সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ভারত সাহায্য করলে আমরা খুব খুশি হব

গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন
ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রামে জন্মাষ্টমীর অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্য নিয়ে আজ শুক্রবার দুপুরে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। সরকারকে টিকিয়ে রাখতে ভারতকে অনুরোধ করা নিয়ে দেওয়া বক্তব্য পরিষ্কার করতে এক সাংবাদিকের করা প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বলেছি, আমরা চাই শেখ হাসিনার স্থিতিশীলতা থাকুক। এই ব্যাপারে আপনারা (ভারত) সাহায্য করলে আমরা খুব খুশি হব।’

এর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম শহরের জে এম সেন হলে জন্মাষ্টমী উৎসবের অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘আমি ভারতে গিয়ে বলেছি, শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখতে হবে।

এ বক্তব্যের বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘কালকে (বৃহস্পতিবার) আমি যে জিনিসটা বলেছি, শেখ হাসিনা, উনি আছেন বলেই আমাদের দেশের উন্নয়ন হচ্ছে। উনি আছেন বলেই বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আছে। আমি বলেছি, বঙ্গবন্ধু পৃথিবীর মধ্যে একটি দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন, যে অসাম্প্রদায়িক সমাজব্যবস্থা গড়ে তুললে সবার মঙ্গল হয়। আর এ দেশে যত নাগরিক আছে, সে যেকোনো ধর্মের হোক, তার সমান অধিকার। সে বাঙালি, আমাদের বাংলাদেশের নাগরিক। আর আমি বলেছি, শেখ হাসিনা যদি সরকারে থাকেন, তাহলে স্থিতিশীলতা থাকে। আর স্থিতিশীলতা থাকলেই আমাদের উন্নয়নের যে মশাল...’

ভারতের আসামের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপচারিতার প্রসঙ্গ তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন বলেন, ‘ভারতে গিয়ে আমি যেটা বলেছি, আপনাদের আসামের মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, শেখ হাসিনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কেন? উনি বললেন, শেখ হাসিনার সেই জিরো টলারেন্স টু টেররিজম (সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতা) এটা ঘোষণার পরে। আর দ্বিতীয়ত উনি বলেছেন, বাংলাদেশ ক্যান নট বি আ হাব ফর টেররিস্ট (বাংলাদেশ সন্ত্রাসীদের আস্তানা হতে পারে না)। এরপর আসাম, মেঘালয়—সব কটি জেলায় (রাজ্য) আর সন্ত্রাসী তৎপরতা নেই। সন্ত্রাসী তৎপরতা না থাকায় তাদের দেশের উন্নয়ন হচ্ছে। উনি বললেন, আমার এখানে বহু হাসপাতাল, বহু ইনভেস্টমেন্ট (বিনিয়োগ) আসছে। যেহেতু এখন আমাদের এই আসামে কোনো সন্ত্রাসী নেই, এই জন্য শেখ হাসিনা, তাঁর আহ্বানে এটা হয়েছে।’

আব্দুল মোমেন আরও বলেন, ‘আমি ভারত সরকারকে বললাম, আপনার মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, শেখ হাসিনা থাকায় স্থিতিশীলতা এসেছে। স্থিতিশীল হওয়ায় আমাদের দেশেরও মঙ্গল হচ্ছে, আপনার দেশেরও মঙ্গল হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘সুতরাং স্থিতিশীলতা সবচেয়ে ইমপর্ট্যান্ট (গুরুত্বপূর্ণ)। রাজনৈতিক এবং রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতা খুব দরকার। তাতে আপনার দেশেরও মঙ্গল হবে, আমাদের দেশেরও মঙ্গল। আমরা চাই, এই অত্র এলাকায় স্থিতিশীলতা। কোনো ধরনের অশৃঙ্খলতা চাই না এবং সেটা যদি আমরা করতে পারি, এই সোনালি অধ্যায় যথার্থ হবে।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বলেছি, কিছু কিছু লোক সময়-সময় অনেকগুলো উসকানিমূলক কথাবার্তা বলে। আপনার (ভারত) দেশেও কিছু দুষ্টু লোক আছে, আমার দেশেও দুষ্টু লোক আছে। তারা তিলকে তাল করে। আপনার (ভারত) সরকারের একটা দায়িত্ব হবে এবং আমার সরকারেরও দায়িত্ব আছে যে তিলকে তাল করার সুযোগ সৃষ্টি না করে দেওয়া। আমরা যদি এটা করি, তাহলে আমাদের এই সম্প্রীতি থাকবে। আমাদের মধ্যে কোনো ধরনের আনসার্টেনিটি, অস্থিরতা থাকবে না। আমি বলেছি, ...আমরা চাই শেখ হাসিনার স্থিতিশীলতা থাকুক। এই ব্যাপারে আপনারা (ভারত) সাহায্য করলে আমরা খুব খুশি হব।’

গণমাধ্যমের সমালোচনা করে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘শেখ হাসিনার সরকারের লক্ষ্য যে আমরা সস্তায় অ্যাফোর্ডেবল প্রাইসে প্রত্যেককে খাবার দিতে চাই। তাঁদের জীবনমানের উন্নয়ন করতে চাই। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা আমরা দেখতে চাই না, অস্থিরতা দেখতে চাই না। কিন্তু আপনাদের মিডিয়া-টিডিয়া অনেক সময় এই অস্থিরতা বাড়ানোর জন্য অনেক বানোয়াট খবর–টবর দেয়। এটা খুব দুঃখজনক।’ তিনি আরও বলেন, ‘কোনো কোনো লোক বলে, আমরা নাকি মিডিয়াকে কন্ট্রোল করি। দেখেন, কন্ট্রোল করি? আমি যত দিন পাবলিক লাইফে আছি, অবশ্যই মিডিয়া এই নিয়ে গল্প বানাবে। তবে বেশি বেশি ডাহা মিথ্যা বললে খারাপ লাগে।’