জায়গায় মরিচ শুকানো হচ্ছে। লাল মরিচের রঙে রঙিন হয়ে উঠেছে চারদিক।
কৃষকেরা জানান, প্রতি বিঘা (৩৩ শতক) জমিতে মরিচ চাষ করতে ২৫-৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এবার প্রতি বিঘা জমি থেকে ১২-১৩ মণ শুকনা মরিচ পাওয়া যাবে।
ঠাকুরগাঁওয়ের রুহিয়া এলাকা থেকে আটোয়ারীর জুগিকাটায় মরিচ তুলতে এসেছেন ভারতী রানী (৪৫)। তিনি বলেন, তাঁরা প্রতিদিন প্রায় ১০-১৫ জনের একটি দল মরিচ তুলতে ইজিবাইকে করে এখানে আসেন। সারা দিন কাজ করে প্রত্যেকে ৫০০-৬০০ টাকা আয় করেন।
মরিচচাষি বিষ্টুরাম বর্মণ বলেন, বাজারে জিরা মরিচের চাহিদা বেশি। এই জাতের প্রতি মণ শুকনো মরিচের দাম ১৬ হাজার টাকা। আর কাঁচা মরিচ হিসেবে খেত থেকেই চার হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে অতিরিক্ত উপপরিচালক শাহ আলম মিয়া বলেন, এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মরিচের ফলন ভালো হয়েছে। কৃষকেরা বেশ লাভবান হচ্ছেন। পঞ্চগড়ে এবার ৭৫০ কোটি টাকার শুকনা মরিচ উৎপাদিত হবে।