অনলাইনে প্রতারণা
অনলাইনে প্রতারণা

প্রতারককে ওটিপি দিয়ে খোয়া যাওয়া ৬ লাখ টাকা ফেরত পেলেন যেভাবে

সিলেটে ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে ব্যাংকটির এক গ্রাহককে ফোন দিয়েছিল প্রতারক চক্র। চক্রটির ফাঁদে পড়ে মুঠোফোনে আসা ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) দিয়ে ৬ লাখ ২৩ হাজার ৩৮৭ টাকা খোয়ান তিনি। পুলিশে অভিযোগ দিয়ে ঘটনার ২২ দিন পর টাকা ফেরত পেয়েছেন তিনি।

প্রতারণার শিকার ওই গ্রাহকের নাম সুলতানা বেগম চৌধুরী। তিনি সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার লালাবাজার এলাকার বাসিন্দা। ইসলামী ব্যাংকে তাঁর হিসাব নম্বর থেকে প্রতারণার মাধ্যমে ওই টাকা হাতিয়ে নিয়েছিল প্রতারক চক্র।

পুলিশ ও ভুক্তভোগী নারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ৯ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সুলতানা বেগমের ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বরে কল করে প্রতারক চক্র। এ সময় সুলতানা বেগমকে ফোনের অপর প্রান্ত থেকে ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তা পরিচয় দেওয়া হয়। তিনি ব্যাংকের হিসাব নম্বরের তথ্য সন্নিবেশ করার কথা বলে মুঠোফোনে যাওয়া ওটিপি নম্বরটি জানাতে বলেন। চক্রটির ফাঁদে পড়ে সুলতানা কয়েক দফায় আসা ওটিপি তাঁদের জানান। এভাবে তাঁর হিসাব থেকে ৬ লাখ ২৩ হাজার ৩৮৭ টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি। পরে প্রতারণার বিষয়টি জানতে পেরে ১১ সেপ্টেম্বর সিলেট কোতোয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন সুলতানা।

জিডিটির তদন্তের দায়িত্ব পান সিলেট কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জামিল আহমদ। তদন্ত করতে গিয়ে তিনি একটি ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের তথ্য পান। জামিল আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, টাকাগুলো একটি ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের হিসাব নম্বরে পাঠানো হয়। পরে তিনি ওই প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেন। প্রতারকেরা ওই প্রতিষ্ঠানে টেলিভিশন, স্মার্টফোনসহ মোট ৬ লাখ ২৩ হাজার ৩৮৭ টাকার পণ্যের অর্ডার দিয়েছিল। পরে প্রতারণার বিষয়টি ওই প্রতিষ্ঠানকে জানিয়ে পণ্যগুলো হস্তান্তর না করার অনুরোধ করেন। পরে বিস্তারিত জানিয়ে টাকাগুলো মূল মালিককে ফেরত দেওয়ার কথা বললে তারা ১ অক্টোবর টাকা ফেরত দেন।

জামিল আহমেদ বলেন, যে নম্বর থেকে সুলতানা বেগমকে ফোন দেওয়া হয়েছিল, নম্বরটি অনলাইন অ্যাপের মাধ্যমে করা হয়েছিল। সে জন্য মূল প্রতারকদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। প্রতারকদের আটক করতে বিস্তারিত তদন্তের প্রয়োজন ছিল। প্রাথমিকভাবে পুলিশ প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া টাকা তাৎক্ষণিক ফেরত আনার উদ্যোগ নেয়।

ভুক্তভোগী সুলতানা বেগম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি তিনি বুঝতে পারেননি। এ জন্য ব্যাংক কর্মকর্তা পরিচয় দেওয়ার পর তাঁর কথামতো তিনি ওটিপি দিয়ে দেন। পুলিশের তৎপরতায় টাকাগুলো ফেরত পাওয়ায় তিনি খুবই খুশি।

সুলতানার মেয়ে হুজায়রা বেগম বলেন, প্রতারকে তাঁর মাকে ফোন করে ব্যাংক কর্মকর্তা পরিচয় দেন। তিনি তাঁকে সত্যিকারের ব্যাংক কর্মকর্তা মনে করেন। কয়েক ধাপে ওটিপি পাঠিয়ে তাড়াহুড়া করেই নম্বরগুলো চাওয়া হচ্ছিল। না দিলে আগামী তিন মাস অ্যাকাউন্ট বন্ধ থাকবে বলে ভয় দেখান। টাকা কেটে নেওয়ার পর প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পারেন। এভাবে কেউ যাতে প্রতারিত না হন, সে জন্য সবাইকে সচেতন থাকার আহ্বান জানান তিনি। পাশাপাশি প্রতারকদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।

সিলেট কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আকবর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, প্রতারকেরা ভুয়া নাম ব্যবহার করে ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে অ্যাকাউন্ট করেছিলেন। এ জন্য তাঁদের শনাক্ত করা যায়নি। পুলিশ তাঁদের আইনের আওতায় আনতে তৎপর রয়েছে। ভুক্তভোগী নারী টাকা ফেরত পাওয়ায় জিডি তুলে নিয়েছেন।