প্রায় তিন মাস পর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ নৌবন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত চার লেন মহাসড়ক প্রকল্পের বাকি কাজ শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রকল্পের কাজ ফেলে ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা দেশে ফিরে গিয়েছিলেন। তাঁরা ফেরার পর প্রকল্পের বাকি কাজ শুরু হয়েছে।
সওজ ও প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালে আশুগঞ্জ নৌবন্দর থেকে আখাউড়া সীমান্ত পর্যন্ত ৫০ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার সড়ককে চার লেনে উন্নীত করার প্রকল্প নেওয়া হয়। একবার সংশোধনের পর প্রকল্পের খরচ দাঁড়ায় ৫ হাজার ৭৯১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ভারতীয় ঋণ ২ হাজার ৯৮২ কোটি টাকা। দ্বিতীয় ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি) থেকে এই অর্থ দেওয়া হচ্ছে। বাকি ২ হাজার ৮০৯ কোটি টাকা দেবে সরকার। ২০২৫ সালের জুন মাসে প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। চলতি ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট পর্যন্ত প্রকল্পের ৫৩ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একনেকে পাসের পর ২০১৮ সালে ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডকে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনটি প্যাকেজে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। প্যাকেজের আশুগঞ্জ নদীবন্দর থেকে সরাইল বিশ্বরোড পর্যন্ত ১২ দশমিক ২১ কিলোমিটার, সরাইল বিশ্বরোড মোড় থেকে ধরখার পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার এবং ধরখার থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত ১১ দশমিক ৩১ কিলোমিটার। সব কটি প্যাকেজ বাস্তবায়নের দায়িত্ব ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়। ২০২২ সালে প্রকল্পটির কাজ পুরোদমে শুরু হয়। স্থানীয় প্রকৌশলী ও শ্রমিকদের পাশাপাশি তিন শর মতো ভারতীয় নাগরিক এ প্রকল্পে কাজ করতেন। কিন্তু ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা কাজ ফেলে দেশে ফিরে যান।
সূত্র জানায়, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর থেকে ভারতীয় ঋণে চলমান এ প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এতে সড়কের অবস্থার আরও অবনতি হয়। কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল বিশ্বরোড মোড় থেকে সদর উপজেলার ধরখার পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার সড়কের বিভিন্ন স্থানের সড়কের বিভিন্ন অংশে কোথাও বড় গর্ত, কোথাও পিচ উঠে গেছে, আবার কোথাও দেবে গেছে। পিচের ঢালাই ও ইট না থাকায় মাটি দেবে ভারী যান চলাচলের সময় আটকে যায়, মাঝেমধ্যে উল্টেও যায়। প্রায়ই লেগে থাকে যানজট। শুষ্ক মৌসুমে সড়কে ওড়ে ধুলা। ভোগান্তি ও দুর্ভোগের মধ্যে এ সড়ক দিয়ে চলাচল করতে হয়।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের প্রথম প্যাকেজে আশুগঞ্জ গোলচত্বর ও সরাইল বিশ্বরোড মোড়ের ৪৫০ মিটার ও দ্বিতীয় প্যাকেজের সরাইল বিশ্বরোড মোড় থেকে ধরখার পর্যন্ত পৌনে চার কিলোমিটার মিলিয়ে সড়কের সোয়া চার কিলোমিটার সড়কের অবস্থা বেশি খারাপ। গত ২৭ সেপ্টেম্বর আশুগঞ্জ-আখাউড়া চার লেন মহাসড়ক পরিদর্শন করেন সড়ক বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব ও সওজ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী। দীর্ঘ আলোচনার পর গত অক্টোরের শেষ সপ্তাহ থেকে প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভারত থেকে ফিরতে শুরু করেন। সম্প্রতি বেহাল অংশের সংস্কারকাজ শুরু হয়।
আশুগঞ্জ-আখাউড়া চার লেন মহাসড়ক প্রকল্পের ব্যবস্থাপক মো. শামীম আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৩০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রকল্প এলাকায় ফিরেছেন। তাঁরা দুই থেকে তিন দিন আগে কাজ শুরু করেছেন। প্রাথমিকভাবে রাস্তার সংস্কার ও সদর উপজেলার ঘাটুরা এলাকায় সেতুর রড বাঁধাইয়ের কাজ শুরু করা হয়েছে। পরে ঘাটুরা সেতু এলাকায় ঢালাই দেওয়া হবে।