সকাল থেকে কুয়াশায় ঢাকা মাঠ। দুপুরেও কাটেনি সেই কুয়াশা। এরপরও বিকেলের আগেই প্রায় দুই কিলোমিটার পরিত্যক্ত ধানি জমি কানায় কানায় ভরে উঠল বিভিন্ন বয়সী মানুষে। নানা রং ও আকারের প্রায় অর্ধশত ঘোড়ার দৌড় প্রতিযোগিতা দেখতে জমেছিল এ ভিড়।
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার বড় আজলদী খোলা মাঠে গতকাল শুক্রবার বিকেলে এই ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। শীতকালীন গ্রামীণ ঐতিহ্য হিসেবে এ আয়োজন করে চণ্ডীপাশা ইউনিয়ন পরিষদ।
গতকাল বেলা তিনটায় ঘোড়দৌড় শুরু হওয়ার কথা ছিল। তার আগেই মাঠে আসা শুরু করেন হাজারো নারী-পুরুষ। নানা রকমের গরম কাপড় পরে শিশুসহ নানা বয়সী মানুষ এসে ভিড় করেন ঘোড়দৌড় দেখতে। ট্রাকে করে আসতে থাকে ঘোড়াও, সঙ্গে ঘোড়ার মালিক ও ঘোড়সওয়ার। একপর্যায়ে আয়োজকেরা ঘোড়ার মালিকদের নাম নিবন্ধনের জন্য মাইকে ডাকতে থাকেন। তখন জানা যায় প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে আসা ঘোড়াগুলোর বাহারি নাম। ঘোড়দৌড়ে অংশগ্রহণ করতে নরসিংদী থেকে এসেছিল ‘আল্লাহ ভরসা’ ও ‘অচিন পাখি’; কাপাসিয়া থেকে ‘তুফান’, ‘ফেইস বাংলা’, ‘সোনার মেডেল’ ও ‘বাহাদুর’। এ ছাড়া জেলা ও দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এসেছে ‘রাফিন বাংলা’, ‘হৃদয় বাংলা’, ‘সবুজ বাংলা’, ‘পঙ্খীরাজ’, ‘রাজদুলাল’, ‘টিপু সুলতান’সহ অনেক নামের ঘোড়া।
সাত বছর বয়সী ঘোড়সওয়ার আলিফকে নিয়ে নরসিংদী থেকে ঘোড়দৌড়ে অংশগ্রহণ করতে এসেছিলেন শাহাবুদ্দিন। দৌড়ে শাহাবুদ্দিনের ঘোড়া প্রথম স্থান অধিকার করে। এ সময় খুশি হয়ে অনেকেই ঘোড়সওয়ার আলিফকে নানা উপহার দেন। শাহাবুদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, প্রায় ২০ বছর ধরে তিনি দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘোড়দৌড়ে অংশগ্রহণ করছেন। তাঁরা শুধু প্রতিযোগিতার জন্যই ঘোড়া পোষেন। ঘোড়া নিয়ে যেখানেই খেলা হয়, সেখানেই ছুটে যান। অনেকটা শখের বশেই গ্রামবাংলার এ ঐতিহ্যকে লালন করছেন বলে তিনি মন্তব্য করেন।
প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন চণ্ডীপাশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শামছু উদ্দিন। প্রধান অতিথি ছিলেন সুখিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ার হোসেন।
আয়োজকেরা জানান, জেলা ও জেলার বাইরের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রায় ৫০টি ঘোড়া নিয়ে ঘোড়দৌড়ে অংশগ্রহণ করেন শৌখিন ঘোড়াপ্রেমীরা। এর মধ্যে বড় ঘোড়দৌড়ে প্রথম হয় শাহাবুদ্দিনের ‘সবুজ বাংলা’ নামের ঘোড়া। দ্বিতীয় হয় ‘সোনার মেডেল’ নামের ঘোড়া, তৃতীয় হয় আবুল হাশেমের ঘোড়া। মাঝারি ঘোড়দৌড়ে প্রথম হয় রাসেল মিয়ার ঘোড়া, দ্বিতীয় হয় ‘পৃথ্বীরাজ’ নামের ঘোড়া, তৃতীয় হয় আল আমিনের ঘোড়া। আর ছোটদের মধ্যে প্রথম হয় আবদুল বাতেনের ঘোড়া। দ্বিতীয় হয় রতন মিয়ার ঘোড়া এবং তৃতীয় হয় আবদুর রাশিদের ঘোড়া।
আয়োজক কমিটির সদস্য মো. মাইনুল হক জানান, বিজয়ী প্রতিটি ক্যাটাগরির প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান লাভ করা ঘোড়ার মালিকদের ফ্রিজ, এলইডি টিভি, খাসি, মুঠোফোন উপহার হিসেবে দেওয়া হয়।