বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় হামুন ধেয়ে আসছে। ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরকে ৭ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এ অবস্থায় চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকার লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে নিতে মাইকিং করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। পাশাপাশি প্রস্তুত রাখা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র।
গতকাল সোমবার রাতে ও আজ মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গা, কাট্টলী, আকমল আলী সড়ক ও হালিশহরের জেলেপল্লি এবং বাঁশখালী, আনোয়ারা, সীতাকুণ্ড, সন্দ্বীপসহ উপকূলীয় উপজেলাগুলোকে মাইকিং করে লোকজনকে নিরাপদে সরে যেতে নির্দেশনা দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, আজ বেলা ১টা পর্যন্ত চট্টগ্রামের ছয় উপকূলীয় উপজেলায় ৬০৯টি আশ্রয়কেন্দ্রের মধ্যে ৩৫৭টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। এ ছাড়া নগরে ১১৬টির মধ্যে ১৯টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু আছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে শুকনা খাবার ও বিশুদ্ধ পানি বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
পাশাপাশি জরুরি প্রয়োজনে দুর্যোগে যেকোনো সহায়তার জন্য নিয়ন্ত্রণকক্ষ খুলেছে জেলা প্রশাসন। নিয়ন্ত্রণকক্ষের (+৮৮০ ২৩৩৩৩৫৭৫৪৫) নম্বরে ফোন করে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তাসহ জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সহায়তা নিতে পারবেন নাগরিকেরা।
চট্টগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. ছাইফুল্লাহ মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, দুর্যোগ মোকাবিলায় উপকূলবর্তী এলাকায় মানুষকে সচেতন করতে মাইকিং কার্যক্রম চলমান রাখা হয়েছে। ইতিমধ্যে জেলায় ৩৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু আছে। আরও আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসনের নির্দেশনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা উপজেলা পর্যায়ে লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। বিশেষ করে সন্দীপ উপজেলায় ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে ইতিমধ্যে লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের ১১ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উত্তর পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ আরও উত্তর পূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে হয়ে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে।
আজ দুপুর ১২টায় ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৩০ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণ পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ২৯৫ কিলোমিটার পশ্চিম-পশ্চিম, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ২৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ২১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছিল। ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ আগামীকাল বুধবার সকাল থেকে দুপুর নাগাদ মেঘনা মোহনার কাছ দিয়ে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৮ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ১৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। অতি ভারী বর্ষণের প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধসের সম্ভাবনা রয়েছে।