বাগেরহাটে একটি সরকারি খাল আটকে মাছ চাষ নিয়ে চলা বিরোধের জেরে আওয়ামী লীগের এক নেতাকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আজ শনিবার বেলা একটার দিকে বাগেরহাট সদর উপজেলার বৈটপুর এলাকার চিংড়ি গবেষণা কেন্দ্রের সামনে একদল সন্ত্রাসী তাঁর ওপর হামলা চালায়। বিকেলে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
নিহত ওই আওয়ামী লীগ নেতার নাম মো. আনারুল ইসলাম ওরফে আনা (৫০)। তিনি বাগেরহাট পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ছিলেন। আনারুল বাগেরহাট পৌর শহরের বাসাবাটি এলাকার প্রয়াত আবদুল গনি শেখের ছেলে।
স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, বৈটপুর এলাকার চিংড়ি গবেষণা কেন্দ্রের পেছনের সুরালী খাল দখল করে দীর্ঘদিন ধরে মাছ চাষ করে আসছিল প্রভাবশালী একটি পক্ষ। পরে অন্য একটি পক্ষ সেই খালের দখল নেয়। বছরখানেক আগেই আবারও ওই খালের একটি অংশ দখলে নেয় আগের পক্ষ। এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দুই পক্ষের বিরোধ চলে আসছিল। দুই পক্ষের লোকজন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।
আনারুলের ভাইয়ের ছেলে মুরাদ শেখ বলেন, ‘আমার ছোট চাচা বাচ্চু শেখের (বাচ্চু কবিরাজ) সঙ্গে ঘের নিয়ে কালাম বয়াতী নামের এক ব্যক্তির বিরোধ ছিল। এই বিরোধে শনিবার সকালে কালামের আত্মীয় নাগেরবাজার এলাকার রশীদ হাওলাদারের ছেলে সোহেল হাওলাদার ওরফে কালা সোহেল ও তার ভাই রাখা হাওলাদারের নেতৃত্বে সাত-আটজন আমাদের বাড়িতে এসে ঘেরে না যাওয়ার জন্য হুমকি দিয়ে যায়। দুপুরের কিছু আগে বাচ্চু শেখ বৈটপুর এলাকায় থাকা ঘেরে গিয়ে দেখেন, কালাম ঘের থেকে মাছ ধরছেন। কালামের কাছে মাছ ধরার কারণ জানতে চাইলে কালাম খারাপ ব্যবহার করেন এবং কালা সোহেলকে ফোন দিয়ে আসতে বলেন। অবস্থা খারাপ বুঝে বাচ্চু শেখ ঘের থেকে চলে আসেন এবং তাঁর ভাই আনারুল শেখকে ফোন করে ঘেরে যেতে বলেন।
পরে আনারুল শেখ রিকশা নিয়ে ঘেরে যান। ঘেরে কাউকে না পেয়ে ঘের থেকে ফিরে আসতে থাকেন। পথে কালা সোহেল, জুয়েল হাওলাদার ওরফে রাখা, গণেশসহ সাত-আটজন আমার চাচা আনারুলকে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে ফেলে রেখে যায়। সেখান থেকে এক ভ্যানচালক চাচাকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। পরে বাগেরহাট জেলা হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকেরা তাঁকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিতে বলেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেলে আমার চাচা আনারুল শেখ মারা যান।’
এ বিষয়ে বাগেরহাট পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাসুম শেখ বলেন, ‘একজন নিরীহ মানুষকে এভাবে নির্মমভাবে হত্যা কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না। যারা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, তাদের অনতিবিলম্বে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে।’
বাগেরহাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কে এম আজিজুল ইসলাম বলেন, ময়নাতদন্ত শেষে নিহত ব্যক্তির লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এই ঘটনার তদন্ত চলছে। হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের ধরতে পুলিশ অভিযান শুরু করেছে। এলাকার পরিস্থিতি শান্ত আছে।