১৭ জুন মামলার পর কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। বাদীপক্ষের হতাশা।
জামালপুরের বকশীগঞ্জের সাংবাদিক গোলাম রব্বানি হত্যার ঘটনায় মামলা হওয়ার ১৭ দিন পেরোলেও গুরুত্বপূর্ণ আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। প্রথম দিকে পুলিশ ও প্রশাসনের তৎপরতা দেখা গেলেও সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তা কমে এসেছে বলে অভিযোগ করছে তাঁর পরিবার।
রব্বানি অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জামালপুর জেলা প্রতিনিধি ছিলেন। একই সঙ্গে তিনি একাত্তর টিভির বকশীগঞ্জ উপজেলার সংবাদ সংগ্রাহক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। গত ১৪ জুন রাত ১০টার দিকে পেশাগত দায়িত্ব পালন শেষে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি।
বকশীগঞ্জের পাটহাটি এলাকায় উপজেলার সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাময়িক বরখাস্ত হওয়া চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলমের নেতৃত্বে তাঁর ওপর হামলা চালানো হয়। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আরেক সাংবাদিক জানিয়েছিলেন, হামলার সময় রব্বানির মাথায় আঘাত করেছিলেন মাহমুদুলের ছেলে ফাহিম ফয়সাল। ঘটনার পরদিন দুপুরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়।
হত্যাকাণ্ডের পর ১৭ জুন সাংবাদিক গোলাম রব্বানি হত্যার ঘটনায় তাঁর স্ত্রী মনিরা বেগম বকশীগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেন। এতে প্রধান আসামি করা হয় চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলমকে। তাঁর ছেলে ফাহিম ফয়সাল ওরফে রিফাত এই মামলার ২ নম্বর আসামি। এ ছাড়া আরও ২০ জনের নাম উল্লেখ করা হয় মামলায়। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয় ২০ থেকে ২৫ জনকে।
সাধুরপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম ওরফে বাবুকে গ্রেপ্তার করা হয় ১৭ জুন। এ ছাড়া মামলার আগে পুলিশ ও র্যাব অভিযান চালিয়ে ১২ জনকে আটক করে। তাঁদেরও কারাগারে পাঠানো হয়েছে। চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলমসহ এই ১৩ জনের মধ্যে ৫ জনের নাম উল্লেখ রয়েছে। অর্থাৎ নাম উল্লেখ রয়েছে এমন ১৭ জন আসামি এখনো ধরা পড়েননি।
আসামিদের ধরতে না পারায় হতাশা প্রকাশ করেছেন সাংবাদিক রব্বানির মেয়ে রাব্বিলাতুল জান্নাত। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওনারা (ডিবি পুলিশ) বলছে, চেষ্টা করছি। কিন্তু ধরতে পারছে না। ফলে আমাদের মনে নানা রকম প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। তাঁরা (আসামিরা) কি দেশের বাইরে চলে গেলেন? আর যদি তাঁরা দেশেই থাকেন, তাহলে কেন ধরতে পারছে না?’ তিনি দাবি করেন, ‘দেখুন, মামলার দ্বিতীয় আসামি ফাহিম ফয়সাল আমার বাবার মাথা থেঁতলে দিয়েছেন। তিনিসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন আসামিকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারলে আমার বাবার হত্যার আরও তথ্য পেত পুলিশ। কিন্তু রহস্যজনক কারণে তাঁরাই গ্রেপ্তার হচ্ছেন না।’
রাব্বিলাতুল জান্নাত বলেন, ‘মামলা হয়েছে ১৭ দিন। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মামলা হওয়ার পর একজন আসামিকেও গ্রেপ্তার করতে পারেননি। ফলে আমাদের মনে স্বাভাবিকভাবেই নানা সন্দেহ হচ্ছে।’
সাংবাদিক গোলাম রব্বানি হত্যা মামলাটি প্রথমে বকশীগঞ্জ থানা-পুলিশ তদন্ত করছিল। পরে ১৯ জুন মামলাটি জামালপুর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ মামলা তদন্ত করছেন জামালপুর ডিবি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরমান আলী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আসামি ধরা না পড়ার বিষয়ে সাংবাদিক গোলাম রব্বানির পরিবারের অভিযোগ থাকাটাই স্বাভাবিক। তাঁরা তো স্বাভাবিকভাবেই ওই সব কথা বলবেন। তবে আমরাও চেষ্টা করে যাচ্ছি আসামিদের ধরতে। কিন্তু আসামিরা ছড়িয়ে পড়েছেন। যে কারণে তাঁদের ধরতে বেগ পেতে হচ্ছে।’
এদিকে গ্রেপ্তারের পর এ মামলার প্রধান আসামি মাহমুদুল আলম ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এ ছাড়া গ্রেপ্তার রেজাউল করিম ও মো. মনিরুজ্জামান এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে সাংবাদিক গোলাম রব্বানির স্ত্রী মনিরা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঈদের আগে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়েছিল। তখন তিনি বলেছেন, তাঁরা চেষ্টা করছেন। তাঁরা যে কী ধরনের চেষ্টা করছেন, সেটা জানি না।’