রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি (শারমিন আক্তার) নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগের জবাব দিতে আদালতে হাজির হন। আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে তিনি নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান ও রাজশাহী যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক আবু সাঈদের আদালতে লিখিত জবাব দেন।
এর আগে গত শুক্রবার মাহিয়া মাহিকে ব্যাখ্যা দিতে চিঠি দেয় নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটি। ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, আচরণবিধি লঙ্ঘন করে গত বৃহস্পতিবার গোদাগাড়ীর চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নে মাহিয়া মাহি ভোট চান। এ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রচারিত হয়েছে। আর মাহিয়া মাহি নিজেই ফেসবুকে তা প্রচার করেন। বিষয়টি নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটির নজরে এসেছে। ওই আচরণের মাধ্যমে মাহিয়া মাহি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা ২০০৮-এর বিধি ৬(ঘ) ও ১২ ধারা লঙ্ঘন করেছেন। এ ব্যাপারে কেন তাঁর বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হবে না, তা ১৭ ডিসেম্বর অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে সশরীর হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়।
নির্বাচনী আচরণবিধির ৬(ঘ) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল কিংবা দলের মনোনীত প্রার্থী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী কিংবা তাঁদের পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি জনগণের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে, এমন কোনো সড়কে জনসভা কিংবা পথসভা করতে পারবেন না। আর আচরণবিধির ১২ ধারা অনুযায়ী, ভোট গ্রহণের নির্ধারিত দিনের তিন সপ্তাহ আগে কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল বা প্রার্থী প্রচারণা শুরু করতে পারবেন না।
চিঠির ব্যাখ্যা দিয়ে আদালত প্রাঙ্গণে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন মাহিয়া মাহি। তিনি বলেন, ‘প্রথমবারের মতো নির্বাচন করছি। আচরণবিধি সম্পর্কে জানতাম আমি। তবু কনফিউশন থেকে গিয়েছিল। সেখান থেকে আমি ভুল করেছি। আমি দোয়া চাইতে গিয়েছিলাম, ভোট চাইনি। তারপরও এটা আচরণবিধির মধ্যে পড়ে। এ জন্য আমি বিষয়টি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য অনুরোধ করেছি। আদালত আমাকে কঠোরভাবে সতর্ক করেছেন, যাতে পরবর্তীকালে এ ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে আমি বিরত থাকি। আমি সেই নির্দেশনা যথাযথভাবে মেনে চলার চেষ্টা করব।’
এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে মাহি বলেন, নিয়ম সবার জন্য সমান। বর্তমান সংসদ সদস্যকেও শোকজ করা হয়েছিল। মাঠপর্যায়ে আপাতত ভালো অবস্থা আছে। তিনি এখন পর্যন্ত কোনো হুমকি পাননি। তবে প্রচারণা শুরু হলে তখন বোঝা যাবে। কোনো ধরনের সমস্যা হলে সাংবাদিকদের মাধ্যমে তা দেশবাসীকে জানানো হবে। নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর কোনো ইচ্ছা নেই বলেও জানান তিনি।
পছন্দের কোনো প্রতীক আছে কি না—সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আছে। কিন্তু আজ বলব না। কালই জানতে পারবেন। বড় দুটি উপজেলা। প্রচারণার কৌশল আছে।’
নির্বাচনে অংশ নিতে প্রথমে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছিলেন চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি। কিন্তু সেই আসন থেকে তিনি মনোনয়ন পাননি। দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে তিনি রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। কিন্তু ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষরের গরমিলে তাঁর মনোনয়নপত্র বাতিল করে দেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। পরে নির্বাচন কমিশনে আপিলের পর প্রার্থিতা ফিরে পান তিনি। এই আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। তিনি ও মাহি বাদেও আরও ছয়জন প্রার্থী রয়েছেন এ আসনে।