রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

যৌন হয়রানির অভিযোগে সাজাপ্রাপ্ত অধ্যাপককে ক্লাসে ফেরানোর দাবি, নিরাপত্তা চান ভুক্তভোগী

সহকর্মীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে দুই বছরের জন্য অব্যাহতি পাওয়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এনামুল হককে একাডেমিক কার্যক্রমে ফিরিয়ে আনার দাবি তুলেছেন শিক্ষার্থীদের একাংশ। এর সঙ্গে আরও কয়েকটি দাবি যুক্ত করে ৮ সেপ্টেম্বর থেকে বিভাগে আন্দোলন শুরু করেছেন তাঁরা।

এদিকে যৌন হয়রানির অভিযোগ প্রত্যাহার করতে এনামুল হক আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দিয়ে চাপ প্রয়োগ করছেন বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী নারী শিক্ষক। গত রোববার দুপুরে নিজের নিরাপত্তা চেয়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ৮ সেপ্টেম্বর থেকে এনামুল হককে একাডেমিক কার্যক্রমে ফেরানোসহ বিভাগ সংস্কারের জন্য ১২ দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীদের একাংশ। আজ বুধবারও তাঁরা বিভাগের সভাপতি বরাবর দুটি পৃথক আবেদন জমা দেন এবং দুজন শিক্ষককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে বিভাগের সামনে ব্যানার টানিয়ে দেন। তবে আজ তাঁদের দাবি ছিল পাঁচ দফা, যার মধ্যে চতুর্থ দাবি ছিল দুই কার্যদিবসের মধ্যে এনামুল হককে একাডেমিক কার্যক্রমে ফিরিয়ে আনতে হবে। তাঁদের অন্য দাবিগুলো হলো কোনো শিক্ষক কর্তৃক কোনো শিক্ষার্থীকে হুমকি দেওয়া যাবে না এবং ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে ফলাফল টেম্পারিং করা যাবে না। শিক্ষকদের মধ্যে দলাদলি বা রেষারেষি বন্ধ করতে হবে। বিভাগের অধ্যাপক মাহবুবা কানিজ কেয়াসহ দুজন অধ্যাপককে অব্যাহতি দিতে হবে এবং বিভাগের সব শিক্ষা কার্যক্রম রুটিনমাফিক পরিচালনা করবেন মর্মে শিক্ষকদের লিখিত দিতে হবে।

দাবির বিষয়ে বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ইমরান হাসান বলেন, অধ্যাপক মাহবুবা কানিজ বরাবর রাজনৈতিক ও তাঁর সংগঠন মহিলা পরিষদের ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। তাঁর সঙ্গে কারও মতানৈক্য হলে তাঁর নারী সংগঠনকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্নজনের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়কের অভিযোগ দিয়ে দমিয়ে রাখতেন। আরেক অধ্যাপক (যৌন হয়রানির অভিযোগ করা) শিক্ষার্থীদের বখাটে ও বহিরাগত বলে আখ্যায়িত করেছেন। রেজাল্ট টেম্পারিং, ব্যবহারিক পরীক্ষায় স্বেচ্ছাচারিতা দেখানোর হুমকি প্রদান করেছেন। তিনি আন্দোলন শেষ হওয়ার পর দেখে নেওয়ার হুমকিও দিয়েছেন।

তবে ভুক্তভোগী নারী শিক্ষকের অভিযোগ, অধ্যাপক এনামুল তাঁর অনুগত শিক্ষার্থীদের দিয়ে আন্দোলনের মাধ্যমে যৌন হয়রানির অভিযোগপত্র প্রত্যাহারের জন্য চাপ সৃষ্টি করেছেন। অভিযোগপত্র প্রত্যাহারের জন্য জোর করে স্বাক্ষর নেওয়ার চেষ্টাও করা হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ তুলে তাঁকে বিপদে ফেলার চেষ্টা করছেন। তিনি আরও বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ এনেছে, তা সম্পূর্ণ বানোয়াট। অধ্যাপক এনামুল হককে যৌন হয়রানির ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট শাস্তি দিয়েছে। শিক্ষার্থীদের দিয়ে অবরূদ্ধ করে অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য আমাকে চাপ প্রয়োগ করে স্বাক্ষর নিতে চেয়েছিল, কিন্তু আমি স্বাক্ষর করিনি। তিনি অপরাধী, আমি কেন অভিযোগ তুলে নেব?’

দেশের বাইরে অবস্থান করায় বিভাগের সাবেক সভাপতি মাহবুবা কানিজের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

অভিযোগের বিষয়ে অধ্যাপক এনামুল হক বলেন, ‘আমার সঙ্গে বিভাগের কোনো সম্পর্ক নেই। আমি যেহেতু ক্লাস পরীক্ষা নেই না, তাই বিভাগেও খুব কম যাই। ছাত্রদের সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগ নেই। আমার মানহানি করার জন্যই এখানে আমাকে নিয়ে টানাহেঁচড়া করছে। তবে শিক্ষার্থীরা যেহেতু আমার ক্লাস করেছেন, সেই দিক থেকে হয়তো তাঁদের এসব দাবির সঙ্গে আমাকে বিভাগের ফেরানোর দাবিও তাঁরা যুক্ত করেছেন।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সালেহ্ হাসান নকীব প্রথম আলোকে বলেন, ‘মনোবিজ্ঞান বিভাগে একধরনের জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। এভাবে চলতে পারে না। এটি নিয়ে আমরা কাজ করছি। খুব দ্রুতই আমরা সবাইকে নিয়ে বসে একটা সমাধানে আসার চেষ্টা করব।’ এনামুল হককে একাডেমিক কার্যক্রমে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যেহেতু তিনি সিন্ডিকেট থেকে শাস্তিপ্রাপ্ত, তাই এ বিষয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।’

প্রসঙ্গত, গত বছরের ২১ মে অধ্যাপক এনামুল হকের বিরুদ্ধে সহকর্মীর প্রতি অশালীন অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শন ও যৌন হয়রানিমূলক আচরণের অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় উপাচার্য বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী নারী শিক্ষক। পরে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় ৫২৫তম সিন্ডিকেট সভায় এনামুল হককে দুই বছরের জন্য একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।