চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে রেলেগেটে পুলিশ ভ্যানে ট্রেনের ধাক্কায় তিন পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার ঘটনায় গেটম্যান শাহরিয়ার মাহমুদ ওরফে দীপুকে আসামি করে একটি মামলা করেছে পুলিশ। গতকাল রোববার রাতে চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানায় মামলাটি করেন সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) সামিউর রহমান।
মামলায় গেটম্যান শাহরিয়ার মাহমুদের বিরুদ্ধে দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ আনা হয়। এর আগে গতকাল শাহরিয়ার মাহমুদকে বরখাস্ত করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
ঘটনার তদন্তে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে তিন সদস্যবিশিষ্ট আরও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট আরও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এর আগে গতকাল দুর্ঘটনার পর ঘটনাটি তদন্তে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।
সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোফায়েল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার পর প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে দুর্ঘটনার সময় গেটম্যান তাঁর গেটে কর্তব্যরত অবস্থায় ছিলেন না। ফলে কর্তব্য অবহেলায় ফৌজদারহাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সামিউর রহমান চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানায় গেটম্যানকে আসামি করে একটি মামলা করেন। ঘটনাটি তদন্তে তাদের জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) কবির আহমেদকে প্রদান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এরপর তারা তদন্ত শেষে পুলিশ সুপার বরাবর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে। এ ঘটনায় গেটম্যান এখনো পলাতক বলে জানান তিনি।
সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কে এম রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সীতাকুণ্ডে ট্রেন ও পুলিশ ভ্যানের সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। এই তদন্ত কমিটিতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তানভীর আল নাসীফকে প্রধান করা হয়েছে। এ দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এবং ভবিষ্যতে যাতে দুর্ঘটনা রোধ করা যায়, সে বিষয়ে সুপারিশ করার জন্য এ কমিটিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
গতকাল দুপুর সোয়া ১২টার দিকে চট্টগ্রামমুখী সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেনের ধাক্কায় পুলিশ ভ্যানে থাকা পুলিশের ৩ সদস্য নিহত হন। আহত হন আরও দুই পুলিশ সদস্যসহ তিনজন।
দুর্ঘটনায় আহত পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) সুজন শর্মার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছে পুলিশ। তাঁকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউতে) রাখা হয়েছে। তাঁর এখনো জ্ঞান ফেরেনি বলে জানান সীতাকুণ্ড থানার ওসি তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, এসআই সুজন শর্মার মাথার হাড় ভেঙে গেছে। গতকাল দুই ঘণ্টা ধরে তাঁর মাথায় অস্ত্রোপচার করেন চিকিৎসকেরা। এরপর তাঁকে আইসিইউতে নেওয়া হয়েছে। তাঁর উন্নত চিকিৎসার বিষয়ে আজ সোমবার সিদ্ধান্ত হতে পারে। এ ছাড়া তাঁর সঙ্গে থাকা গাড়িচালক পুলিশ কনস্টেবল সমর চন্দ্র সূত্রধর ও ইউপি সদস্য মো. শাহাদাত হোসেনের অবস্থার অনেকটা উন্নতি হয়েছে। তাঁরা মোটামুটি শঙ্কামুক্ত।