রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসন স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম রাব্বানীকে (কাঁচি প্রতীক) সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিলেন আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী আখতারুজ্জামান (ঈগল প্রতীক)। আজ শনিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এই ঘোষণা দেন।
এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও নৌকার প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরীকে ‘রাহু’ বলে অভিহিত করে আখতারুজ্জামান বলেন, গোদাগাড়ী-তানোরকে ‘রাহুমুক্ত’ করার জন্য এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
আখতারুজ্জামান ও গোলাম রাব্বানী দুজনই আওয়ামী লীগের নেতা। আখতারুজ্জামান রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক। তিনি গোদাগাড়ীর দেওপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) তিনবার চেয়ারম্যান ছিলেন। গোলাম রাব্বানী তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি। তিনি মুন্ডুমালা পৌরসভার মেয়র ছিলেন। তাঁরা দুজনই আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনের সময়ও তাঁরা নৌকার প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে এককাট্টা হয়ে ‘সেভেন স্টার’ নাম দিয়ে একটি গ্রুপ করেছিলেন।
আজ দুপুরে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সম্মেলনকক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন আখতারুজ্জামান। এ সময় তাঁর সঙ্গে কাঁচি প্রতীকের প্রার্থী গোলাম রাব্বানীও উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া মুন্ডুমালা পৌরসভার মেয়র সাইদুর রহমানসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
আমরা নৌকার বিরুদ্ধে নির্বাচন করছি না। একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে নির্বাচন করছি। গোদাগাড়ী-তানোরকে রাহুমুক্ত করতে আমাদের বিজয়ী হতে হবে। এই নির্বাচনে জয়ী হতেই আমি সরে দাঁড়াচ্ছি। আমার বড় ভাই গোলাম রাব্বানীর কাঁচি প্রতীকে সমর্থন দিচ্ছি।আখতারুজ্জামান, ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী, রাজশাহী–১ আসন
আখতারুজ্জামান বলেন, ‘মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ে আমাদের দুজনেরই প্রার্থিতা বাতিল হয়েছিল। পরে আমরা আপিল করে প্রার্থিতা ফিরে পাই। ভোটের মাঠে নেমে দেখেছি, সাধারণ মানুষ পরিবর্তন চায়। আওয়ামী লীগের পোড় খাওয়া নেতা-কর্মীরাও পরিবর্তন চান। এই পরিবর্তন করতে হলে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন।’ তিনি বলেন, ‘এ আসনের নৌকার প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরী ১৫ বছর ধরে সংসদ সদস্য রয়েছেন। তিনি জনবিচ্ছিন্ন। নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নেই। আমরা নৌকার বিরুদ্ধে নির্বাচন করছি না। একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে নির্বাচন করছি। গোদাগাড়ী-তানোরকে রাহুমুক্ত করতে আমাদের বিজয়ী হতে হবে। এই নির্বাচনে জয়ী হতেই আমি সরে দাঁড়াচ্ছি। আমার বড় ভাই গোলাম রাব্বানীর কাঁচি প্রতীকে সমর্থন দিচ্ছি।’
এ সময় গোলাম রাব্বানী ও আখতারুজ্জামান আক্তার কোলাকুলি করেন। গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘আখতারুজ্জামান নির্বাচন থেকে সরে গিয়ে আমাকে সমর্থন দিয়েছেন। এ জন্য আমি তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ। গোদাগাড়ী-তানোরের মানুষ পরিবর্তনের পক্ষে। তাঁরা আগামী ৭ তারিখে কাঁচি প্রতীকে ভোট দিয়ে এই পরিবর্তন আনবেন।’
এ আসনে ১১ প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আরও দুজন রয়েছেন। তাঁরা হলেন ট্রাক প্রতীকের প্রার্থী চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি (শারমিন আক্তার নিপা) ও বেলুন প্রতীকের প্রার্থী শাহনেওয়াজ আয়েশা আখতার জাহান।
গোলাম রাব্বানী জানান, সমঝোতার বিষয়ে মাহিয়া মাহির সঙ্গে তাঁর কথা বলার কোনো সুযোগ হয়নি। আয়েশা আখতারের সঙ্গে কথা হয়েছে কি না, তা তিনি স্পষ্ট করেননি। তবে নির্বাচনের আগে অনেক কিছুই হতে পারে বলে মন্তব্য করেন গোলাম রাব্বানী।
এ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরী ২০০১ সাল থেকেই নৌকা পেয়ে আসছেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে নির্বাচিত হন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। পরে ২০১৮ সালের নির্বাচনেও তিনি বিজয়ী হন। প্রথমবার সংসদ সদস্য হয়ে ওমর ফারুক চৌধুরী কিছুদিন শিল্প প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
রাজশাহী-১ আসনে অন্যান্য প্রার্থী হলেন ন্যাশনাল পিপলস পার্টির নুরুন্নেসা (আম প্রতীক), জাতীয় পার্টির শামসুদ্দিন (লাঙ্গল প্রতীক), তৃণমূল বিএনপির জামাল খান (সোনালী আঁশ প্রতীক), বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের বশির আহমেদ (ছড়ি প্রতীক), বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) আল সামাদ (টেলিভিশন প্রতীক) এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) সামসুজ্জোহা বাবু (নোঙর প্রতীক)।